এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দায়মুক্তি দিয়ে চার্জশিট

| ১৭ মার্চ ২০১৪, সোমবার,

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে যারাই অগ্নিসংযোগ করুক তাদের রেহাই নেই- অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। তার চোখের জল বৃথা প্রমাণ করে রেহাই পেতে যাচ্ছেন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগকারীরা। ভিডিও ফুটেজে সন্দিগ্ধদের চেনা গেলেও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের বাঁচানোর আয়োজন সম্পন্ন করেছে। গত ৩১শে অক্টোবর অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে  সিআইডি সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (আমলী আদালত ৩)-এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। দেড় বছর তদন্তের পরও অগ্নিসংযোগকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০১২ সালের ১৩ই জুলাই শাহপরান থানায় ছাত্রাবাসের ১ম, ২য় ও ৪র্থ ব্লকের তত্ত্বাবধায়ক বশির আহমদের দায়ের করা মামলার প্রতিবেদনে ১১ জনকে সন্দিগ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করলেও ‘প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী প্রমাণ’ না পাওয়ায় কাউকেই অভিযুক্ত করা হয়নি। পরে সন্দিগ্ধদের বিরুদ্ধে কোন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত  করার আশা পোষণ করে তদন্তের আপাত মৃত্যু ঘোষণা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে সিআইডি যে ১১ জনকে সন্দিগ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এরা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এরা হলেন  দেবাংশু দাস মিঠু, পংকজ পুরকায়স্থ, আবু সরকার, জাহাঙ্গীর আলম, মৃদুলকান্তি সরকার, কামরুল ইসলাম, এডভোকেট আলমগীর, বাবলা, আতিক, রুবেল জ্যোতির্ময় দাস। প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘ভিডিও ফুটেজ হইতে প্রাপ্ত ছবি দেখে যাহাদেরকে আসামি হিসাবে সন্দিগ্ধকরণ হইয়াছে, তাহারা ছাত্রাবাসে আগুন লাগার পর হাতে দা, লাঠিসোটা ও মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল করিয়াছিল। তাছাড়া তাহাদেরকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে ঘুরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে।’ এরপরও সন্তুষ্ট হননি তদন্ত কর্মকর্তা। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী না পাওয়ায় মামলার টুঁটি চেপে ধরেন। অথচ ঘটনার পরদিনই উপাধ্যক্ষ আল হেলাল ভূঁইয়াকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সালের ২৯শে  আগস্ট দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, দমকল বাহিনীর সদস্য ও ২৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রের সাক্ষের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ২০০ পৃষ্ঠার এক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনায় বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দায়ী করে তাদের চিহ্নিতও করা হয়।
২০১২ সালের ৮ই জুলাই ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-ছাত্র শিবিরের সংঘর্ষের জেরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় এমসি কলেজের শতবর্ষী ছাত্রাবাসে। অগ্নিসংযোগের পর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেবাংশু দাস মিঠুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্রাবাসের সামনে মিছিল করে। পরদিন সংঘর্ষ এবং ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনায় শাহপরান থানায় মামলা (নং ০৪) দায়ের করেন ছাত্রলীগ কর্মী শওকত হোসেন মানিক। পরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আলাদা দু’টি মামলা করেন শিবিরকর্মী আতিকুর রহমান ও জহিরুল ইসলাম। ১৫ই জুলাই দায়ের করা মামলায় (নং-৪৭/১২) কলেজের ইংরেজি বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রাবাসের ২য় ব্লকের ২১১নং রুমের বাসিন্দা শিবিরকর্মী আতিকুর রহমান ছাত্রলীগের ৪১ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করেন। ১৮ই জুলাই দায়ের করা মামলায় (নং ৫২/১২) আদালতে ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকের ১০৬ নং রুমের বাসিন্দা এবং গণিত বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র শিবিরকর্মী মো. জহিরুল ইসলাম অভিযুক্ত করেন ছাত্রলীগের ৫১ নেতাকর্মীকে। উভয় মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেবাংশু দাস মিঠু, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাজিম উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা এস.আর রুমেল, মিঠু তালুকদার, গোলাম হাসান চৌধুরী সাজন, রায়হান আহমদ, আবদুল্লাহ আনোয়ার, আলাওল হোসেন সুনান, দেলোয়ার হোসেন, শওকত হোসেন মানিক, সোহেল আহমদ।
চূড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে,  প্রতিবেদন দাখিলকারী কর্মকর্তা তদন্তে কোন  ধরনের অতিরিক্ত পরিশ্রমের চেষ্টা করেননি। প্রতিবেদনে তিনি নিজেই উল্লেখ করেন, তদন্তের দায়িত্বভার পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও আগের তদন্ত কর্মকর্তার করা ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র, সূচিপত্র থাকায় তিনি নতুন করে সেগুলো আর প্রস্তুত করেননি। প্রতিবেদনে স্পষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা একমাত্র ভিডিও ফুটেজের উপর নির্ভর করেই চূড়ান্ত মীমাংসায় পৌঁছেছেন। প্রতিবেদনে তিনি ছাত্রলীগ কর্মী শওকত হোসেন মানিকের দায়ের করা মামলার অভিযুক্ত শিবিরকর্মীদের ‘ক্যাডার’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও শিবিরকর্মীদের দায়ের করা মামলার অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে চুপ থাকেন। এমনকি এ দু’টো মামলার অভিযোগ মিথ্যা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর মো. এনামুল হক মন্তব্য করেন, শওকত হোসেন মানিকের  দায়ের করা মামলার দায় থেকে বাঁচতেই আতিক ও জহির মামলা দু’টো করেছেন।

Published by Amjonotablog

i am simple person

Leave a comment