লিঙ্গ প্রতিবন্ধী শিশু হস্তান্তরের সাজা হবে ১০ বছর জেল ১০ লাখ টাকা জরিমানার সুপারিশ

1520700_543494415741878_941575980_n

লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে কঠোর আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে আইন কমিশন। কমিশন ইতিমধ্যে আইনের একটি খসড়াও তৈরি করেছে। এতে লিঙ্গ প্রতিবন্ধী শিশুকে প্রতিপালন না করে অন্য কারো নিকট হস্তান্তরকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

এদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এ ধরনের অপরাধ করেন তাহলে প্রথমবারের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং দশ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া ধর্ম পালন করা এবং না করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সুপারিশও করা হয়েছে খসড়া আইনে। এতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তিকে ধর্ম পালনে বাধ্য করা যাবে না এবং ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। এ সংক্রান্ত অপরাধে দুই বছর কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। পুনরায় একই অপরাধের জন্য অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা অন্যূন ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আইনের নাম দেয়া হয়েছে ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’। এই আইনে বিচার হবে একটি বিশেষ আদালতে, নাম হবে ‘বৈষম্য বিলোপ বিশেষ আদালত’। আদালতের বিচারক হবেন জেলা ও দায়রা জজ। বিচার পদ্ধতি হবে সংক্ষিপ্ত, ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সমাপ্ত করার বিধান করা হয়েছে খসড়ায়। ইতিমধ্যে আইন কমিশন আইনের একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আজ শনিবার আইন কমিশনের উদ্যোগে কমিশনে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকও এই সেমিনারে যোগ দেবেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (১৯৯৬-২০০১) আইন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। আইন কমিশনকে দেশের প্রচলিত আইনকে যুগোপযোগী এবং নতুন আইনের খসড়া প্রণয়নের সুপারিশ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। কমিশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বেশকিছু আইনের সংশোধন এবং নতুন আইনের খসড়া প্রণয়ন করে আইন মন্ত্রণালয়ে অনেকগুলো সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক চেয়ারম্যান এবং যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম শাহ আলম কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দেশে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার জন্য পর্যাপ্ত আইন নেই। সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, কেবল ধর্ম গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। সংবিধানের এই নির্দেশনা অনুযায়ী আইন কমিশন ‘বৈষম্য বিলোপ আইনের’ একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে। কমিশন বলছে, সকল প্রান্তিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা নানাবিধ সামাজিক, পেশাগত, প্রথাগত বা অন্য কোন কারণে আইন প্রদত্ত অধিকার ভোগে বাধার সম্মুখীন হন তাদের সেই অধিকার ভোগে বাধা দূরীকরণের জন্য বিশেষ আইন বা আইনি ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য।

খসড়া আইনে যা বলা হয়েছে

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য প্রতি জেলায় ‘বৈষম্য বিলোপ বিশেষ আদালত’ নামে এক বা একাধিক আদালত গঠিত হবে। বৈষম্যের শিকার যেকোন ব্যক্তি প্রতিকার চেয়ে এ আদালতে মামলা করতে পারবেন। সরকার সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজকে বৈষম্য বিলোপ বিশেষ আদালতের বিচারক নিযুক্ত করবে। ওই বিচারক নিজ সাধারণ এখতিয়ারভুক্ত মামলা ছাড়াও এই আদালতের এখতিয়ারভুক্ত মামলাসমূহের বিচার নিষ্পত্তি করবেন অথবা জজশিপের যে কোন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের নিকট নিষ্পত্তির জন্য বদলি করতে পারবেন, সেক্ষেত্রে বদলিকৃত আদালতটি বৈষম্য বিলোপ বিশেষ আদালত হিসাবে গণ্য হবে। এই আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলা সমূহ “বৈষম্য বিলোপ মামলা” এবং “বৈষম্য বিলোপ ক্ষতিপূরণ মামলা” হিসাবে পৃথক রেজিষ্টারভুক্ত হবে। অপরাধের মামলা এবং ক্ষতিপূরণের মামলায় অভিযোগ গঠনের তারিখ হতে ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে আদালত বিচারকার্য সমাপ্ত করবে। এছাড়া আদালতের কোন নির্দেশ কোন ব্যক্তি অমান্য করলে, আদালত তাকে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর আদেশ করতে পারবেন, নির্দেশ অমান্যকারীর ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে আদালত তাকে উক্ত নির্দেশ প্রতিপালনসহ দুই মাসের কারাদণ্ডে এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবে। অমান্যকারী সরকারি কর্মচারী হলে এবং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলা করে নির্দেশ পালন করেননি প্রতীয়মান হলে আদালত তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারবে। এই আদালত প্রদত্ত আদেশ, রায় বা আরোপিত দণ্ড দ্বারা সংক্ষুব্ধ পক্ষ দণ্ডাদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে পারবেন।

যেসব কার্যাবলী বৈষম্যমূলক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করা হয়েছে

(ক) কোন বিশেষ ধর্ম পালন করা বা আদৌ কোন ধর্ম পালন না করার কারণে কোন প্রকার অধিকার ভোগে বাধা প্রদান; (খ) সেবালাভের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি; (গ) যে কোন প্রকারের শিক্ষা ও চিকিত্সা গ্রহণে এবং কর্মপ্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি; (ঘ) লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হওয়ার অজুহাতে কোন শিশুকে পরিবারে প্রতিপালন না করে বিশেষ কোন গোষ্ঠীর নিকট হস্তান্তর; (ঙ) লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হওয়ার এবং পিতৃপরিচয় প্রদানে অসমর্থতার অজুহাতে শিশুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে বহিষ্কার; (চ) লিঙ্গ প্রতিবন্ধীকে পরিবারে বসবাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি; (ছ) লিঙ্গ প্রতিবন্ধীগণকে সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার লাভে বঞ্চিত; (জ) কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ধর্ম-বর্ণ-শিশু-নারী-পুরুষ, শারীরিক-মানসিক ও লিঙ্গ প্রতিবন্ধী, জন্মস্থান, জন্ম ও পেশা, অস্পৃশ্যতার অজুহাতে জনস্থল, সর্বজনীন উত্সব, নিজ ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ ও অংশগ্রহণে বাধা প্রদান করা।

আইন বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, বাস্তবে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, পেশা, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, যৌনকর্মী, হিজড়া বা লিঙ্গ প্রতিবন্ধী, নারী-পুরুষভেদ, এমনকি জন্মস্থানের কারণেও অনেকে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু ভুক্তভোগীদের প্রতিকার চাওয়ার জায়গা নেই। আইনটি প্রণীত হলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে আদালতে দ্বারস্থ হতে পারবেন।

 

Published by Amjonotablog

i am simple person

Leave a comment