সাইবার ক্রাইম রোধে আইন আছে

 

দেশ প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অপরাধের মাত্রাও যোগ হচ্ছে। একসময় গ্রামে ছিল ঢাল, সড়কি প্রধান অস্ত্র। এখন সেখানে রাইফেল, বন্দুক, পিস্তলের আবির্ভাব ঘটেছে। এখানেই শেষ নয়, অপরাধও হয়ে উঠেছে প্রযুক্তিময়। বিভিন্ন সময় ইন্টারনেটে নানা ধরনের জঙ্গি সংগঠনের হুমকি আমাদের নজরে আসে। এ ছাড়াও মেইলে হরেক রকম লোভনীয় আহ্বানে পড়ে ও ভুয়া মেইলের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে থাকেন অনেকেই।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এম মাসুম বিল্লাহর একটি মেইল পেয়েছি। বিষয়বস্তু এ রকম_তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় মানবাধিকার বিষয়ে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গেছেন। সেখানে তাঁর মোবাইল, ব্যাগ, টাকা-পয়সা সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব। এখন লাখ টাকা পাঠানো খুব জরুরি। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি। তাঁরা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। অবশেষে মাসুম বিল্লাহ জানালেন তাঁর ওয়েবসাইট হ্যাকিং হয়ে গেছে।
শুধু ই-মেইলে নয়, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অথবা মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধপ্রবণতার হারও বেড়ে গেছে। যা সাইবার ক্রাইম হিসেবে পরিচিত। এনসাইক্লোপিডিয়া অনুযায়ী ঈুনবৎ পৎরসব বলতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে অপরাধ করা হয়, তাকেই বোঝানো হয়েছে।
বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইমের পরিচিতি বা এ সংক্রান্ত অপরাধ দমনের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনটি অনেকেরই জানা নেই। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ আমাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। এই আইনে ইন্টারনেট অর্থ এমন একটি আন্তর্জাতিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে কম্পিউটার, সেলুলার ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহারকারীরা বিশ্বব্যাপী একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্যের আদান-প্রদান এবং ওয়েবসাইটে উপস্থাপিত তথ্য অবলোকন করতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৬ ধারায় বলা হয়েছে, (১) যদি কোনো ব্যক্তি জনসাধারণের বা কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বা ক্ষতি হবে মর্মে জানা সত্ত্বেও এমন কোনো কাজ করেন, যার ফলে কোনো কম্পিউটার রিসোর্সের কোনো তথ্যবিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তিত হয় বা তার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস পায় বা অন্য কোনোভাবে একে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
(২) এমন কোনো কম্পিউটার সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করার মাধ্যমে এর ক্ষতিসাধন করেন যাতে তিনি মালিক বা দখলদার নন, তাহলে তাঁর এই কাজ হবে একটি হ্যাকিং অপরাধ। কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং অপরাধ করলে তিনি অনূর্ধ্ব ১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন বা উভয়দণ্ড দেওয়া যেতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে বা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহলে তার এই কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে। কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ করলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৬৮ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের দ্রুত ও কার্যকর বিচারের উদ্দেশে এক বা একাধিক সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে।
গঠিত সাইবার ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার একজন দায়রা জজ বা একজন অতিরিক্ত দায়রা জজকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেবে। অনুরূপভাবে নিযুক্ত একজন বিচারক নিয়ে এই ট্রাইব্যুনাল ‘সাইবার ট্রাইব্যুনাল’ নামে অভিহিত হবে। এই ধারার অধীন গঠিত সাইবার ট্রাইব্যুনালকে পুরো বাংলাদেশের স্থানীয় অধিক্ষেত্র অথবা এক বা একাধিক দায়রা অধিক্ষেত্র প্রদান করা যেতে পারে। ট্রাইব্যুনাল তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর আইনের অধীন অপরাধের বিচার করবেন।
৭৪ ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, এতদুদ্দেশ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া পর্যন্ত এই আইনের অধীন অপরাধ দায়রা আদালত কর্তৃক বিচার্য হবে।
সরকার সরকারি গেজেট, প্রজ্ঞাপন দ্বারা এক বা একাধিক সাইবার আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। সাইবার আপিল ট্রাইব্যুনাল অধীন সাইবার ট্রাইব্যুনাল বা দায়রা আদালত কর্তৃক ঘোষিত রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনবে ও নিষ্পত্তি করবে।
কেউ সাইবার ক্রাইম করলে কোথায় মামলা করতে হবে বা আদৌ মামলা করা যাবে কি না এ বিষয়ে জনগণ এখনো সচেতন নয়। তা ছাড়া বিদ্যমান আইন শুধু সাইবার ক্রাইম ছাড়া অন্যান্য প্রযুক্তিসংক্রান্তু অপরাধের সংজ্ঞা এবং শাস্তির বিধান করেছে। সুতরাং জনগণের এই আইনের সম্যক ধারণা থাকা একান্ত জরুরি।

Published by Amjonotablog

i am simple person

Leave a comment