শেখনিউজ ডট কম ও প্রবাসীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী গোয়েন্দাদের নগ্ন ষড়যন্ত্র |

শেখনিউজ রিপোর্টঃ250738_4105910774159_1093977105_n বাংলাদেশে ভারতীয় ষড়যন্ত্র, আওয়ামী দাসত্ব এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর অনেক ঊর্ধ্বতন অফিসারের ভারতীয় ‘র’ এর সাথে সম্পর্ক এবং বিভিন্নভাবে নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যার বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রচারের প্রেক্ষিতে শেখনিউজ ডট কমের বিরুদ্ধে আওয়ামী সরকারের সম্মতিতে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের এক যৌথ নগ্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ষড়যন্ত্রকে আরও পোক্ত করার লক্ষ্যে প্রবাসী আরও অনেক রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে মৌলবাদী ও কথিত ইসলামী সন্ত্রাসী বানানোর এক বালকসুলভ প্রচেষ্টা হাতে নেয়া হয়েছে। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে বাংলাদেশে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের কারিগর এই সকল গোয়েন্দারা দীর্ঘকাল ধরেই নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই সন্ত্রাসী সৃষ্টি করে ভারত ও আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করে চলেছে। এরই অংশ হিসেবে মূর্খের মত এই প্রচারনা চালাচ্ছে এই সকল গোয়েন্দারা কিছু অর্বাচীন সাংবাদিক নামধারীদের সহায়তায়।

প্রকাশ থাকে যে, সাবেক ছাত্রলীগ সদস্য র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়ার বরাত দিয়ে ভুল পরিচয় ও তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট প্রকাশ করে চলেছে বাংলাদেশের কতিপয় সংবাদ পত্র। এদের মধ্যে আমাদের সময় এবং কালের কণ্ঠ অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে। সাংবাদিকরা একবারের জন্যও এই সকল ভুয়া তথ্য যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে বলে মনে হয়নি। এমনকি তারা শেখনিউজ ডট কমের কর্তৃপক্ষের সাথে বা অন্যান্যদের সাথে যোগাযোগের কোন চেষ্টাও চালায়নি। এমনকি যে জনৈক রাসেলের র‍্যাবের বা টিএফআই সেলের হেফাজতে দেয়া কথিত জবানবন্দির প্রেক্ষিতে প্রবাসীদের সাথে টেলিফোনে বা ইমেইলে যোগাযোগের প্রমান সংগ্রহ বা দেখার চেষ্টা করেনি কোন সাংবাদিক।

ঐ সকল সংবাদপত্রের রিপোর্টে যে সকল ব্যক্তিদের পরিচয় যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা এতো ভুলে ভারাক্রান্ত যে, সাংবাদিকদের ও গোয়েন্দাদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ জাগছে সকল মহলেই। যে কারনে সকল দেশী বিদেশী মহল সরাসরি এটিকে একটি নগ্ন ও প্রতিশোধ মুলক ষড়যন্ত্র হিসেবেই অভিহিত করছে। এমনকি যে সকল স্বনামধন্য ব্যক্তিকে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদি হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে তাদের অনেকেই জীবনের কোন অংশেই ইসলামী রাজনীতির সাথেই জড়িত ছিলেন না বা এখনো নাই। এদের অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত এবং শেখনিউজ ডট কমের প্রধান সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে পাশ্চাত্যের ‘লিবারেল ডেমোক্রেটিক’ রাজনীতির প্রতিষ্ঠা কল্পে লিবারেল পার্টি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিয়মিত লিবারেল বিশ্বের সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখেন। এমনকি বিশ্বব্যাপী তিনি লিবারেল সংগঠনের বহু সভা সেমিনারে যোগ দিয়েছে। অধুনা তিনি ‘ন্যাচারাল ডেমোক্রেসি’ নামের একটি নতুন রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে নিজস্ব গবেষণা চালাচ্ছেন। সেই ব্যক্তিকে ইসলামী জঙ্গি বানানোর এক হাস্যস্কর প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে গর্দভ গোয়েন্দা ও সাংবাদিকেরা। উল্লেখ্য শেখ মহিউদ্দিন আহমেদের নিরাপত্তা ও গতিবিধি এক যুগ ধরে উন্নত বিশ্বের সকল গোয়েন্দা বিভাগ নজরদারি করছে। আর তিনি ইতিমধ্যেই এমন একটি দেশের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন যে দেশের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক।

রিপোর্টে বিএনপির যে সকল নেতাদের ও সামরিক বাহিনীর অফিসারকে জড়ানোর চেষ্টা হয়েছে এবং যেভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে তাদের পরিচয়সহ তা একেবারেই বালকসুলভ। গোয়েন্দাগিরির কোন ছাপই এতে পরিলক্ষিত হয়নি। মূলত মিথ্যা দিয়ে কোন কিছু সাজানো হলেই কেবল এমন হতে পারে। তবে এরা সবাই অবৈধ সরকার ও তার খুনি অফিসারদের অব্যাহত নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার আন্তর্জাতিক মহলে। ইতিমধ্যেই একাধিকবার আন্তর্জাতিক আদালত সমুহে এ বিষয়ে মামলাও করা হয়েছে এ সকল নাগরিক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে। আগামীতে আরও করা হবে।

এমনকি বাংলাদেশের গোয়েন্দারা কিভাবে জঙ্গি সৃষ্টি করে, কিভাবে কথিত স্বাক্ষ্য বানানো হয় তা স্ববিস্তারে পৃথিবীর সকল উন্নত দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সমুহকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমনকি কোন কোন পুলিশ ও সামরিক অফিসার কতগুলো হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তার বর্ণনাও জানিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে এই সকল খুনিদের চিহ্নিত করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নিরস্ত্র নাগরিক হত্যা করে, নিজেরা জঙ্গি বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাসানোর নোংরা পদ্ধতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হবে পর্যায়ক্রমে। এমনিতেই বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগগুলোতে গোয়েন্দা কার্যক্রমের পরিবর্তে সরকারের প্রতিপক্ষকে নাজেহাল, নির্যাতন, হত্যা ও গুমের কথা পৃথিবীব্যাপী প্রচলিত। এর উপরে বিদেশী নাগরিকদের ও প্রবাসীদের নিয়ে এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় কেন সরকার ও অফিসাররা নেমেছে তা অনুসন্ধানে কাজ শুরু হয়েছে। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রকে বিনা চ্যালেঞ্জে শেখনিউজ ডট কম কোনভাবেই চলতে দেবে না

সাত অ্যামিকাস কিউরির নাম ঘোষণা

20130722033504_index

 

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

সংসদীয় আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণার বিধানের বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সাতজন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন। এ সাত অ্যামিকাস কিউরি হলেন ড. কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম, রফিক-উল হক, মাহমুদুল ইসলাম, মওদুদ আহমদ, রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এ নিয়ে রুল জারি করেন। জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস সালামের করা রিট আবেদনে হাইকোর্ট ওই রুল দেন। রিট আবেদনে বলা হয়- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা অনুসারে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা যায়। এ ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের কোনো বিধান রাখা হয়নি। অথচ সংবিধান স্পষ্ট বলছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদ গঠিত হবে। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়া কাউকে নির্বাচিত ঘোষণা করা সংবিধানের পরিপন্থী। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা সংবিধানের ৭, ১১, ২৭, ৩১, ৬৫ (২), ১২১ ও ১২২ (২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।

 

পিলখানা হত্যাযজ্ঞঃ ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনে ২৬টি প্রস্তাবনা মেজর ফারুক (অবঃ)

২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী রাজধানী ঢাকা শহরের পিলখানা বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হয় জাতির ইতিহাসে এক মর্মান্তিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিরোধী জঘন্ন ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাযজ্ঞ। এ ঘটনায় দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা ৫৮ জন সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং বিডিআর সদর দপ্তরের অস্ত্রাগার লুটসহ গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্রসমূহ ধ্বংস করে শতশত অস্ত্রসহ ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ার সুযোগ লাভ করে।

দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান একজন জেনারেল সহ একাধিক ব্রিগেডিয়ার, কর্ণেল, লেফটেন্যান্ট কর্ণেল, মেজর ও ক্যাপ্টেন পদবীর অফিসারকে হত্যা করা সত্বেও উক্ত হত্যাকারীরা সরকারের তরফ থেকে সাধারন ক্ষমা লাভ করে। সরকারের হাতে সেনাবাহিনীর কয়েক হাজার কমান্ডো, ট্যাংক, এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) ইত্যাদি মজুদ থাকা সত্বেও রহস্যজনক কারনে সেনাবাহিনীর এতগুলো অফিসারকে রক্ষা করার জন্য কোন উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।

ঊক্ত ঘটনার পর একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত পরিচালনা করা হলেও এত বড় ষড়যন্ত্রের পেছনের পরিকল্পনাকারীরা অদ্যাবধি পর্দার আড়ালেই রয়ে গেছে।

বিডিআর-এর ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বাধীন কার্যসম্পাদনকারী দলের সাথে ক্ষমতাসীন দলের যে সব নেতা হত্যাকান্ডের পূর্বে গোপন মিটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন বলে তদন্তে উদ্ঘাটিত হয়েছে- তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়নি।

ব্যারিস্টার তাপস বিডিআর জওয়ানদেরবলেছিলেন, ‘আপনারা লেগে থাকেন, আমি আছি, আপনাদের সব দাবি মানা হবে।’

চাক্ষুস স্বাক্ষী হিসেবে আটক প্রায় অর্ধশত বিডিআর সদস্য আটকাবস্থায় অজ্ঞাত কারনে মৃত্যুবরণ করায় চিরকালের জন্য চাপা পড়ে যায় অনেক মূল্যবান তথ্য।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধকারী ও ঐতিহ্যবাহী বিডিআর বাহিনী বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে; গত ১০ বছরে ১০০০-এর অধিক বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে; এছাড়া নির্যাতন, অপহরন ও ধর্ষনের ঘটনা অসংখ্য।পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদেরকে লেলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনা করা হচ্ছে যেখানে প্রায় ৩৫০০০ মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। রৌমারী বিডিআর পোষ্টে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের দ্বারা বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে, বর্তমানে সিলেটের উত্তর-পূর্বে বরাক নদীতে টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে সিলেটসহ মেঘনা অববাহিকাকে শুকিয়ে মারার প্রস্তুতি চলছে। জাতীয় সম্পদ চট্টগ্রাম ও মংলা সমূদ্রবন্দর সহ দেশের নদী, সড়ক ও রেলপথ ইজারা দিয়ে ভারতকে করিডোর দেয়া হচ্ছে- যা দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্যের বিরোধী।

সাভার থেকে ট্যাংক আসার খবর পেয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।

পিলখানা ঘটনার ফলাফল ও প্রভাবঃ

(১) পিলখানা ষড়যন্ত্রের সংবাদ সংগ্রহে ব্যর্থতায় বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের দূর্বলতা না-কি সঠিক নির্দেশনা প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা- সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

(২) সেনাবাহিনীর কম্ব্যাট ইফিসিয়েন্সি ও তৎকালীন নেতৃত্বের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং দেশ-জাতি রক্ষার্থে তাদের সক্ষমতার উপর জাতির আস্থা পূণঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে ।

(৩) সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পড়েছে; ফলে, বাংলাদেশে আগ্রাসী প্রতিবেশীর সামরিক ও পণ্য আগ্রাসনের সহজ ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে।

(৪) সেনা অফিসাররা তাদের কমান্ড চ্যানেলের ওপর আস্থার সংকটে নিপতিত হয়েছে এবং নিরাপত্তাহীনতা তাদের মনোবলে ছাপ ফেলছে।

(৫) সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অতীত ঐতিহ্য মুছে গেছে। পিলখানা ট্র্যাজেডির পরবিডিআরের নাম, পোশাক ও মনোগ্রাম পরিবর্তনের পদক্ষেপ নেয়া হলে, ২২ মে২০০৯ বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ. ল. ম.ফজলুর রহমান বলেছিলেন, বিডিআরের পোশাক, নাম বদল হলে এরইতিহাস-ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে।

(৬) ভারতীয় প্রশিক্ষন দ্বারা গঠিত বিজিবি (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) মনস্তাত্তিকভাবে ভারতপন্থী হতে বাধ্য- যারা সীমান্ত রক্ষায় মানষিকভাবে প্রস্তুত থাকবেনা।

(৭) সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে মনস্তাত্তিক দ্বন্দ রয়ে যাবে –বহুকাল।

(৮) নবগঠিত বিজিবিতে দলীয় ক্যাডারদের ভর্তি, প্রমোশন ইত্যাদি অগ্রাধিকার পাবে; যার ফলে বিজিবি’র পক্ষে একটি প্রফেশনাল বাহিনী হিসেবে গড়ে ওঠা কঠিন হবে।

(৯) সরকারী আদেশে সীমান্তের সাড়ে ৮ কিঃমিঃ এলাকায় র‍্যাব, পুলিশ বা সেনাবাহিনীর পোস্ট প্রত্যাহার এবং বিজিবি’র অনুমতি ব্যতীত কোন অপারেশন পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারীর ফলে সীমান্তবর্তী বিরাট এলাকার নিরাপত্তা আরো দূর্বল হয়ে পড়তে বাধ্য।

(১০) বিজিবি’র দুর্বলতার কারনে বিএসএফ আরো আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে অনুপ্রাণিত হবে। ফলে, সীমান্তবর্তী জনগণের নিরাপত্তা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

(১১) পিলখানার শহীদ পরিবারদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিকে হেনস্তা করার পথ প্রশস্ত হলো। যেমন- ঘটনা সাথে বিরোধী দলের জড়িত থাকার কথা প্রচার করা এবং শহীদ পরিবারদেরকে পূনর্বাসনের নামে ইতিমধ্যেই বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে তার নিজ বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

প্রস্তাবনাঃ

(১) পিলখানা ঘটনার পূর্বে উক্ত পরিকল্পনার আগাম তথ্য সংগ্রহ এবং ঘটনা চলাকালীন পিলখানার ভেতরে ঘটমান বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে গোয়েন্দা কার্যক্রমের সফলতা/ব্যর্থতা উদ্ঘাটন করা।

(২) টানা দুই-দিন-এক-রাত্র ধরে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চলতে দেয়া এবং এতগুলো সেনা অফিসারের জীবন ও তাদের পরিবারের সম্ভ্রম রক্ষার্থে সরকার কর্তৃক কোন উদ্ধার অভিযান (রেসকিউ অপারেশন) পরিচালনা থেকে বিরত থাকার দায়ভার সনাক্ত করা।

(৩) ঘটনার পূর্বে ডিএডি তৌহিদ গ্রুপ ক্ষমতাসীন দলের যে সব নেতার সাথে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল- তাদের সম্পৃক্ততা ও দায়ভার নির্ধারণ করা।

(৪) সরকারের মন্ত্রী কর্তৃক জঙ্গী-সম্পৃক্ততা প্রচার করে তদন্তকাজ ও মানুষের দৃষ্টি বিভ্রান্ত করার কারন উদ্ঘাটন করা।

(৫) আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা তোরাব আলী এবং তার ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী লেদার লিটনের সাথে ডিএডি তৌহিদ গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা উদ্ঘাটন করা।

(৬) সেনা তদন্ত কমিটি কর্তৃক উদ্ঘাটিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা এবং সরকারী মন্ত্রী কর্তৃক তা প্রত্যাক্ষান করার কারণ উদ্ঘাটন করা।

(৭) আনিসুজ্জামান কর্তৃক উদ্ঘাটিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা এবং তার সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন না করার কারণ উদ্ঘাটন করা।

(৮) সিআইডি অফিসার কাহার আখন্দ কর্তৃক উদ্ঘাটিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা, ষড়যন্ত্রকারীদের পরিচয় উদ্ঘাটন করার উদ্যোগ না নিয়ে যেনতেনভাবে বিচারকার্য শেষ করা থেকে বিরত থাকা এবং চাকুরীরত দক্ষ পুলিশ অফিসারদেরকে বাদ দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সিআইডি অফিসার কাহহারকে এতবড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তদন্দের দায়িত্ব দেয়ার কারন উদ্ঘাটন করা।

(৯) কাহার আখন্দ কর্তৃক তদন্ত চলাকালীন নিরাপত্তা হেফাজতে প্রায় অর্ধশত বিডিআর সদস্য মারা যাবার ফলে ঘটনার চাক্ষুস ও ভাইটাল এভিডেন্স ঢাকা পড়ার প্রেক্ষিতে এসব অপমৃত্যুর কারন ও সংশ্লিষ্টদের দায় নির্ধারন করা।

(১০) ডিএডি তৌহিদ গ্রুপের সাথে মোবাইলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের যেসব কথোপকথন ঘটনার পূর্বে ও ঘটনা চলাকালীন হয়েছে- তার রেকর্ড প্রকাশ করা।

(১১) সকাল ১১টার পূর্বেই অধিকাংশ সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে- মর্মে তৎকালীন সেনাপ্রধানের জবানবন্দীভূক্ত ধারনা সত্বেও পিলখানার অভ্যন্তরে কয়েক ডজন ট্যাংক প্রবেশ করিয়ে হত্যাকারীদেরকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করা এবং পারিবারিক বাসস্থানের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে তড়িৎ রেসকিউ অপারেশন পরিচালনা করা হয়নি কেন- তা উদ্ঘাটন করা।

(১২) ঘটনা শুরুর পর থেকে বিডিআর-এর ডিজি জেনারেল শাকিল কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী ও সেনা প্রধানের মোবাইল কথোপকথন এবং আটকা পড়া অন্যান্য অফিসারগণ কর্তৃক সেনাবাহিনী ও র‍্যাব সদরের সাথে মোবাইলে কথোপকথনের রেকর্ড প্রকাশ করা।

(১৩) পিলখানার ভিতরে বিদ্রোহের ঘটনা শুরু হবার পরক্ষনেই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়া জানার আগেই ভারতীয় টিভি চ্যানেলে ডিজি ও ১৪ জন সেনা অফিসারকে হত্যার খবর কি করে প্রচারিত হয়- তার সূত্রের উৎস উদ্ঘাটন করা।

(১৪) সেনাপ্রধানের দাবীকৃত প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নকে প্রস্তুত থাকার আদেশ দেয়া সত্বেও ভারত কর্তৃক আগরতলায় ঘটনার ২ দিন আগে থেকেই প্যারা ব্রিগেড প্রস্তুতাবস্থায় (স্ট্যান্ডবাই) রাখার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে বিদেশী সেনাবাহিনীর অপারেশন পরিচালনায় সরকারের কোন অনুমোদন আছে কি-না; তা- উদ্ঘাটন করা।

(১৫) পিলখানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের সঠিক হিসাব নির্ণয় এবং সেগুলো উদ্ধারে এযাবৎ কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে- তা উদ্ঘাটন করা।

(১৬) পিলখানা কমপ্লেক্সের চতূর্দিকে সহস্রাধিক সেনা ও র‍্যাব সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় মোতায়েন থাকা সত্বেও কার আদেশে এবং কি করে সহস্রাধিক বিডিআর সদস্যকে অস্ত্রসহ পালিয়ে যেতে সুযোগ দেয়া হয়েছে- তা উদ্ঘাটন করা।

(১৭) পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পেছনে যারা পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশনাকারী- তাদের পরিচয় ও উদ্দেশ্য উদ্ঘাটন করা।

(১৮) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর এত বড় আঘাতকে প্রতিহতকরণে ব্যর্থতার কারনে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও নীতি-নির্ধারক ব্যক্তিদের দায়-দায়িত্ব সনাক্ত করা।

(১৯) ঘটনার নেপথ্য নায়ক, কার্যসম্পাদনকারী ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা প্রদর্শনকারী – সকল ব্যক্তিকে সনাক্ত করে আইনের কাঠগড়ায় হাজির করা।

(২০) সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষায় সক্ষম- এমন শক্তিশালী সীমান্তরক্ষী বাহিনী গঠন করে ঐতিহ্যবাহী বিডিআর-এর নাম পূনঃরুজ্জীবিত করা এবং দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বৈরী প্রতিবেশী কর্তৃক প্রশিক্ষিতকরণ থেকে বিরত থাকা।

(২১) ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারীকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষনা দেয়া।

(২২) ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল এবং সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে পূণঃ তদন্ত পরিচালনা, একই সাথে ইন্টারপোল-এফবিআই এবং এমআই-৬ এর সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতা নির্ধারন এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার্থে উক্ত কমিটির সুপারিশ প্রকাশ ও বাস্তবায়ন করা ।

(২৩) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব হাতে নেয়ার পর তার কমান্ডের আওতাধীন বিডিআর-এর প্রশাসনিক ও অপারেশনাল সমস্যাবলী বিষয়ে জানার কোন কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছেন কি-না এবং নিয়ে থাকলে তার সমাধানের কি ব্যবস্থা গ্রহন করেছিলেন- তা উদ্ঘাটনকরতঃ- সংঘটিত বিদ্রোহ এড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহনে ব্যর্থতার জন্য তার দায়বদ্ধতা নির্ধারন করা।

(২৪) বিডিআর ধ্বংসের প্রেক্ষিতে সীমান্ত প্রতিরক্ষার দূর্বল অবস্থা অতিক্রমনের জন্য গণ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।

(২৫) ক্ষতিগ্রস্থ শহীদ পরিবারদের পূণর্বাসনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থকরণ পরিহার করে শুধুমাত্র মানবিক বিবেচনায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা।

(২৬) সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদেরকে প্রতিনিয়ত হত্যা করার বিষয়টির প্রতিকার ও ক্ষতি পূরণের দাবী জানিয়ে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতে উপস্থাপন করা।

উপসংহারঃ

একথা বুঝতে অসুবিধা হয়না যে, বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দূর্বল করে সীমান্তে আগ্রাসন পরিচালনা করা, বাংলাদেশী নাগরিকদেরকে হত্যা করা, বাংলাদেশের ভূমি দখল করা, ফেন্সিডিল সহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য ও কয়েক বিলিয়ন ডলারের অবৈধ পণ্য পাচার করে বাংলাদেশের ১৬ কোটি ভোক্তার বাজার দখল করা; সর্বোপরি, বাংলাদেশকে আরেকটি সিকিমে পরিণত করার হীন উদ্দেশ্যেই আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তথা বিডিআর–এর উপর এমন আঘাত পরিচালনা করা হয়েছিল।

তাই, সঠিক তদন্তের মাধ্যমেই সম্ভব- এ ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটন করা।

তারিখঃ ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২।

লেখকের ই মেইলঃ farukbd5@yahoo.com

সূত্রঃ

(১) দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ- ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২।

(২) দৈনিক আমার দেশ, তারিখ- ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২।

চার সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল

অঅ-অ+
আদালতের রায় লঙ্ঘন করে কক্সবাজারে বনবিভাগের জমিতে নতুন স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে চার সচিবসহ ১২ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির করা এক আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রুল জারি করে। এই চার সচিব হলেন, পরিবেশসচিব মো. শফিকুর রহমান, ভূমিসচিব মোখলেসুর রহমান, গৃহায়নসচিব মো. গোলাম রব্বানী, বেসামরিক বিমানসচিব খুরশীদ আলম চৌধুরী।
বাকি আট কর্মকর্তা হলেন : বাংলদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মোখসেদুল হাসান খান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল্লাহ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রাইসুল আলম মণ্ডল, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা পুলিশ সুপার আজাদ মিয়া, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরকার আব্দুল আউয়াল, কক্সবাজার সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম) মো. জাফর আলম।
কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গত ২৭ ডিসেম্বর এক দৈনিকে কক্সবাজারে বনবিভাগের জমিতে আবাসন প্রকল্প শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালত অবমাননার আবেদনটি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বন বিভাগের ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও কক্সবাজারের কলাতলী এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে জেলা কালেক্টরেট কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের আবাসন প্রকল্প। এরইমধ্যে শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাটা পড়ছে ৫১ একর বন।
হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই ১২ জনকে আইনি নোটিস দেয়। এর আগেও আরেকবার নোটিস দেয়া হয়। এর জবাব না দেয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন ইকবাল কবির লিটন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজার ওই ৫১ একর জমি ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন’ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। ২০১১ সালের ৮ জুন হাই কোর্ট এক রায়ে ওই জমিতে থাকা সব স্থাপনা এক মাসের মধ্যে অবসারণের রায় দেয়। এই রায় বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদনও দিতে বলা হয়। তারা তা না করে উল্টো সেখানে সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করছে।

আদালত অবমাননার অভিযোগ দুই পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশক ও সাংবাদিক নেতাদের অব্যাহতি

অঅ-অ+
আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ সাত সাংবাদিক নেতা। একই সঙ্গে সমকাল ও নয়া দিগন্তের সম্পাদক ও প্রকাশককেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে আদালত গতকাল বুধবার রায় দেওয়ায় তাঁরা অব্যাহতি পেলেন। এদিকে সাংবাদিক নেতাদের আদালতে হাজির হওয়াকে কেন্দ্র করে গতকাল আইনজীবী ও সাংবাদিকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আদালতের অভ্যন্তরে হৈচৈ, হট্টগোল হয়েছে। এ কারণে বিচারকরা একপর্যায়ে বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে এজলাস থেকে নেমে যান। তবে আদালতকক্ষের সামনে উপস্থিত সাংবাদিক নেতা ও সিনিয়র সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আদালত অঙ্গনে এ ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সবাইকে সচেতন থাকতেও বলা হয়েছে।
বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেন। ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করায় আদালত সাত সাংবাদিক নেতা ও দুটি পত্রিকার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ নিষ্পত্তি করে রায় দেন। আদালত রায়ে বলেন, ‘প্রসিডিংস ইজ ড্রপড’।
এদিকে একই আদালতে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে রায় দেওয়া হবে আজ বৃহস্পতিবার।
প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলের শুনানিতে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও ঢাকাস্থ বরিশাল বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকরা বিবৃতি দেন। তাঁরা ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। এই বিবৃতি সমকাল ও নয়াদিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় গত ৯ মার্চ আদালত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এম এম জসিম ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকাস্থ বরিশাল বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান (ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক) এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কাজী মোবারক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এম সুজাউল ইসলামকে তলব করেন। এই চার সংগঠনের সাত নেতা এবং সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ও প্রকাশক এ কে আজাদ, নয়া দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক সম্পাদক আলমগীর মহীউদ্দিন ও প্রকাশক শামসুল হুদার বিরুদ্ধে রুল জারি করেন আদালত।
আদালতের এ আদেশে গতকাল সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শাহেদ চৌধুরী ও ইলিয়াস খানসহ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক নেতারা হাজির হন। ওই সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আব্দুল হাই সিকদার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবান মাহমুদ, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি সালেহউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াকিল আহমেদ হিরনসহ বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হন। ব্যাপক সংখ্যক আইনজীবী ও সাংবাদিকের উপস্থিতির কারণে স্বল্প পরিসরের আদালতকক্ষে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আদালতকক্ষের বাইরে অবস্থান করছিলেন জামিন প্রার্থীরা। এ ছাড়া জামিন আবেদনসহ বিভিন্ন মামলায় আবেদন (মোশন) জমা দেওয়ার জন্য অন্য আইনজীবীরাও ওই আদালতে ঢুকছিলেন। কিন্তু তাঁদের ঢুকতে অসুবিধা হচ্ছিল। ওই সময় কয়েকজন আইনজীবী সাংবাদিকদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের আদালতকক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ জানান। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। আদালতে শুরু হয় হট্টগোল। সকাল ১১টার দিকে এ পরিস্থিতিতে বিচারকরা এজলাস থেকে নেমে যান।
একই সময়ে আদালতকক্ষের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আইনজীবীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। আইনজীবীদের সহকারীরাও সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। পরে সিনিয়র সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। একপর্যায়ে সিনিয়র সাংবাদিকরা সব সাংবাদিককে নিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের খোলা চত্বরে যান। সেখানে সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য দেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে সাংবাদিক নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানি হয়। সাংবাদিকদের পক্ষে ড. শাহদীন মালিক শুনানি করেন। ওই সময় অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দুপুরের পর রুলের ওপর রায়ের সময় নির্ধারণ করেন আদালত। একই সঙ্গে পরবর্তী শুনানির সময় সংশ্লিষ্ট সাত সাংবাদিককে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন।
বিকেল ৪টার পর সাত সাংবাদিক নেতা ও সমকালের পক্ষে আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ও অ্যাডভোকেট মো. মঞ্জুর আলম আদালতে হাজির হন।নয়া দিগন্তের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট শিশির মুহাম্মদ মনির। ওই সময় ড. শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদন উপস্থাপন করেন। ওই আবেদন নিষ্পত্তি করে তাঁদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন আদালত।
রায়ের আগে আদালত সকালে সংঘটিত বিষয়ে বলেন, ‘এই ঘটনা অপ্রত্যাশিত। অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়ের সময়ও দেখেছি আইনজীবী ও সাংবাদিকরা আদালতকক্ষে সহঅবস্থান করেছেন। তখন আদালতে পিনপতন নীরবতা ছিল। কিন্তু আজ যেটা হলো, সেটা অপ্রত্যাশিত। আজ আদালতের ভেতরে ভিডিও করা হয়েছে-  এটাও আদালত অবমাননা। আদালতের ভেতরে ভিডিও হবে, এটা তো কারো কাম্য নয়। এটা যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সে জন্য খেয়াল রাখা উচিত।’ পরে আদালত রায়ে বলেন, ‘যেহেতু নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন, তাই প্রসিডিংস ইজ ড্রপড।’
আদালতের রায়ের পর ড. শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের বলেন, আদালত প্রসিডিংস ড্রপ করে দিয়েছেন। এর অর্থ সাংবাদিকদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তবে আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মুহাম্মদ মনির বলেন, সাংবাদিকরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করায় আদালত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমান খানের লেখা দুটি নিবন্ধ প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। পরের দিন ২ মার্চ হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই লেখার জন্য প্রথম আলোর সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে রুল জারি করেন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী আবু তালেব পৃথকভাবে আবেদন জানালে আদালত আরেকটি রুল জারি করেন। এ দুটি রুলের শুনানি শেষ হয় ১১ মার্চ। আজ এ বিষয়ে আদালত রায় দেবেন।

– See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/03/13/61291#sthash.RCqTFH4v.dpuf

হাজিরা দিয়েই লাপাত্তা মন্ত্রী-এমপিরা

১২ মার্চ ২০১৪, বুধবার,

সংসদের অধিবেশনে হাজিরা দিয়েই লাপাত্তা মন্ত্রী ও এমপিরা। স্পিকার বারবার খুঁজলেও হদিস মেলে না তাদের। হুইপরাও ছোটাছুটি করেন এক লবি থেকে আরেক লবিতে। ক্যান্টিন থেকে সংসদ সচিবালয়ের অফিসে। শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে তাদের ফিরতে হয় সংসদ অধিবেশন কক্ষে। এরই মধ্যে স্পিকার প্রক্সি হিসেবে নাম ঘোষণা করেন বিকল্প মন্ত্রী, এমপির। এভাবেই চলছে দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। এটা এখন প্রতিদিনের চিত্র। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন সংসদে উপস্থিত থাকেন সেদিন অধিবেশন কক্ষের চিত্র থাকে কিছুটা ভিন্ন। মন্ত্রী ও এমপিদের সরব উপস্থিতি থাকে। প্রশ্ন ও উত্তর পর্বেও থাকে না অনুপস্থিতির সঙ্কট। আবার প্রধানমন্ত্রী অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করলেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পুরনো চেহারায় ফিরে যায় অধিবেশন কক্ষের চিত্র। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় নিয়মিত মন্ত্রী ও এমপিদের হাজিরা খাতা খতিয়ে দেখেন। নবম জাতীয় সংসদের শেষ দিক থেকে তিনি এ উদ্যোগ নেন। তাই বেশির ভাগ মন্ত্রী ও এমপি আগে থেকে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন কিনা। নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের দৈনন্দিন রুটিনে সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করেন। গত কয়েক দিনের সংসদ অধিবেশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বেশির ভাগ নতুন মন্ত্রী ও এমপিরা থাকছেন অনুপস্থিত। অথবা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই লাপাত্তা হচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ সিনিয়র মন্ত্রী ও এমপি নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন অধিবেশনে। আবার শেষ পর্যন্ত ধৈর্যসহকারে উপস্থিতও থাকছেন। তাই নতুন ও তরুণ মন্ত্রী ও এমপিদের প্রক্সি দিচ্ছেন সিনিয়ররা। এ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়নি। উল্টো তাদের মন্ত্রীরাও দিনের পর দিন গরহাজির থাকছেন সংসদে।
এদিকে মন্ত্রী ও এমপিদের নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে প্রায় সময় কোরাম সঙ্কটে পড়ছে সংসদ অধিবেশন। প্রতিদিন বিকাল ৫টায় অধিবেশনের নির্ধারিত সময় থাকলেও শুরু হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫টায়। নিয়ম অনুযায়ী অধিবেশন শুরুর ৫ মিনিট আগে থেকে সংসদ সচিবালয়ে বেল বাজানো হয়। মন্ত্রী-এমপিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করই এে ব্যবস্থা। তবে বেল বাজলেও সেদিকে নজর দেন না সংশ্লিষ্টরা। একই অবস্থা মাগরিবের নামাজের বিরতির সময়। স্পিকার ২০ মিনিটের বিরতি ঘোষণা করেন। অথচ অধিবেশন শুরু হয় প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট দেরিতে। বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের হিসেবে এর আগে দেখানো হয়েছে সংসদ অধিবেশনের জন্য প্রতি মিনিটে ব্যয় হয় ৪০ হাজার টাকা। এ হিসেবে প্রতিদিনই বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি গুণতে হচ্ছে সংসদ সচিবালয়কে।
এদিকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মন্ত্রী ও এমপিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন হুইপরা। তারা প্রতিদিনই এ নিয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। তবে ফলাফল শূন্য। এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, সংসদে মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতি কিছুটা কম। সংসদকে প্রাণবন্ত করতে উপস্থিতি বাড়ানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকার ও বিরোধী দলের হুইপরা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এদিকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। তিনি জানান, সংসদ কার্যকর রাখতে এবং কোরাম সঙ্কটে যাতে না পড়তে হয় সেজন্য এমপিদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অধিবেশন চলাকালে মন্ত্রীদেরও সংসদের বাইরে কোন প্রোগ্রাম না রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো নির্বাচিত এমপিদের সংসদীয় কার্যপ্রণালী সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে তাদের জন্য ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।
চলতি দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় গত ২৯শে জানুয়ারি। ইতিমধ্যে ২০ কার্যদিবস অধিবেশন বসেছে। এ সময়ে অধিবেশন ছিল নিষ্প্রাণ। অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রতিদিনই সংসদে যোগ দিলেও কোন কার্যক্রমে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়নি। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা তখন ৭টা ১৮ মিনিট। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ২০১২-১৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থানের জন্য স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুুল মুহিতকে। অর্থমন্ত্রী তখন নিজের আসন ছেড়ে বসা ছিলেন অধিবেশন কক্ষের মধ্যভাগের তৃতীয় সারিতে অন্য একটি আসনে। নাম ঘোষণা করার সময় অর্থমন্ত্রীর নির্ধারিত আসনের দিকে তাকান স্পিকার। দেখেন অর্থমন্ত্রী নেই। স্পিকারের চোখ পড়ে পেছনের দিকে। দেখেন অর্থমন্ত্রী আছেন। বলতে থাকেন- মাননীয় অর্থমন্ত্রী, মাননীয় অর্থমন্ত্রী। স্পিকারের ডাক শুনছিলেন না অর্থমন্ত্রী। এসময় ট্রেজারি বেঞ্চের প্রথম সারিতে বসা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও তৃতীয় সারিতে থাকা অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ কয়েকজন দাঁড়িয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তখন হুঁশ হয় অর্থমন্ত্রীর। তারপরেও নিজ আসনে আসবেন কিনা, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন তিনি। এবার স্পিকার বলতে থাকেন ‘মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আপনি একটু আপনার সিটে আসবেন, আপনার আসনে আসবেন একটু।’ হন্তদন্ত হয়ে নিজ আসনে ছুটে আসেন অর্থমন্ত্রী। এরপর প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। অনেক সদস্যকে দেখা যায় নিজ আসন ছেড়ে অন্য আসনে গিয়ে দীর্ঘসময় বসে থাকতে। আগের দিন ২৫শে ফেব্রুয়ারিও সংসদে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এদিন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের কাছে একটি তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন ছিল আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের। প্রশ্নটি উত্থাপনের জন্য স্পিকার শিরিন শারমিন নাম ঘোষণা করেন রতনের। তিনি তখন বসা ছিলেন তার এক সারি সামনে থাকা উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের পাশের একটি আসনে। রতন ‘অনুপস্থিত’ ভেবে তার পক্ষে প্রশ্নটি উত্থাপনের জন্য হাত তোলেন একই দলের সদস্য কাজী কেরামত আলী। স্পিকার তাকে ফ্লোরও দেন। তখন স্পিকারের কাছে বার্তা যায়, রতন সংসদে আছেন। স্পিকার বলতে থাকেন ‘মাননীয় সদস্য উপস্থিত আছেন, আপনি প্রশ্নটি উত্থাপন করুন।’ নিজ আসনে গিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন রতন। মন্ত্রীর জবাব শেষে সম্পূরক প্রশ্ন করার সময় তালগোল পাকিয়ে ফেলেন অমনোযোগী রতন। সম্পূরকের জবাব দিতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন ‘মাননীয় সদস্য যে প্রশ্ন করলেন, সেটির উত্তর এরই মধ্যে দেয়া হয়ে গেছে।’ সংসদ অধিবেশন কার্যক্রমে খেয়াল না রাখায় প্রশ্নোত্তর পর্ব পার হলেও সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ চান কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী। এ সময় কিছুটা বিরক্তির সুরে স্পিকার তাকে বসতে বলেন। তার মতো অনেকেরই আগ্রহ থাকে না অধিবেশনের কার্যসূচির ওপর। অনেকেই মন্ত্রীদের কাছে তদবির, কাগজ বা বই পড়া বা দল বেঁধে খোশগল্পে ব্যস্ত থাকেন। কেউ কেউ ক্যান্টিনে বা ভিআইপিদের দপ্তরে আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন। ফলে প্রশ্ন ও নোটিশ উত্থাপনের সময় সংশ্লিষ্ট সদস্যকে খুঁজে পাওয়া যায় না। গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের ওপর চারজন সংসদ সদস্য নোটিশ জমা দিলেও অনুপস্থিতির কারণে সেই প্রস্তাবগুলো উত্থাপিত হয়নি। ফলে নোটিশগুলোর ওপর কোন আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। নেত্রকোনা-১ আসনের ছবি বিশ্বাস, ফেনী-২ আসনের নিজাম উদ্দিন হাজারী, কুমিল্লা-৯ আসনের মো. তাজুল ইসলাম ও কুষ্টিয়া-৪ আসনের আবদুর রউফ ওই নোটিশগুলো জমা দেন।
সংসদ অধিবেশনের এ দুরাবস্থা নিয়ে সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ৪ঠা ও ৫ই মার্চ অনুষ্ঠিত নতুন সংসদ সদস্যদের ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও চিফ হুইপ সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত থাকার ও সংসদীয় কার্যক্রম অংশ গ্রহণরে জন্য বিশেষ ভাবে সতর্ক করেন। এরপর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংসদে উপস্থিত থাকার মন্ত্রীদের বিশেষ নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরও অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি।
সর্বশেষ গতকাল নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট পর অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতি যথারীতি কম ছিল। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। নির্ধারিত মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে স্পিকার প্রক্সি দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, প্রশ্নকর্তা চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া উপস্থিত নেই। আবার মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে যিনি উত্তর দেবেন বলে নির্ধারিত আছে সেই মন্ত্রী কামরুল ইসলামও নেই। তাই আমার সীমিত জ্ঞানে কতটুকু উত্তর দিতে পারবো জানি না। এসময় স্পিকার বলেন, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। এরপর মন্ত্রী উত্তর দেয়া শুরু করেন।

সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রমে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন সেবা চালু

অঅ-অ+
সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম ও মামলা ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে মামলা ব্যবস্থাপনায় ও মামলা সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করা হয়েছে। মামলা সম্পর্কিত তথ্য জানাতে এসএমএস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ ও সেবা প্রদানে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন সেবা চালু করায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর সুবিধা ভোগ করছে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি জীবন ব্যবস্থায় এখন এক অপরিহার্য বিষয়। তথ্যপ্রযুক্তির সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্টসহ পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থায় দুর্নীতি লাঘব ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত তরান্বিত করা যায়।
এটর্নি জেনারেল বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন সেবা চালু করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর সুবিধা ভোগ করছে। তিনি তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন সেবা আরো নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সুপ্রিম কোর্টের কম্পিউটার এনালিস্ট শাখা সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে মামলার সর্বশেষ তথ্য সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিনকার কার্যতালিকা, মামলার বেসিক তথ্য, মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং রায় ও আদেশ প্রতিদিন আপলোড করা হয়ে থাকে। ওয়েবসাইট সার্চ করলেই এসব তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাস,বিচারপতিদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য, সংবিধান, রুলস, কোর্ট ক্যালেন্ডার, বিভিন্ন আইন ও নজিরসহ সর্বোচ্চ আদালতে টেন্ডার, রিক্রুটমেন্ট, গেজেট, নোটিশ ইত্যাদি বিষয় ওয়েবসাইটে সরবরাহ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, মামলার শুনানির তথ্য সঙ্গে সঙ্গেই এর তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। ওয়েবসাইটে আরো অনেক তথ্য রয়েছে। বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশ গুলোর মতো আমাদের সর্বোচ্চ আদালতেও ওয়েবসাইট ও আদালত ব্যবস্থাপনা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে। মামলা সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহে পাঁচটি ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন, এটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনে স্থাপিত এসব ডিজিটাল ডিসপ্লে থেকে মামলার সর্বশেষ তথ্য জানা যায়।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক বেঞ্চগুলোতে মামলার প্রতিদিনকার কার্যতালিকা এখন ওয়েবসাইটে রয়েছে। আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও সংশ্লিট ব্যক্তিরা তা ঘরে বসে ওয়েবসাইট সার্চ করলেই আগাম জানতে পারে। ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দৈনিক কার্যতালিকা, ক্রম অনুযায়ী মামলা শুনানির তথ্য সঙ্গে সঙ্গেই জানা যাচ্ছে। এতে বেঞ্চগুলোর দৈনিক এবং প্রতি মুহূর্তের বিচারিক কার্যক্রমের সার সংক্ষেপ সরবরাহ করা হয়।
আইনজীবীরা জানান, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা কোন বেঞ্চে কত নম্বর মামলার শুনানি হচ্ছে তা এ ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে জানতে পারছে। যেখানে আগে প্রতিটি বেঞ্চে আগাম তথ্য না থাকায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের দীর্ঘসময় মামলার শুনানির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো। সে ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি স্থাপনের ফলে মামলার সর্বশেষ তথ্য ও কার্যতালিকার ক্রম অনুযায়ী শুনানির বিষয়ে আগাম তথ্যের কারণে সময় সাশ্রয়ের পাশাপশি হয়রানিরও অবসান হয়েছে।

 

হাইকোর্টে সাংবাদিক-আইনজীবীদের হট্টগোল

20130722033504_indexমার্চ ১২, ২০১৪ আদালত অবমাননার মামলায় শুনানি চলাকালে আজ বুধবার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের ভেতরে ও পরে বাইরে হট্টগোল হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমান খানের লেখা ‘মিনিটে একটি আগাম জামিন কীভাবে?’ শীর্ষক একটি উপসম্পাদকীয় প্রথম আলোর খোলা কলম পাতায় প্রকাশিত হয়। এরপর আদালত অবমাননার অভিযোগে ২ মার্চ প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে রুল দেন হাইকোর্ট। আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে শুনানিতে গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে কথা বলেন আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তাঁর ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে গত শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবদিক সমিতি ও বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতি আলাদা বিবৃতি দেয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই বিবৃতি পরদিন রোকন উদ্দিন মাহমুদ আদালতের নজরে আনেন। বিবৃতি দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান; বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এম এম জসিম ও সেক্রেটারি সাদ্দাম হোসেন; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কাজী মোবারক হোসেন ও সেক্রেটারি এম সুজাউল ইসলামকে আজ আদালতে হাজির হতে বলা হয়। এই আটজনের একজন ইলিয়াস খান দুটি পদে আছেন এবং আবদুর রহমান হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি ছয়জন আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালত অবমাননার বিষয়ে হাজিরা দিতে যান। বেলা পৌনে ১১টার বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বসে। সাংবাদিক নেতাদের পক্ষে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, এই চার সংগঠনের আট পদে থাকা ব্যক্তিদের আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল। এঁদের একজন দুটি পদে আছেন আর একজন হাসপাতালে আছেন। এ সময় আদালত কক্ষে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আদালতের কার্যক্রম চলার সময় এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আইজীবীদের বাগবিতণ্ডা হয়। আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এ সময় অনেক আইনজীবী সাংবাদিকদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য চিত্কার করতে থাকেন। এ অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারপতিরা। একপর্যায়ে এজলাস কক্ষের বাইরেও সেটি ছড়িয়ে পড়ে। বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে সাংবাদিকেরা আদালত ভবন থেকে নেমে নিচে চলে যান। প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার আদেশের দিন ধার্য করেছেন একই আদালত। আদালত অবমাননার এ বিষয়টি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রধান বিচারপতির আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে গত সোমবার দেশের ১৬টি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকেরা যৌথ বিবৃতি দেন। এদিকে মামলাটির শুনানি চলাকালে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সম্পর্কে কোনো কোনো আইনজীবীর ঢালাও মন্তব্য এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আদালতে তলবের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের দুটি সংগঠন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দুই অংশের নেতারা গত সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২

এসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২

( ২০০২ সনের ২ নং আইন )

[১৭ মার্চ, ২০০২]

এসিড অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে বিধান করার লক্ষ্যে প্রণীত আইন৷

যেহেতু এসিড অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্‌দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-

সংক্ষিপ্ত শিরোনামা ১৷ এই আইন এসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ নামে অভিহিত হইবে৷

সংজ্ঞা ২৷ বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে,-

(ক) “অপরাধ” অর্থ এই আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য যে কোন অপরাধ;

(খ) “এসিড” অর্থ দহনকারী, ক্ষয়কারী ও বিষাক্ত যে-কোন পদার্থও অন্তর্ভুক্ত হইবে;

(গ) “ট্রাইব্যুনাল” অর্থ এই আইনের অধীন গঠিত কোন ট্রাইব্যুনাল;

(ঘ) “ফৌজদারী কার্যবিধি” অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act V of 1898);

(ঙ) “হাইকোর্ট বিভাগ” অর্থ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগ৷

আইনের প্রাধান্য ৩৷ আপাততঃ বলবত্ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী কার্যকর থাকিবে৷

এসিড দ্বারা মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি ৪৷ যদি কোন ব্যক্তি এসিড দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটান তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷

এসিড দ্বারা আহত করার শাস্তি ৫৷ যদি কোন ব্যক্তি কোন এসিড দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তিকে এমনভাবে আহত করেন যাহার ফলে তাহার-

(ক) দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নষ্ট হয় বা মুখমণ্ডল, স্তন বা যৌনাংগ বিকৃত বা নষ্ট হয় তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন;

(খ) শরীরের অন্য কোন অংগ, গ্রন্থি বা অংশ বিকৃত বা নষ্ট হয় বা শরীরের কোন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক চৌদ্দ বত্সর কিন্তু অন্যুন সাত বত্সরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ হাজার টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷

এসিড নিক্ষেপ করা বা নিক্ষেপের চেষ্টা করার শাস্তি ৬৷ যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির উপর এসিড নিক্ষেপ করেন বা করিবার চেষ্ট করেন, তাহা হইলে তাহার উক্তরূপ কার্যের দরুণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক বা অন্য কোনভাবে কোন ক্ষতি না হইলেও, তিনি অনধিক সাত বত্সর কিন্তু অন্যুন তিন বত্সরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ হাজার টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷

অপরাধে সহায়তার শাস্তি ৭৷ যদি কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন এবং সেই সহায়তার ফলে উক্ত অপরাধ সংঘটিত হয় বা অপরাধটি সংঘটনের চেষ্টা করা হয়, তাহা হইলে ঐ অপরাধ সংঘটনের জন্য বা অপরাধটি সংঘটনের চেষ্টার জন্য নির্ধারিত দণ্ডে সহায়তাকারী ব্যক্তি দণ্ডনীয় হইবেন৷

মিথ্যা মামলা, অভিযোগ দায়ের, ইত্যাদির শাস্তি ৮৷ (১) যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের কোন ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান তাহা হইলে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করাইয়াছেন উক্ত ব্যক্তি অনধিক সাত বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷

(২) কোন ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল উপ-ধারা (১) এর অধীন সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করিতে পারিবে৷

ক্ষতিগ্রস্তকে অর্থদণ্ডের অর্থ প্রদান ৯৷ এই আইনের অধীন অর্থদণ্ডের অর্থ প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তির নিকট হইতে বা তাহার বিদ্যমান সম্পদ, বা তাহার মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর সময় রাখিয়া যাওয়া সম্পদ হইতে আদায় করিয়া অপরাধের দরুণ যে ব্যক্তির মৃত্যু ঘটিয়াছে তাহার উত্তরাধিকারীকে বা ক্ষেত্রমত, যেই ব্যক্তি শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন সেই ব্যক্তিকে বা সেই ব্যক্তির মৃত্যুর ক্ষেত্রে, তাহার উত্তরাধিকারীকে প্রদান করা হইবে৷

অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদ্ধতি ১০৷ এই আইনের অধীনে কোন অর্থদণ্ড আরোপ করা হইলে, ট্রাইবুন্যাল সংশ্লিষ্ট জেলার কালেক্টরকে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বা অনুরূপ বিধি না থাকিলে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে, অপরাধীর স্থাবর বা অস্থাবর বা উভয়বিধ সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুতক্রমে ক্রোক ও নিলাম বিক্রয় বা ক্রোক ছাড়াই সরাসরি নিলামে বিক্রয় করিয়া বিক্রয়লব্ধ অর্থ ট্রাইব্যুনালে জমা দিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং ট্রাইব্যুনাল উক্ত অর্থ অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রদানের ব্যবস্থা করিবে৷

অপরাধের তদন্ত ১১৷ (১) এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার কর্তৃক, অপরাধটি সংঘটনের তথ্য প্রাপ্তি অথবা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অপরাধ তদন্তের আদেশ প্রদানের তারিখ হইতে পরবর্তী ত্রিশ দিনের মধ্যে, সম্পন্ন করিতে হইবে৷

(২) যেই ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে তদন্ত সমাপ্ত করা সম্ভব না হয় সেই ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি বিশেষ কারণ প্রদর্শন করিয়া ট্রাইব্যুনালকে সন্তুষ্ট করিতে পারেন যে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে তদন্তের সময়সীমা বৃদ্ধি করা সমীচীন, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল তদন্তের সময়সীমা অনধিক পনের দিন বর্ধিত করিতে পারিবে৷

(৩) যে ক্ষেত্রে উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে তদন্ত সমাপ্ত না হয়, সেই ক্ষেত্রে উক্ত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর বা মামলার বিচার চলাকালীন যে কোন সময় ট্রাইব্যুনাল কোন আবেদনের প্রেক্ষিতে বা ন্যায়বিচারের স্বার্থে যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোন অপরাধের তদন্ত সম্পন্ন করা বা ক্ষেত্রমত, তত্সম্পর্কে অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল অতিরিক্ত অনধিক পনের দিনের মধ্যে তদন্ত বা অধিকতর তদন্ত সমাপ্তির নির্দেশ দিতে পারিবে৷

(৪) উপ-ধারা (২) বা ক্ষেত্রমত, উপ-ধারা (৩) এর অধীন নির্দেশিত অতিরিক্ত সময়ের মধ্যে কোন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত সমাপ্ত করিতে ব্যর্থ হইলে, ট্রাইব্যুনাল-

(ক) অন্য কোন কর্মকর্তার দ্বারা অনধিক পনের দিনের মধ্যে তদন্ত সমাপ্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারিবে; এবং

(খ) এই ধারার অধীন নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তদন্ত সমাপ্ত করিতে ব্যর্থ তদন্তকারী কর্মকর্তার ব্যর্থতার বিষয়টি অদক্ষতা হিসাবে চিহ্নিত করিয়া উক্ত কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট তাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত নির্দেশ দিতে পারিবে৷

(৫) ট্রাইব্যুনাল কোন আবেদনের প্রেক্ষিতে বা অন্য কোন তথ্যের ভিত্তিতে কোন একজন তদন্তকারী কর্মকর্তার পরিবর্তে অন্য কোন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারিবে৷

ক্ষেত্রবিশেষে আসামীকে সাক্ষী গণ্য করা ১২৷ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর যদি ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পর্যালোচনা করিয়া এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, তদন্ত প্রতিবেদনে আসামী হিসাবে উল্লিখিত কোন ব্যক্তিকে ন্যায়বিচারের স্বার্থে সাক্ষী করা বাঞ্ছনীয়, তবে উক্ত ব্যক্তিকে আসামীর পরিবর্তে সাক্ষী হিসাবে গণ্য করিবার নির্দেশ দিতে পারিবে৷

তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক আলামত, সাক্ষ্য ইত্যাদি সংগ্রহে গাফিলতি ১৩৷ যদি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্তির পর ট্রাইব্যুনালের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, এই আইনের অধীন কোন অপরাধের তদন্তকারী কর্মকর্তা কোন ব্যক্তিকে অপরাধের দায় হইতে রক্ষা করিবার উদ্দেশ্যে বা তদন্তকার্যে ইচ্ছাকৃত গাফিলতির মাধ্যমে অপরাধটি প্রমাণে ব্যবহারযোগ্য কোন আলামত সংগ্রহ বা বিবেচনা না করিয়া বা উক্ত ব্যক্তিকে আসামীর পরিবর্তে সাক্ষী করিয়া বা কোন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে পরীক্ষা না করিয়া তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করিয়াছেন, তাহা হইলে উক্ত তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উক্ত কার্য বা অবহেলাকে অদক্ষতা বা, ক্ষেত্রমত, অসদাচরণ হিসাবে চিহ্নিত করিয়া ট্রাইব্যুনাল উক্ত কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে তাহার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারিবে৷

অপরাধের আমলযোগ্যতা, অ-আপোষযোগ্যতা ও অ-জামিনযোগ্যতা ১৪৷ এই আইনের অধীন সকল অপরাধ আমলযোগ্য (Cognizable), অ-আপোষযোগ্য (Non-Compoundable) এবং অ-জামিনযোগ্য (Non-Bailable) হইবে৷

জামিন সংক্রান্ত বিধান ১৫৷ (১) এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, অভিযুক্ত বা শাস্তিযোগ্য কোন ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হইবে না, যদি-

(ক) তাহাকে মুক্তি দেওয়ার আবেদনের উপর রাষ্ট্র বা, ক্ষেত্রমত, অভিযোগকারী পক্ষকে শুনানীর সুযোগ দেওয়া না হয়; এবং

(খ) তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার যুক্তিসংগত কারণ রহিয়াছে মর্মে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হন; অথবা

(গ) তিনি নারী বা শিশু অথবা শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ না হন এবং তাহাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার কারণে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হইবে না মর্মে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট না হন৷

(২) কোন অপরাধের তদন্ত সমাপ্তির পর তদন্ত প্রতিবেদন বা সেই সূত্রে প্রাপ্ত অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে যদি ট্রাইব্যুনাল বা ক্ষেত্রমত, আপীল আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোন ব্যক্তি উক্ত অপরাধের সহিত জড়িত নহেন বলিয়া বিশ্বাস করিবার যুক্তিসংগত কারণ রহিয়াছে, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল বা আপীল আদালত সংশ্লিষ্ট তথ্য ও কারণ উল্লেখপূর্বক উক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিতে পারিবে৷

বিচার পদ্ধতি ১৬৷ (১) এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচার কেবলমাত্র ধারা ২৩ এর অধীন গঠিত এসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হইবে৷

(২) ট্রাইব্যুনালে কোন মামলার শুনানী শুরু হইলে উহা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা চলিবে৷

(৩) ট্রাইব্যুনাল বিচারের জন্য মামলার নথি প্রাপ্তির তারিখ হইতে নব্বই দিনের মধ্যে বিচারকার্য সমাপ্ত করিবে৷

(৪) কোন মামলার বিচারকার্য শেষ না করিয়া যদি কোন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বদলী হইয়া যান, তাহা হইলে তিনি বিচারকার্যের যেই পর্যায়ে মামলাটি রাখিয়া গিয়াছেন, সেই পর্যায় হইতে তাহার স্থলাভিষিক্ত বিচারক বিচার করিবেন এবং তাহার পূর্ববর্তী বিচারক যে সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করিয়াছেন সেই সাক্ষীর সাক্ষ্য পুনরায় গ্রহণ করার প্রয়োজন হইবে না:

তবে শর্ত থাকে যে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে যদি বিচারক কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য পুনরায় গ্রহণ করা অপরিহার্য বলিয়া মনে করেন, তাহা হইলে তিনি সাক্ষ্য গ্রহণ করা হইয়াছে এমন যে কোন সাক্ষীকে তলব করিয়া পুনরায় তাহার সাক্ষ্য গ্রহণ করিতে পারিবেন৷

(৫) ধারা ৪, ৫ ও ৬ এর অধীন কোন অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে, কোন আবেদনের প্রেক্ষিতে, ট্রাইব্যুনাল উপযুক্ত মনে করিলে অপরাধের শিকার কোন ব্যক্তি বা অন্য কোন সাক্ষীর জবানবন্দী রুদ্ধদ্বার কক্ষে গ্রহণ করিতে পারিবে৷

অভিযুক্ত শিশুর বিচার পদ্ধতি ১৭৷ কোন শিশু এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে অভিযুক্ত হইলে তাহার ক্ষেত্রে Children Act, 1974 (Act XXXIX of 1974) এর বিধানাবলী যতদূর সম্ভব অনুসরণ করিতে হইবে৷

আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার ১৮৷ (১) যদি ট্রাইব্যুনালের এই মর্মে বিশ্বাস করিবার যুক্তিসংগত কারণ থাকে যে,-

(ক) অভিযুক্ত ব্যক্তি তাহার গ্রেফতার বা তাহাকে বিচারের জন্য সোপর্দকরণ এড়াইবার জন্য পলাতক রহিয়াছে বা আত্মগোপণ করিয়াছে; এবং

(খ) তাহার আশু গ্রেফতারের কোন সম্ভাবনা নাই, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল অন্ততঃ দুইটি বাংলা দৈনিক খবরের কাগজে প্রজ্ঞাপিত আদেশ দ্বারা, আদেশে উল্লিখিত সময়, যাহা পনের দিনের বেশী হইবে না, এর মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে পারিবে এবং উক্ত সময়ের মধ্যে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে হাজির হইতে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল তাহার অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পন্ন করিতে পারিবে৷

(২) যদি কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে হাজির হইবার পর বা তাহাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করিবার পর বা তাহাকে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জামিনে মুক্তি দেওয়ার পর পলাতক হন, তাহা হইলে তাহার ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এর বিধান প্রযোজ্য হইবে না, এবং সেই ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল, কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তাহার বিচার সম্পন্ন করিতে পারিবে৷

ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক যে কোন স্থানে জবানবন্দি গ্রহণের ক্ষমতা ১৯৷ (১) এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের তদন্তকারী কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা তদন্তকারী অন্য কোন ব্যক্তি কিংবা অকুস্থলে কোন আসামীকে ধৃত করার সময় কোন পুলিশ কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে, ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকেফহাল বা ঘটনাটি নিজ চক্ষে দেখিয়াছেন এমন কোন ব্যক্তির জবানবন্দি অপরাধের ত্বরিত বিচারের স্বার্থে কোন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অবিলম্বে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি কোন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে উক্ত ব্যক্তির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করিবার জন্য লিখিতভাবে বা অন্য কোনভাবে অনুরোধ করিতে পারিবেন৷

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে বা অন্য কোন যথাযথ স্থানে উক্ত ব্যক্তির জবানবন্দি গ্রহণ করিবেন এবং উক্তরূপে গৃহীত জবানবন্দি তদন্ত প্রতিবেদনের সহিত সামিল করিয়া ট্রাইব্যুনালে দাখিল করিবার নিমিত্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা বা ব্যক্তির নিকট সরাসরি প্রেরণ করিবেন৷

(৩) যদি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোন অপরাধের জন্য অভিযুক্ত কোন ব্যক্তির বিচার কোন ট্রাইব্যুনালে শুরু হয় এবং দেখা যায় যে, উপ-ধারা (২) এর অধীন জবানবন্দি প্রদানকারী ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রয়োজন, কিন্তু তিনি মৃত্যুবরণ করিয়াছেন বা তিনি সাক্ষ্য দিতে অক্ষম বা তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া সম্ভব নহে বা তাহাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করিবার চেষ্টা এইরূপ বিলম্ব, ব্যয় বা অসুবিধার ব্যাপার হইবে যাহা পরিস্থিতি অনুসারে কাম্য হইবে না, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল উক্ত জবানবন্দি মামলার সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, শুধু উক্ত সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করিয়া ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান করিতে পারিবে না৷

রাসায়নিক পরীক্ষক, রক্ত পরীক্ষক, ইত্যাদির সাক্ষ্য ২০৷ সরকার কর্তৃক নিয়োজিত কোন চিকিত্সক, রাসায়নিক পরীক্ষক, সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক, রক্ত পরীক্ষক, হস্তলিপি বিশেষজ্ঞ, আংগুলাংক বিশারদ অথবা আগ্নেয়াস্ত্র বিশারদকে এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে কোন বিষয়ে পরীক্ষা বা বিশ্লেষণ করিয়া প্রতিবেদন প্রদান করিবার পর বিচারকালে, তাহার সাক্ষ্য গ্রহণ প্রয়োজন, কিন্তু তিনি মৃত্যুবরণ করিয়াছেন বা তিনি সাক্ষ্য দিতে অক্ষম বা তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া সম্ভব নয় বা তাহাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করিবার চেষ্টা এইরূপ বিলম্ব, ব্যয় বা অসুবিধার ব্যাপার হইবে যাহা পরিস্থিতি অনুসারে কাম্য হইবে না তাহা হইলে তাহার স্বাক্ষরযুক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এই আইনের অধীন বিচারকালে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা যাইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, শুধুমাত্র উক্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করিয়া ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান করিতে পারিবে না৷

সাক্ষীর উপস্থিতি ২১৷ (১) এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচারের জন্য সাক্ষীর সমন বা ওয়ারেন্ট কার্যকর করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট সাক্ষীর সর্বশেষ বসবাসের ঠিকানা যে থানায় অবস্থিত, সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করিতে হইবে এবং উক্ত সাক্ষীকে উক্ত ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করিবার দায়িত্ব উক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার থাকিবে৷

(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান সত্ত্বেও সাক্ষীর সমনের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সাক্ষীকে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপার বা, ক্ষেত্রমত, পুলিশ কমিশনারকে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র সমেত নিবন্ধিত ডাকযোগে প্রেরণ করা যাইবে৷

(৩) এই ধারার অধীন কোন সমন বা ওয়ারেন্ট কার্যকর করিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃত গাফিলতি করিলে ট্রাইব্যুনাল উহাকে অদক্ষতা হিসাবে চিহ্নিত করিয়া সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে৷

ফৌজদারী কার্যবিধির প্রয়োগ, ইত্যাদি ২২৷ (১) এই আইনে ভিন্নরূপ কিছু না থাকিলে, কোন অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে৷

(২) ট্রাইব্যুনাল একটি দায়রা আদালত বলিয়া গণ্য হইবে এবং এই আইনের অধীন যে-কোন অপরাধ বা তদনুসারে অন্য কোন অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে দায়রা আদালতের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে৷

(৩) ট্রাইব্যুনালে অভিযোগকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী ব্যক্তি পাবলিক প্রসিকিউটর বলিয়া গণ্য হইবেন৷

এসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ২৩৷ (১) এই আইনের অধীন অপরাধ বিচারের জন্য সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করিতে পারিবে এবং এইরূপে গঠিত ট্রাইব্যুনাল এসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল নামে অভিহিত হইবে৷

(২) যেই ক্ষেত্রে একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় সেই ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত প্রজ্ঞাপনে প্রত্যেক ট্রাইব্যুনালের স্থানীয় অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করিতে হইবে৷

(৩) একজন বিচারক সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হইবে এবং সরকার জেলা জজ বা দায়রা জজগণের মধ্য হইতে উক্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত করিবে৷

(৪) সরকার, প্রয়োজনবোধে, কোন জেলা জজ বা দায়রা জজকে তাহার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত করিতে পারিবে৷

(৫) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে জেলা জজ বা দায়রা জজ অর্থে অতিরিক্ত জেলা জজ বা, ক্ষেত্রমত অতিরিক্ত দায়রা জজও অন্তর্ভুক্ত হইবে৷

অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ, ইত্যাদি ২৪৷ (১) সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিম্নে নহেন এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা এতদুদ্দেশ্যে সরকারের নিকট হইতে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির লিখিত রিপোর্ট ব্যতিরেকে কোন ট্রাইব্যুনাল কোন অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ করিবে না৷

(২) যদি কোন ট্রাইব্যুনাল এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোন অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ করিবার জন্য অনুরোধ করিয়া ব্যর্থ হইয়াছেন, সেই ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত রিপোর্ট ব্যতিরেকে কোন অভিযোগের ভিত্তিতে সরাসরি অপরাধটি বিচারার্থ গ্রহণ করিতে পারিবে৷

(৩) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোন রিপোর্টে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ বা তত্সম্পর্কে কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ না থাকা সত্ত্বেও, ট্রাইব্যুনাল যথাযথ এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় মনে করিলে, কারণ উল্লেখপূর্বক উক্ত ব্যক্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ করিতে পারিবে৷

(৪) এই আইনের অধীন কোন অপরাধ বা উহার কোন অংশ যে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারাধীন এলাকায় সংঘটিত হয় সেই ট্রাইব্যুনালে অপরাধটি বিচারার্থে গ্রহণের জন্য রিপোর্ট বা অভিযোগ পেশ করা যাইবে এবং উক্ত ট্রাইব্যুনাল অপরাধটির বিচার করিবে৷

অন্য আইনের অধীন সংঘটিত কতিপয় অপরাধের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের এখ্‌তিয়ার ২৫৷ যদি এই আইনের অধীন কোন অপরাধের সহিত অন্য আইনের অধীন কোন অপরাধ এমনভাবে জড়িত থাকে যে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে উভয় অপরাধের বিচার একই সংগে বা একই মামলায় করা প্রয়োজন, তাহা হইলে উক্ত অন্য অপরাধটির বিচার এই আইনের অধীন অপরাধের সহিত এই আইনের বিধান অনুসরণে একই সংগে বা একই ট্রাইব্যুনালে করা যাইবে৷

আপীল ২৬৷ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ, রায় বা আরোপিত দণ্ড দ্বারা সংক্ষুব্ধ পক্ষ, উক্ত আদেশ, রায় বা দণ্ডাদেশ প্রদানের তারিখ হইতে ষাট দিনের মধ্যে, হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করিতে পারিবেন৷

মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ২৭৷ এই আইনের অধীনে কোন ট্রাইব্যুনাল, মৃত্যুদণ্ড প্রদান করিলে সংশ্লিষ্ট মামলার নথিপত্র অবিলম্বে ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৩৭৪ এর বিধান অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে প্রেরণ করিতে হইবে এবং উক্ত বিভাগের অনুমোদন ব্যতীত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাইবে না৷

নিরাপত্তামূলক হেফাজত ২৮৷ এই আইনের অধীন কোন অভিযোগের তদন্ত চলাকালে কিংবা অপরাধের বিচার চলাকালে যদি ট্রাইব্যুনাল মনে করে যে, কোন ব্যক্তিকে নিরাপত্তামূলক হেফাজতে রাখা প্রয়োজন, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল উক্ত ব্যক্তিকে কারাগারের বাহিরে সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্ধারিত স্থানে সরকারী কর্তৃপক্ষের হেফাজতে বা ট্রাইব্যুনালের বিবেচনায় যথাযথ অন্য কোন ব্যক্তি বা সংস্থার হেফাজতে রাখিবার নির্দেশ দিতে পারিবে৷

মেডিক্যাল পরীক্ষা ২৯৷ (১) এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের শিকার কোন ব্যক্তির মেডিক্যাল পরীক্ষা সরকারী হাসপাতালে কিংবা সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে স্বীকৃত কোন বেসরকারী হাসপাতালে বা বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে করা যাইবে৷

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোন হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার কোন ব্যক্তিকে চিকিত্সার জন্য উপস্থিত করা হইলে, উক্ত হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিত্সক তাহার মেডিক্যাল পরীক্ষা অতি দ্রুত সম্পন্ন করিবে এবং উক্ত মেডিক্যাল পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করিবে৷

(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন মেডিক্যাল পরীক্ষা কিংবা সার্টিফিকেট প্রদান না করা হইলে সংশ্লিষ্ট চিকিত্সকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার জন্য তাহার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, বা ক্ষেত্রমত, যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিতে পারিবে৷

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা ৩০৷ সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে৷

 

Copyright © 2010, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs

বিবাহের রেজিস্ট্রেশন কি? কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়?

মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ (Muslim Marriage and Divorce (Registration) Act, 1974), এর বিধান মতে প্রত্যেকটি বিবাহ নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক এবং এই উদ্দেশ্যে সরকার ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নিয়োগ করিবেন। প্রত্যেক বিবাহ রেজিস্ট্রার সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রতিটি বিবাহ এবং তালাক এর পৃথক নিবন্ধন বজায় রাখবেন।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা, ২০০৯ [the Muslim Marriages and Divorces (Registration) Rules, 2009] এর অধীনে একটি বিবাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে – একটি বিবাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স প্রার্থীদের মাদ্রাসা বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলীম সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে যাদের বয়স ২১ – ৪০ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং একটি নির্ধারিত আবেদন পত্রে নির্ধারিত ফী সহ উপদেষ্টা কমিটি সচিবের বরাবরে আবেদন করতে হবে। উপদেষ্টা কমিটি বিবাহ রেজিস্ট্রার নির্বাচন করার বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করিবেন। উল্লেখ্য, একটি বিবাহ রেজিস্ট্রার এর সেবা একটি সরকারি সেবা নয়। একজন বিবাহ রেজিস্ট্রার ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই সেবা প্রদান করতে পারবেন।

বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফি: –

১৯৭৫ সালের বিবাহ এবং তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা – ১৮ ধারাতে বর্ণিত হয়েছে –

(১) বিবাহ নিবন্ধন ফি বাবদ একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার মোহরানার প্রতি ১০০০/- (এক হাজার টাকা) বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১০/- (দশ টাকা) হারে সর্বনিম্ন ৫০/- (পঞ্চাশ টাকা) এবং সর্বোচ্চ ৪০০০/- (চার হাজার টাকা) আদায় করিতে পারিবেন।
(২) তালাক নিবন্ধনের জন্য ফি বাবদ একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার ২০০/- (দুই শত টাকা) আদায় করিতে পারিবেন।
(৩) কমিশনের বিবাহ বা তালাক নিবন্ধনের জন্য একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার নিম্নোক্ত ফি আদায় করিবেন –
(ক) কমিশন ফি টাকা ২৫/- (পঁচিশ)
(খ) কমিশন কার্যকর করার জন্য যাতায়াত ভাতা মাইল প্রতি ১/- (এক টাকা)
৪। পরিদর্শন এবং নকলের জন্য একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার নিম্নোক্ত ফি আদায় করিবেন –

(ক) নিকাহনামা বা তালাকনামার সহিমোহরী কপির জন্য –

সাধারণ টাকা ৫/-
জরুরী (urgent) টাকা ১০/-

আরো বিস্তারিত জানতে –

Contact Deputy Secretary Registration Room No.622 Phone: +88-02-7161556

হিন্দু জমি দখল : আ.লীগ নেতাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ

P1_hindu-jomi-dokholলালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার রসুলপুর গ্রামে হিন্দু পরিবারের জমি জোর করে দখলের অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জমি দখলের ঘটনা তদন্ত করে পুলিশ মহাপরিদর্শককে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গতকাল এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেইনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
এছাড়া লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপারকে অপরাধী গ্রেফতার নিশ্চিত করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
লালমনিরহাটে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরির্দশক, উপ মহাপরির্দশক, জেলা পুলিশ সুপার ও পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), অভিযুক্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা রবিউল ইসলাম ও নজরুল ইসলামকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন-অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি আদালতে শুনানিতে বলেন, বেআইনিভাবে হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি দখল করছে প্রভাবশালীরা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেয়া হচ্ছে না। সুতরাং এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
গত ২ মার্চ ইংরেজি দৈনিকে ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা হিন্দু পরিবারের জমি দখল করেছে’ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদের ভিত্তিতে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গত ৪ মার্চ ওই রিট করেন অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী।

 

ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে যুব মহিলা লীগ নেত্রীর অভিযোগ

»
রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন যুব মহিলা লীগের এক নেত্রী। মনিরা চৌধুরী নামের এ নেত্রী ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেন।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মনিরা চৌধুরী ছাত্রলীগের এ নেতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে নির্যাতনের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি পদের আড়ালে মোয়াজ্জেম হোসেন তপু গোটা রামপুরা এলাকার সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা, মাদক ও নারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। মনিরা চৌধুরী দাবি করেন, তপু প্রবীণ সাংবাদিক আফতাব আহমেদ ও সিআইডি পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম হত্যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সন্দেহভাজন আসামি। পুলিশ চাঞ্চল্যকর এই দুটি হত্যা মামলায় তপু বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েও তাদেরকে ধরতে সাহস পায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ মার্চ আমার স্বামী ও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে রামপুরা টিভি ভবনের উল্টোপাশে মদিনা টাওয়ারের সামনে গেলে তপু তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার সন্তানকে কোল থেকে টেনে ফেলে দিয়ে আমাকে রিকশা থেকে জোর করে নামায়। এ সময় আমার স্বামী মারুফ সরকার তাকে বাধা দিলে তাকেও মেরে অজ্ঞান করে ফেলে। শত শত লোকের মধ্য থেকে আমাকে টেনেহিঁচড়ে মদিনা টাওয়ারের সিঁড়ির মধ্যে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালায়। আমার চিত্কারে এ সময় তপু বাহিনীর সামনে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। তারা আমার ভাইকেও মেরে অজ্ঞান করে। টহল পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরে আমি থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়ে মামলা করতে গেলে রামপুরা থানা পুলিশ আমার মামলা না নিয়ে অভিযোগপত্রটি রেখে দেয়। পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাদেরকেই মীমাংসা করতে চাপ দিতে থাকে।
যুব মহিলা লীগ নেত্রী বলেন, স্থানীয় সাধারণ মানুষদের ওপর তপুর নানা ধরনের অত্যাচারের শত শত অভিযোগ থানায় পড়ে থাকে। অসহায় মানুষরা এর বিচার পান না। তিনি নিজেও তপুর বিরুদ্ধে একাধিকবার থানায় বিচার চেয়েও পাননি। উল্টো রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্রুত তপুর সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে চাপ প্রয়োগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে মনিরার মা হোসনে আরা বেগম, আহত ভাই মেরাজ ও স্বামী মারুফ সরকার উপস্থিত ছিলেন।
১৮৬, উলন রোড, রামপুরার মৃত মজিবুর রহমান চৌধুরীর কন্যা মুনিরা তার ওপর তপুর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মনিরা চৌধুরী বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করার পর গত অক্টোবর মাসে সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার রামপুরার বাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এ সময় সে আমাকে তুলে নিতে চায়। আমার পরিবারের চিত্কারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দিনের বেলায় আমার ছোট ভাই মেরাজের ওপর হামলা চালিয়ে অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দেয়। তপু তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার বাসায় পুনরায় হামলা চালিয়ে গেট ভাংচুর করে।

‘আলো-বাতাসে’ যেতে মানা যে শিশুদের

অনলাইন ডেস্ক |

করিয়ামার একটি কিন্ডারগার্টেনের ঘরের ভেতর বানানো খেলার জায়গায় খেলছে দুই বছরের নাও ওতানাবে। ছবি: রয়টার্সঅদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হবে ওদের। যুঝতে হবে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধির সঙ্গে। বাড়িতেই হোক আর স্কুলে, খেলা যাবে না খোলা আকাশের নিচে! বড়রাই শিশুদের বলবেন, ‘যাবে না আলো-বাতাসে!’ আর তিন বছরের শিশুও জানতে চাইবে, ‘এটাতে কি তেজস্ক্রিয়তা আছে?’ নির্মম এই নিয়তি সে দেশের, যারা পরপর দুইবার ইতিহাসের ভয়ংকরতম আণবিক বোমা হামলার শিকার হয়েছে; এ জীবন জাপানের ফুকুশিমার শিশুদের।

জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমা ফেলেছিল প্রায় সাত দশক আগে। আর জাপানের ফুকুশিমাতেই গত সিকি শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে ২০১১ সালের ১১ মার্চ। সুনামি ও ভূমিকম্পের যুগপত্ আঘাতে ফুকুশিমার দাইচি পারমাণবিক প্রকল্পের ছয়টি পরমাণু চুল্লির তিনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া রোধে জাপানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও এখনো মারাত্মক হুমকি হয়ে রয়েছে ফুকুশিমা। পরিবেশগত বিপর্যয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির বাইরেও জনজীবনে এই দুর্ঘটনার প্রভার বিস্তর। বিশেষ করে ফুকুশিমার শিশুরা বেড়ে উঠছে মরণব্যাধির ঝুঁকি নিয়ে এক মূর্তিমান আতঙ্কের দুনিয়ায়।

ঘরবন্দী শিশু, উদ্বেগের জনপদ

ফুকুশিমা পারমাণবিক প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী করিয়ামার শিশুরা জানে না খোলা আকাশের নিচে খেলতে কেমন লাগে, তেজস্ক্রিয়তার আতঙ্কে ওদের ছোট্ট জীবনের বেশির ভাগটাই কেটেছে ঘরবন্দী হয়েই। প্রশাসন বাইরে চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে জীবনযাপন স্বাভাবিক করার প্রয়াস নিয়েছে। আশপাশের অনেক স্কুলও ধীরে ধীরে নিয়ম-কানুন শিথিল করছে। কিন্তু অভিভাবকদের আতঙ্ক কাটছে না।
আতঙ্ক কাটার কথাও না। কেননা ইতোমধ্যেই পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই সামনে আসতে শুরু করেছে। ফুকুশিমার শিশুরা ভয়াবহ দুর্বলতার শিকার, তাদের শরীরে বল নেই, একটা বাইসাইকেল চালানোর শক্তিও নেই গায়ে। ওদের অনেকেই কোনোকিছু গুছিয়ে করতে পারে না, খুব অল্পতেই চটে যায়, অস্থিরতায় ভোগে। অভিভাবক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আর স্কুলের শিক্ষকেরাই এ কথা জানিয়েছেন।
করিয়ামার এম্পোরিয়াম কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক মিত্সুহিরো হিরাগুরি বলেন, ‘অনেক শিশু আছে যারা খুবই ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। কিন্তু অনেক শিশুই বাইরে খেলাধুলার জন্য মরিয়া হয়ে থাকে।’ হিরাগুরি বলেন, ‘ওরা বলে, “আমরা বালিতে খেলব, কাদা দিয়ে বল বানাব”। কিন্তু আমরা ওদের বলতে বাধ্য হই—না, আমরা দুঃখিত। তোমরা বরং ঘরের মধ্যে রাখা বালির বাক্সেই খেলো।’
একসময় ধান, পিচফল আর গরুর মাংসের জন্য বিখ্যাত কৃষিপ্রধান ফুকুশিমার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় জনজীবন এবং সংস্কৃতিকে আমূল পাল্টে দিয়েছে। দাইচি পারমাণবিক প্রকল্পের ৩০ কিলোমিটার পরিধির অঞ্চলকে আগেই ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষকে। এই জনগোষ্ঠীর অনেকেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানেই বাস করছিলেন। আর নিষিদ্ধ এলাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ২০১১ সালে দুর্ঘটনার পর থেকেই রাস্তাঘাট, উদ্যান, ময়দান, স্কুল-কলেজসহ জনসমাগমের স্থানগুলোকে তেজস্ক্রিয়তামুক্ত করতে চেষ্টা চালানো হয়েছে।ফুকুশিমার পার্শ্ববর্তী নাইহোনমাতসুর একটি ক্লিনিকে পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ের থাইরয়েড পরীক্ষা করছেন চিকিত্সক। ছবি: রয়টার্স

‘বাতাস ছুঁয়ো না’
পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর করিয়ামা নগর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের নিয়ম করে দেয় দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের দিনে ১৫ মিনিটের বেশি বাইরের খোলা বাতাসে না রাখতে। আর তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এই সময় দিনে ৩০ মিনিট পর্যন্ত। গত বছরের অক্টোবরে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকদের শঙ্কার সঙ্গে সহমত পোষণ করে কিন্ডারগার্টেন এবং নার্সারি স্কুলগুলো এখনো এই বিধি-নিষেধ মেনে চলছে।

করিয়ামার একটি কিন্ডারগার্টেনে খেলার ঘরে সন্তানকে রেখে বিদায় নেওয়ার সময় উদ্বিগ্ন এক মা তাঁর ছেলেকে বলছিলেন, ‘বাইরের বাতাস এড়িয়ে চলার চেষ্টা করো।’

শিশুর মুখেও ‘তেজস্ক্রিয়তা’

১৯৮৬ সালে রাশিয়ার চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর শিশুদের মধ্যে থাইরয়েড ক্যানসার দেখা দিলেও গত বছরের মে মাসে জাতিসংঘ বলেছে, ফুকুশিমায় ক্যানসারের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।

করিয়ামার এম্পোরিয়াম কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক হিরাগুরি জানিয়েছেন, বিদ্যায়তনটির আশপাশে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এখন প্রতি ঘণ্টায় ‘শূন্য দশমিক ১৪ মাইক্রোসিয়েভার্টস’। দুর্ঘটনার পরপর এই হার ছিল প্রায় ‘৩ দশমিক ১ থেকে ৩ দশমিক ৭ মাইক্রোসিয়েভার্টস’। জাপানে সরকারিভাবে নির্ধারিত তেজস্ক্রিয়তার নিরাপদ মাত্রা ‘বছরে ১,০০০ মাইক্রোসিয়েভার্টস’ থেকে কম। কিন্তু এই তেজস্ক্রিয়তা যেকোনো সময় কমতে-বাড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ভীতি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না অভিভাবকেরা। তিন সন্তানের জননী ৩৪ বছর বয়সী আয়ুমি কানেতা বলছিলেন, ‘আমি বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি। পারতপক্ষে জানালা খুলি না। আর খাবারদাবার কিনে আনি ফুকুশিমার বাইরে থেকে। এটাই আমাদের প্রতিদিনের জীবন।’
এ জীবনেই বেড়ে উঠছে ফুকুশিমার শিশুরা। অভিভাবকদের কাছ থেকে শুনে শুনে এখন তিন বছরের শিশুর মুখেও নিত্যদিন ফেরে ‘তেজস্ক্রিয়তা’ শব্দটি। কোনোকিছু খাওয়ার আগে ওরা জিজ্ঞেস করে, ‘এটাতে কি তেজস্ক্রিয়তা আছে, এটা কি খেতে পারব।’


করিয়ামার এম্পোরিয়াম কিন্ডারগার্টেনের খেলার ঘরে বালির বাক্সে খেলছে শিশুরা। ছবি: রয়টার্সচাপ বাড়ছে শিশুদের

খোলা আলো-বাতাসে যেতে না পারায়, খেলাধুলা করতে না পারায় ফুকুশিমার শিশুদের ওপর ব্যাপক মনো-দৈহিক প্রভাব পড়ছে। করিয়ামা নগর সরকারের কর্মকর্তা তোশিয়াকি ইয়াবে জানান, ‘দুর্ঘটনার আগের সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে শিশুদের শারীরিক সক্ষমতা অনেক কমেছে—দৌড়ানো, বল নিক্ষেপ করা, কোনোকিছু আঁকড়ে ধরার মতো সাধারণ শারীরিক পরীক্ষাতেই এটা ধরা পড়ছে।’

ফুকুশিমা প্রিফেকচার বোর্ড অব এডুকেশন এক জরিপে দেখতে পেয়েছে, প্রতিটি বয়স-গ্রুপেই এখানকার শিশুদের গড় ওজন জাপানের জাতীয় গড়ের চেয়ে বেড়ে গেছে। এদিকে, স্কুলের কর্মকর্তা হিরাগুরি জানিয়েছেন, অনেক শিশুই যথাযথভাবে সাড়া দিতে পারে না। ওরা অসতর্ক হয়ে থাকে। ওরা কোনোকিছুতেই উদ্দীপনা পায় না।

করিয়ামার জনসমাগমস্থল এবং উদ্যানগুলোর মাটি একাধিকবার পাল্টে ফেলা হয়েছে, খেলাধুলার সামগ্রী ও রাস্তাঘাটের নানা ব্যবহার্য স্থাপনা পাল্টানোর কাজও শেষ পর্যায়ে। কিন্তু করিয়ামার নগর কর্মকর্তা তোশিয়াকি ইয়াবে বলেন, ‘আগে অভিভাবকেরা অনেক বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে। এখন তাঁরা উদ্বিগ্ন তাঁদের শিশুরা বাইরে বেরোতে চায় না বলে।’
স্কুল কর্মকর্তা মিত্সুহিরো হিরাগুরি বলছিলেন, ‘মাঝেমধ্যেই আমি ভাবি ফুকুশিমায় শিশুদের রাখা আদৌ ঠিক কি না। কিন্তু অনেকের পক্ষেই তো এখান থেকে চলে যাওয়া সম্ভব না। আমি খুব দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি, এ শিশুদের জন্য আমার পক্ষে সম্ভব সবকিছুই করা উচিত।’

গুম-নিখোঁজ তদন্তে অনীহা


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়েই চলছে। অভিযোগ রয়েছে, কখনও সাদা পোশাকে কিংবা পুলিশ-র‌্যাবের পোশাকে রাতের  অন্ধকারে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল হলেই পরিবারের লোকজন ছুটছেন থানা, ডিবি পুলিশ কিংবা নিকটস্থ র‌্যাব কার্যালয়ে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটকের কথা স্বীকার করছে না কেউই। মাসের পর মাস গুম হয়ে থাকলেও তাদের উদ্ধারে তৎপরতা ও ঘটনা তদন্তে অনীহা দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে গুম হওয়া কোন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা যায় নি। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করছেন, গুম বা নিখোঁজের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত থাকায় তারা এ নিয়ে কোন তদন্তও করেন না। একারণে অন্য অনেক অপরাধী গ্রেপ্তার হলেও গুম হওয়া কোন ব্যক্তি উদ্ধার কিংবা এর সঙ্গে জড়িতরা কেউ গ্রেপ্তার হয় না।
গত বুধবার রাতে ময়মনসিংহের ভালুকার একটি বাড়ি থেকে তিন সহোদরকে র‌্যাব লেখা পোশাক পরা একদল ব্যক্তি তুলে নিয়ে গেলে গুমের বিষয়টি আবারও আলোচনায় ওঠে আসে। র‌্যাব পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট র‌্যাব কর্তৃপক্ষ তাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে। ঘটনার চতুর্থ দিনে তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও কারা তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল- এ বিষয়ে কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, গুম বা অপহরণ করা অপরাধের একটি পুরাতন ধরন। বিভিন্ন কৌশলে অপরাধীরা এটি করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঝে মধ্যেই এসব ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে থাকে। তিনি বলেন, গুম বা নিখোঁজের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সংস্থার জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তা অনুসন্ধান করে দেখা হয়। এছাড়া, এসব ঘটনার তদন্ত হচ্ছে না এমন অভিযোগও ভিত্তিহীন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব মতে, চলতি বছরেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অন্তত ৫০ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে,  চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি  মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩০ ব্যক্তি। চলতি মাসে আরও ৭-৮ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৬ জন ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪ জন অপহৃত হন। জানুয়ারি মাসে সাত জনের ও ফেব্রুয়ারি মাসে ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, অপহৃত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে দিনমজুর পর্যন্ত অনেকেই গুমের শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন ঠিকই কিন্তু তাদের উদ্ধার করতেও ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে গুম-খুন ও ক্রসফায়ার নিয়ে একটি তদন্ত কমিশন হওয়া দরকার। ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত গুম-খুন ও ক্রসফায়ার নিয়ে তারা তদন্ত করবেন। স্বাধীনভাবে পরিবারের সদস্যরাও যেন সাক্ষ্য দিতে পারে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে সেটি সিভিলিয়ান বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেই হোক তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা প্রশাসনের লোক পরিচয়ে কেবল বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেলেই তা গুম হিসেবে প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে পরিবারের লোকজন নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করতে পারে এমনকি থানা-পুলিশও তাদের কথায় গুরুত্ব দেয়। এছাড়া রাস্তা বা অন্য এলাকা থেকে তুলে নেয়া বা তুলে নেয়ার সময় কোন প্রত্যক্ষদর্শী না থাকলে এগুলো সব নিখোঁজের তালিকায় চলে যায়। থানা পুলিশ এগুলোকে নিখোঁজ হিসেবে একটি জিডি গ্রহণ করে। সব থানায় দৈহিক বর্ণনা দিয়ে একটি বার্তা পাঠানোর মাধ্যমেই দায়িত্ব শেষ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তাদের উদ্ধারেও কোন গুরুত্ব দেয় না।
সূত্র জানায়, আগে বাসা থেকে ধরে নেয়ার পর লাশ পাওয়া গেলেও এখন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। এক এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর দূরের কোন এলাকায় বা নদী-জলাশয়ে তাদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে লাশ এমন স্থানে ফেলা হয় বা চেহারা বিকৃত করে দেয়ায়  লাশের পরিচয় শনাক্ত করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। অজ্ঞাত হিসেবে এসব লাশ দাফন হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা সঠিক তথ্যটি জানতে পারেন না।
বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে এবং পরে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৬০ নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকা শহরেই ২১ জন গুমের শিকার হন। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ কিংবা গুমের ঘটনার তদন্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সফলতা নেই। ওয়ানটেড ক্রিমিনাল থেকে শুরু করে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা, পুলিশ কিংবা র‌্যাবের হাতে ধরা পড়লেও নিখোঁজ কিংবা গুমের ঘটনাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপহৃত হওয়ায় তারা বিষয়গুলো তদন্তে গুরুত্ব দেন না। রহস্য উদ্ঘাটিত হলে একটি সংস্থার হাতে অপর সংস্থা ধরাশায়ী হতে পারে। এ জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে এসব ঘটনার তদন্ত করতে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা থাকে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, গুম-নিখোঁজের কোন অভিযোগ থাকলে র‌্যাব তা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় নিখোঁজ ব্যক্তি অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় নিজেই পালিয়ে থাকে। ধরা পড়ার ভয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় পরিবারের সদস্যরা ভেবে নেয় তাকে গুম করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর ১০৩৯ জন ব্যক্তি নিখোঁজের তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে কেবল ২০-২৫ জন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের পরিবারই কেবল মনে করে পুলিশ-র‌্যাব তাদের ধরে নিয়ে গেছে। অন্যরা এসব অভিযোগ করে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে গুম করা হলেও মামলা তো দূরের কথা জিডিও নিতে চায় না পুলিশ। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, থানা পুলিশ তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার বিষয়টি জিডিতে উল্লেখ করতে নিষেধ করে। নিখোঁজ জিডি হিসেবে পুলিশ তা গ্রহণ করতে চায়- যাতে দেশের সবগুলো থানায় একটি বার্তা পাঠানোই হয়ে ওঠে তাদের একমাত্র কাজ। গত ৪ঠা ডিসেম্বর রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে তেজগাঁওয়ের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড (সাবেক ৩৮) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ সাত জনকে র‌্যাব পরিচয়ে দু’টি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সুমন ছাড়া অন্যরা হচ্ছেন কাওসার, মাসুম, সুমনের খালাতো ভাই তানভীর, রানা, রাসেল ও আল আমিন। এই ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের কোন সন্ধান দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম জানান, ঘটনার পরপরই তারা ভাটারা ও তেজগাঁও থানায় জিডি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু থানা পুলিশ র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে লেখা দেখে সেই জিডি নেয়নি। নিখোঁজ হিসেবে জিডি করলে নেয়া হবে-পুলিশ কর্মকর্তারা এমনটি জানালে পরিবারের সদস্যরা তাতে রাজি হননি। সানজিদা ইসলাম বলেন, র‌্যাব লেখা দু’টি গাড়ি দিয়ে তাদের তুলে নেয়া হলো। তুলে নিয়ে যেতে অনেকেই দেখেছে। সেই ঘটনাটি নিখোঁজ হয় কিভাবে? তিনি বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি যারা তুলে নিয়ে গেছে তারাই ওদের খুঁজে বের করুক। তাদেরই বলতে হবে সুমন ভাইসহ অন্যরা কোথায় আছে। একই দিন পশ্চিম নাখালপাড়া ৬৪০ নম্বর বাড়িতে একদল ব্যক্তি নিজেদের ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দিয়ে তেজগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক এএম আদনান চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যায়। আদনানের পিতা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক রুহুল আমীন চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে আদনানকে নিয়ে যায়। তারা ঘরে তল্লাশিও চালিয়েছে। কিন্তু পরদিন থানা পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি সবাই তুলে নেয়ার কথা অস্বীকার করছে। তিনি বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমি নিজ হাতে ছেলেকে তাদের হাতে তুলে দিলাম। কিন্তু এরপর থেকে তার কোন খোঁজই পাচ্ছি না। রুহুল আমীন চৌধুরী বলেন, সুমনকে বসুন্ধরা এলাকা থেকে র‌্যাব সদস্যরা নিয়ে যায় রাত ন’টার দিকে। আর আদনানকে নিয়ে যায় রাত ৩টার দিকে। আদনানকে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে সুমনও ছিল বলে তারা শুনেছেন। তিনি বলেন, ছেলের হদিস না পেয়ে তিনি তেজগাঁও থানায় গিয়েছিলেন জিডি করতে। কিন্তু থানা পুলিশ র‌্যাব নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরে জিডি নেয়নি। এখন র‌্যাবও স্বীকার করছে না। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে নাকি বেঁচে আছে তা একমাত্র আল্লাহ জানে।
গত ২রা ফেব্রুয়ারি সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুব হাসান সুজন ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি কাজী ফরহাদকে নারায়ণগঞ্জের মুগড়া এলাকা থেকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। ঘটনার পর থেকে তাদের আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ২৮শে জানুয়ারি জোয়ার সাহারার বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি ভাটারা থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর রহমান অঞ্জন। তিন দিন পর বিমানবন্দর থানায় অঞ্জনের মোটরসাইকেলটি পাওয়া যায়। তার চাচা সিরাজ মোল্লা জানান, ঘটনার পরদিন ভাটারা থানায় একটি জিডি করেন। কিন্তু মাস পেরোলেও অঞ্জন উদ্ধার না হওয়ায় গত ১লা মার্চ তারা একটি মামলা (নং ৫) দায়ের করেন। কিন্তু মামলার পরও পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করছে না। এ অবস্থায় তারা মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করতে ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি আবেদন করেছেন। জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই আমিনুল হক বলেন, পরিবারের এই অভিযোগ মিথ্যা। মামলার তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর থেকে অঞ্জন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন

dhaka1

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সফলভাবে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক এম এ খান এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের চিকিত্সক বিমলাংশু দের নেতৃত্বে চিকিত্সকদের একটি দল এই প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করে।

বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আশা করছি বাংলাদেশে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের দুর্দিন বিদায় হলো। বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যানটেশনের মাধ্যমে শুধু ব্লাড ক্যানসার নয়, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীরাও নতুন জীবন লাভ করতে পারবেন। স্বদেশে সহজে-সুলভে এখান থেকে রোগীরা চিকিত্সাসেবা পাবেন।’

যাঁর শরীরে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তিনি ৫২ বছর বয়সী একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। মাল্টিপলমাইলোমা নামক ব্লাড ক্যানসারে ভুগছেন তিনি। দুই সপ্তাহের মধ্যেই তিনি বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। চিকিত্সকেরা বলছেন, ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের পর রোগী পুরোপুরি ভালো হয়ে যান।

রক্তরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের পর রোগী খুব নাজুক অবস্থায় থাকেন। আজ যাঁর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হলো তিনিও খুব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। আমরা সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।’

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক বিমলাংশু দে বলেন, তিন বছর ধরে বাংলাদেশে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলেছে। বাংলাদেশের চিকিত্সক ও তাঁদের সহযোগীরা তিন বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নানা প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। মার্কিন বিশেষজ্ঞ দলও একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই ইউনিটটি যেকোনো বিবেচনায় বিশ্বের যেকোনো শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনীয়।

বাঙালি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন চিকিত্সক বাংলাদেশে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করার ব্যাপারে তিনি নিজের কাছে ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে অংশগ্রহণকারী চিকিত্সক ও তাঁদের সহযোগীদের করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়।

 

মুন্সীগঞ্জের নিখোঁজ আইনজীবীকে সিলেটে হত্যা

 

  

 

 

 

মুন্সীগঞ্জের নিখোঁজ সিনিয়র আইনজীবী কাজী ওবায়দুল ইসলাম সিপন (৪৮)-কে সিলেটে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। পরে তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে সিলেট শহরে হযরত মানিক পীর (রহ.) মাজার সংলগ্ন আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার ৮দিন পর শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শনাক্তের পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিহতের ভাইঝি জামাই তারেক চৌধুরী বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। মামলা নং ০৩। আইনজীবী সিপনকে হত্যার কারণে মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতি গতকাল আদালতের কার্যক্রম স্থগিত রেখে দুপুর ১২টার দিকে নিহতের পরিবারকে শোকবার্তা দিয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতি নিহতের পরিবারকে নগদ ১ লাখ টাকা দিয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এ টাকা গ্রহণ করেছেন মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষ এডভোকেট আবদুল হান্নান জুয়েল। সিলেট থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম জানান, গত ১লা মার্চ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অজ্ঞাত হিসেবে আইনজীবী সিপনকে অচেতন অবস্থায় কে বা কারা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে একই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বিকাল ৪টায় হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তি সংবাদটি থানাকে জানায়। তখন মৃতদেহটি হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। এরপর দেশের সব থানায় বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু লাশের শনাক্তিকারী না পাওয়ায় গত ৬ই মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট মেয়রের অনুমতি নিয়ে মরদেহটি দাফন করা হয়। পরে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশের দেয়া ছবি মিলিয়ে দেখা যায় এটি মুন্সীগঞ্জের নিখোঁজ আইনজীবী সিপনের মরদেহ। নিহতের শরীরের কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। অজ্ঞানপার্টির কবলে পরে তিনি মারা গেছেন বলে দারোগা নজরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, অল্প সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। তাদের সবকিছুই শনাক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নিহত আইনজীবী সিপনকে হত্যার প্রতিবাদে ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মুন্সীগঞ্জ আদালত এলাকায় মুন্সীগঞ্জের আইনজীবীরা আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করবেন বলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. মাসুদ আলম জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি রাত ৭টায় আইনজীবী সিপন মুন্সীগঞ্জ শহরের ইদ্রাকপুরের বাসা থেকে কিশোরগঞ্জে তার বোনের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বের হন। এরপর রাত ১২টা পর্যন্ত তার সঙ্গে স্ত্রী রেণু বেগমের মোবাইল ফোনে কথা হয়। রাত ১টার পর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গত ৩রা মার্চ দুপুর ১২টার দিকে নিখোঁজ আইনজীবীর শ্বশুর আবদুল হাকিম বাদী হয়ে সদর থানায় জিডি করেন। জিডি নম্বর ১২২।

কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ

এয়ার ফ্রান্স0,,16074509_303,00
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ভোজা এয়ার0,,15901814_303,00
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ইরান এয়ার0,,16278581_303,00
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস0,,5599551_7,00
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ0,,17485349_303,00
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু0,,15657590_303,00
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ইয়েমেনিয়া0,,4443811_7,00
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷

 

মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স0,,17482767_303,00

৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷

গরুদেরও অধিকার আছে ফটোশপ শেখার। তাই গরুদের জন্য এই ফটোশপ টিউটোরিয়াল।

Akm Wahiduzzaman
আপনার অপদার্থ দানা নেতাটি মদ্যপান করে গাড়ি চালিয়ে আমেরিকাতে ধরা পড়ে জেল খেটেছে? এখন অন্য দলের জনপ্রিয় নেতাকে সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চান? তাহলে নীচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

১/ প্রথমে তুরষ্কের একটি নাইটক্লাবের ছবি জোগাড় করুন; [১]

২/ এবার এবার ফটোশপ ব্যবহার করে ছবিটির হরাইজন্টাল মিরর ইমেজ তৈরী করুন; [২]

৩/ এরপর যে নেতার চরিত্র হনন করে আপনার মদারু নেতার সমপর্যায়ে আনতে চান সেই নেতার তৃণমূল সবাবেশ থেকে একটি ছবি যোগাড় করুন। [৩]

৪/ এখন নাইট ক্লাবের ছবিটিকে সুবিধামত ক্রপ করুন। [৪]

৫/ নাইট ক্লাবের ছবিতে থাকা কোন দাঁড়ি ওয়ালা লোককে সনাক্ত করুন। এটা খুবই জরুরী স্টেপ, কারণ এর উপর নির্ভর করছে একই ঢিলে ইসলাম ধর্ম এবং জনপ্রিয় নেতাকে হেয় করার বিষয়টি নির্ভর করছে। প্রয়োজনে নির্মলেন্দু গুণ বা রবীন্দ্রনাথের ছবি ব্যবহার করুন কিন্তু দাড়ী থাকতে হবে। টুপিসহ যোগাড় করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা। [৫]

৬/ এইবার দাড়িওয়ালা লোকটির মুখ কেটে ফটোশপের মাধ্যমে ঐ জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতার মুখ বসান। [৬]

৭/ এবার এডিট করা ছবিটিকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিন। [৭]

৮/ আপনার ক্রোমোজমে কুকুরের জিন থাকলে শিরোনাম দিন, “সহীহ হেফাজতি, জামায়াতি কায়দায় জীবন উপভোগ করছেন …..” আর যদি ভারতীয় গরুর জিন থাকে তাহলে শিরোনাম দিন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশঃ লন্ডনের নাইট ক্লাবে …..”

গরু হাম্বা হাম্বা করে, ফেসবুকের আনন্দ বাড়ে!

—————–
১/ http://murphysdancebar.com/istanbul/wp-content/gallery/galeri/17-01-2013-036.jpg

২/ http://i1315.photobucket.com/albums/t593/Wahiduzzaman21/TR-1_zpsb73f99ab.jpg

৩/ http://www.flickr.com/photos/48119602@N04/4410320635

৪/ http://i1315.photobucket.com/albums/t593/Wahiduzzaman21/TR-2_zps2e6cb261.jpg

৫/ http://i1315.photobucket.com/albums/t593/Wahiduzzaman21/TR-3_zpsbad537a6.jpg

৬/ http://i1315.photobucket.com/albums/t593/Wahiduzzaman21/TR-4_zps03d51dbf.jpg

৭/ http://img.priyo.com/files/201403/t-zia-640.jpg

পুলিশি হয়রানিতে অতিষ্ঠ রাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার হুমকি

বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সাজু সরদার নামের এক শিক্ষার্থীর অসুস্থ পিতা-মাতাকে পুলিশ হয়রানি করছে এই অভিযোগ এনে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

রোববার সন্ধ্যায় ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘সাজু সরদার’ নামের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এই হুমকি দেন তিনি। জানা গেছে, এই সাজু সরদার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী এবং তার বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। তার পিতার নাম হানিফ আলী সরদার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন সমকাল নাট্যচক্রের একজন সক্রিয় সদস্যও সাজু সরদার।

ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে সাজু সরদার বলেন, “আমার শ্রদ্ধেয় স্যাররা মনে হচ্ছে আমাকে আর বেশিদিন এই পৃথিবীতে থাকতে দেবেন না। আমার বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ, তার ওপর আমার পরিবারকে পুলিশ দিয়ে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তাতে মনে হয় তাদেরও আর বেশিদিন পৃথিবীতে থাকা হবে না। আমার সকল বন্ধুদের বলছি, আমার অথবা আমার পরিবারের যদি কিছু হয় তার জন্য দায়ী থাকবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমি স্যারদের আবার স্পষ্ট করে বলছি- আপনারা যদি সংযত না হন তাহলে আমার পরিবারের মান-সম্মান বাঁচানোর জন্য আমি আত্মহত্যা করব এবং সেটা আপনাদের সামনেই করব।”

রাবি শিক্ষার্থী সাজু সরদারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে (রোববার) বিকেল ৩টায় পাটকেল গাটা থানার ওসি আমার অসুস্থ বাবাকে থানায় দেখা করতে বলেছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় গ্রামের লোকজনও আমাদের বাড়িতে এসে নানা কিছু জানতে চেয়েছে। এতে আমরা খুবই বিব্রতবোধ করছি।”

এই ব্যাপারে মামলার অন্যতম আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোত্তফা বলেন, “সাজুসহ আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তাদের হয়রানি করেছে। এই ধরনের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এসব হয়রানি বন্ধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।” মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি সাইদুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের দায়ের করা সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত করতে আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুটি ও পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি করে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিস্ফোরক দ্রব্য ও পুলিশের কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে দায়েরকৃত সবকটি মামলাতেই সাজু সরদারকে আসামি করা হয়েছে।

সাভারে অস্ত্রসহ আটক যুবলীগ নেতাদের ছেড়ে দিল পুলিশ

সাভার প্রতিনিধি

ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ডিইপিজেড) অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করার অপরাধে কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সোহেল পারভেজসহ ৫ জনকে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে বেপজা কর্তৃপক্ষ। অবশ্য পরে স্থানীয় এমপির অনুরোধে দুটি অস্ত্রসহ ২ জনকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে ডিইপিজেডের নতুন জোনের শান্তা ইন্ডাস্ট্রিজ কারখানার সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়। জানা যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সোহেল পারভেজ, রিয়াজ মিনহা ও আবদুল হকসহ ১০-১২ জন দুটি জিপ গাড়ি নিয়ে ঝুট আনার জন্য ইপিজেডের ভেতর প্রবেশ করে। এ সময় নিরাপত্তা কর্মীরা বাধা দিলে রিয়াজ মিনহা এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে জোরপূর্বক ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে অন্য নিরাপত্তা কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৫ জনকে আটক করে। খবর দিলে আশুলিয়ার থানা পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তবে সরেজমিন আশুলিয়া থানায় গিয়ে একটি লাইসেন্সকৃত শটগানসহ দুজনকে ওসি তদন্তের কক্ষে বসে থাকতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ঝুট ব্যবসায়ী আকবর মৃধা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সোহেল পারভেজসহ ১০-১৫ জন ব্যক্তি আমার ব্যবসা দখল করার জন্য অস্ত্রসহ ডিইপিজেড এলাকায় প্রবেশ করে আমার লোকজনকে মারধর করে। আমি বিষয়টি বেপজা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। তবে তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ প্রথমে ৫ জনকে আটক করলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুরোধে অবৈধ অস্ত্রসহ ২ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ডা. এনামুর রহমান বলেন, আমি আশুলিয়া থানার ওসিকে ঝুট ব্যবসা নিয়ে কোনো প্রকার ঝামেলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

 

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ বদরুল আলম জানান, দুুপুরে যুবলীগ নেতা সোহেল পারভেজ একটি রিভলবার নিয়ে ইপিজেড এলাকায় প্রবেশ করলে বেপজা কর্তৃপক্ষ থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বর্তমানে তাদের থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বেপজা কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

 

12980_polish

রিমান্ড, ডিটেনশন এবং জিজ্ঞাসাবাদ

লিখেছেন:1520700_543494415741878_941575980_n

 

যে যাই বলুক না কেন, জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ অথবা সন্দেহ থাকলে সাধারণত প্রথমেই কাউকে ‘গ্রেফতার’ করা হয় না। এ ধরনের সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ‘আটক’ করা হয়। এ অবস্থায় আটককৃত ব্যক্তির পরিজনের কাছে তিনি ‘নিখোঁজ’ থাকবেন এবং কোন সরকারী সংস্হা তাকে আটক করার কথা স্বীকার করবে না। আটককৃত ব্যক্তির কাছ থেকে সন্তোষজনক তথ্য উদ্ধার করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাকে নিয়ে কি করা হবে। তাকে কোন ব্যবস্হা না নিয়ে ছেড়ে দেয়া হতে পারে আবার গ্রেফতার দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করানো হতে পারে। গ্রেফতার দেখানোর আবার নানা রকম উপায় আছে। সেটা নির্ভর করবে কি রকম মামলা নিয়ে এক্ষেত্রে কাজ করা হবে। তবে, সাধারণত এক্ষেত্রে ‘হাতে নাতে’ বিস্ফোরক অথবা অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয় । বলাই বাহুল্য, এসব বিস্ফোরক অথবা অবৈধ অস্ত্র সরকারী মজুদ থেকেই সরবরাহ করা হয় যদি ঐ মুহূর্তে কিছু উদ্ধার করা সম্ভবপর না হয়। সত্যি সত্যি উদ্ধার করা সম্ভব হলে, উদ্ধারকৃত মালামাল যে কোন সময় পরে মামলায় ঢুকানো যায়। ‘স্টিং অপারেশনের’ ফাইল আগে থেকে তৈরী থাকলে , যাবতীয় সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করে পত্রিকা ওয়ালাদের খবর দেয়া হয় । তৃতীয় একটা সম্ভাবনার অস্তিত্ব অবশ্য বাতিল করে দেয়া যায় না যা সাধারণত কেউ প্রকাশ্যে স্বীকার করবেন না যেহেতু সাধারণ অবস্থায় যে কোন আইনেই এ ধরনের চর্চা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত। সেটা কি ? সেটা হচ্ছে আটককৃত ব্যক্তির চিরস্থায়ী নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। কেউ কোনদিক জানতে পারবে না , তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল। এক্ষেত্রে সরকারী সংস্থা চালাক হলে আটক অভিযান সাদা পোষাকে পরিচালিত হয় যাতে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করা যায় । অদক্ষ কিংবা দাম্ভিক সংস্থাগুলো (জনমতের থোরাই কেয়ার ! ) সাধারণত ইউনিফর্ম পড়েই এ ধরনের অভিযান চালায়। একজন ব্যক্তিকে সরকারীভাবে ( ইউনিফর্ম পরে) আটক করার পরে সেই ব্যক্তির নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার মত কেলেঙ্কারীর ঘটনা অনেক আছে। থানা খেকে বলা হয় যে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু আসলে তাকে অন্য সংস্হার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই এ ধরনের চর্চা অব্যহত আছে। বেসামরিক এবং গনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পরে যথাশীঘ্র (রাষ্ট্র ভেদে সময়সীমা কমবেশী হতে পারে) বিচারকের কাছে হাজির করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। বিচারালয়ে হাজির করার পর বিচারক সিদ্ধান্ত নেন যে আটককৃত ব্যক্তিকে মুক্তি, জামিন কিংবা হাজতে প্রেরণ করা হবে। বিচারক চাইলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হস্তান্তর করতে পারেন যা বাংলাদেশে এবং ইংরেজ সাধারণ আইনে ‘রিমান্ড’ নামে পরিচিত। কিন্তু কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার না দেখিয়ে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গোয়েন্দা ইন্টারোগেশন সেলে অথবা সেফ হাউজে আটক রাখা হলে তাকে ‘রিমান্ড’ বলা যাবে না , বোঝার সুবিধার্থে এটাকে ডিটেনশন বলা যায় যদিও যে নামেই ডাকা হোক, জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টা এখানে ঠিকই থাকছে।

শারীরিক নির্যাতন নিয়ে কিছু কথা

প্রথমেই যে বিষয়টা আমি পরিষ্কার করতে চাই তা হলো , শারীরিক নির্যাতন তদন্তের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। একজন বেদনায় কাতর রোগী যেমন তার চিকিৎসকের কাছে সঠিক অবস্হা তুলে ধরতে পারে না, তেমনি শারীরিক ব্যাথায় কাতর একজন বন্দীর কাছ থেকে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য আশা করা যায় না। এ ধরনের বন্দী নির্যাতন থেকে বাঁচার আশায় মিথ্যাকে সত্য এবং সত্যকে মিথ্যা বলে চালাতে কুণ্ঠিত হয় না।

“The barbarous custom of having men beaten who are suspected of having important secrets to reveal must be abolished. It has always been recognized that this way of interrogating men, by putting them to torture, produces nothing worthwhile.”
– Napoleon Bonaparte

বাংলাদেশে জনমনে রিমান্ডের সাথে শারীরিক নির্যাতনের একটা অবশ্যাম্ভী সম্পর্ক রয়েছে। খবরের কাগজে এ বিষয়ে প্রতিদিন কোন না কোন প্রতিবেদন চোখে পড়ে । সেসব প্রতিবেদনে বর্ননা করা হয় কিভাবে রিমান্ডের সময় আটককৃত ব্যক্তির উপর নানাবিধ বিচিত্র উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়। এ রকম একটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ নিচে তুলে দিলাম ।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, রিমান্ডে নেয়া আসামিদের ১৪ ধরনের নির্যাতন করা হয়। সেগুলোর মধ্যে গিটা নির্যাতন, বাদুড় ধোলাই নির্যাতন, ওয়াটার থেরাপি নির্যাতন, উলঙ্গ করে নির্যাতন, সারা দিন না খাইয়ে নির্যাতন, বোতল থেরাপি নির্যাতন, ডিম থেরাপি নির্যাতন, ডিস্কো ড্যান্স নির্যাতন, সিলাই নির্যাতন, ঝালমুড়ি নির্যাতন, টানা নির্যাতন, বাতাস নির্যাতন অন্যতম।
আসামিদের হাত-পায়ের প্রতিটি জয়েন্টে লাঠিপেটা করার নামই হল গিটা নির্যাতন। এ নির্যাতনের ফলে হাড়-মাংস থেতলে যায়। কিন্তু বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না। চিৎ করে ফ্লোরে ফেলে দুই হাত, দুই পা বেঁধে মুখে গামছা বা কাপড় ঢুকিয়ে পানি ঢেলে মারধর করাকে বলা হয় ওয়াটার থেরাপি। নাকে-মুখে পানি দিতে থাকলে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে আসামিরা সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য বলে তথ্য দিতে থাকে। দুটি উঁচু টেবিলের মাঝখানে দুই হাত বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানোকে বলা হয় বাদুড় ধোলাই। এ রকমের নির্যাতন করলে যে কোন আসামি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। গরম বা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ডিম আসামিদের মলদ্বারে ঢুকিয়ে নির্যাতন করাকে বলা হয় ডিম থেরাপি। এ নির্যাতনের ফলে আসামির মলদ্বার ফুলে যায় এবং অনবরত রক্ত পড়তে থাকে। যতক্ষণ আসামিরা স্বীকারোক্তি না দেয় ততক্ষণ মলদ্বারে ডিম ঢুকাতে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে স্বীকারোক্তি দিয়ে দেয়। হাত-পায়ে অবিরাম ইলেকট্রিক শক দেয়াকে বলা হয় ডিস্কো ড্যান্স থেরাপি। ইলেকট্রিক শক দিলে আসামি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে তাদের তথ্য প্রদান করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। হাত-পায়ের নখে মোটা সুঁই ঢুকানোকে বলা হয় সিলাই নির্যাতন। সুঁই ঢোকানোর পর হাত-পায়ের নখগুলো ফুলে যায়। চোখ-মুখ ও নাকে শুকনো মরিচ লাগানোকে বলা হয় ঝালমুড়ি নির্যাতন। নির্যাতনের ফলে আসামির চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পায়ের পাতায় বেধড়ক পেটানোকে বলা হয় টানা নির্যাতন। সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে নির্যাতন করাকে বলা হয় বাতাস পদ্ধতি।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর
http://jugantor.us/enews/issue/2011/12/13/news0739.htm । পড়তে অসুবিধা হলে পাঠক ইউনিকোড কনভার্টার ব্যবহার করতে পারেন এখানে http://thpbd.org/bangla/v1.0/index.html

মধ্যযুগে বন্দীদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর পেছনের মূল উদ্দেশ্য তথ্য উদ্ধার ছিল না। নির্যাতনের পেছনে যে দর্শন কাজ করত তা ছিল নেহায়েৎ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী , ধর্মদ্রোহী, ফৌজদারী অপরাধী এ ধরনের ব্যক্তিদের শায়েস্তা করা , প্রতিশোধ গ্রহন , ক্ষমতা প্রদর্শন এবং অবশ্যই বিকৃত আনন্দলাভ। আজকের মত সে সময়েও নির্যাতন চালিয়ে মর্জিমাফিক স্বীকারোক্তি আদায় করা হত। প্রমাণ না থাকলে প্রমাণ তৈরী করা হত – ঠিক এখনকার মতই। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ‘শারীরিক’ নির্যাতন চালানোর পেছনে মূলত দুইটি কারণ চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত , তথ্য অনুসন্ধান নয় বরং নির্যাতন চালানোই এখানে মূল উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়ত , জিজ্ঞাসাবাদ পরিচালনাকারী সংস্হার অদক্ষতা এবং অব্যবস্হা। মূলকথা হলো নির্যাতন চালিয়ে তদন্ত সহায়ক তথ্য আদায় করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে হাজার হাজার মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন জড়িত থাকে যায় উত্তর কেবলমাত্র সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তবে ভুলে গেলে চলবে না , জিজ্ঞাসাবাদ একটা নোংরা কাজ । সেখানে তথ্য সন্ধানে মানুষকে(বন্দী) অধঃপতিত , নিজের কাছে খাটো এবং সর্বোপরি মানসিকভাবে অবনমিত করা হয়। একই ঘটনা জিজ্ঞাসাবাদকারীর ক্ষেত্রেও ঘটে ! এটা এমন এক ধরনের নোংরা কাজ যা শুধুমাত্র স্বচ্ছ মানসিকতার মানুষের দ্বারাই পরিচালিত হওয়া কাম্য। যারা বিকৃত মানসিকতার অধিকারী তাদের এ পেশায় আসাটা ঠিক নয়।

বাস্তব প্রেক্ষাপট এবং একটি অনুকল্প

Intelligence analysts sythesize. They do not describe , they interpret. They render the complex into simple. Conclusion > Data ; 1+1 = 3 !

মানবাধিকার আমার এ লেখার বিষয়বস্তু নয়। আমার এই লেখায় আমি মুলত পেশাদার গোয়েন্দা দৃষ্টিকোন থেকে আটক এবং জিজ্ঞাসাবাদ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকব। ধরা যাক , ঢাকার একটি রাজনৈতিক দলের কিছু সংখ্যক সদস্য শতাধিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রেনেড সম্প্রতি সংগ্রহ করেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। গ্রেনেডের নাম ও ধরণ এবং কি উদ্দেশ্যে , ঠিক কারা ,কোথা থেকে, ঠিক কতগুলি গ্রেনেড সংগ্রহ করেছে সেটা এখনও জানা যায় নি। পরিস্থিতির গুরত্ব অনুধাবন করে এই অবস্থায় কাউন্টার টেররিজম উইংকে দায়িত্ব দেয়া হয় বিষয়টা যথাশীঘ্র খতিয়ে দেখতে। একই সময় পুলিশের একটা দল সিলেটে একটা গুদামের ভেতর থেকে মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত একটি গ্রেনেড রাখার বাক্স উদ্ধার করে। গুদামের মালিককে পাওয়া যায় নি। বিষয়টা সাথে সাথে ঢাকায় কাউন্টার টেররিজম উইংকে জানানো হয়। এমতাবস্থায় ওই গুদামের মালিককে আটক করা অপরিহার্য কেননা তাকে আটক করলেই জানা যাবে যে মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত একটি গ্রেনেড রাখার বাক্স তার কাছে কি করে এল এবং ঢাকার একটি রাজনৈতিক দলের কিছু সংখ্যক সদস্য শতাধিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রেনেড সম্প্রতি সংগ্রহ করেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে যে খবর পাওয়া গেছে, তার সাথে এই বাক্সের কোন যোগসূত্র আছে কি না। পুরো একদিন সার্ভেইলেন্স এবং রিকনেসন্স অপারেশন চালানোর পরে সেই ব্যক্তির অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হল এবং সেটা চট্রগ্রামে। সিদ্ধান্ত নেয়া হল যে , তাকে ( মফিজ মিয়া বলা যায়) আটক করে ঢাকায় ইন্টেরোগেশন সেলে নিয়ে আসা হবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। জিজ্ঞাসাবাদ পরিচালনা করবে কাবুল থেকে উড়িয়ে আনা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্হার একটি দল কিন্ত তাকে আটক করতে যাবে দেশীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্হার সদস্যরা – যদিও পুরো অভিযানের তত্বাবধান করবে মার্কিনীরা। এখন আমি আলোকপাত করার চেষ্টা করব যে এক্ষেত্রে আটক এবং জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কি ধরনের নীতিমালা এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া সাধারনত শুরু হয় গ্রেফতার দিয়ে। এর পর পদ্ধতিগত পর্যায়ে আছে আটকাদেশ , নির্জনতা বলবৎ পূর্বক সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা ( sensory stimuli) থেকে বঞ্চিত করা , কারাবাস অথবা সমধর্মী পদ্ধতি, ভয় ভীতি প্রদর্শন , দৌর্বল্য সৃষ্টি , বেদনা, চেতনানাশক পদার্থ এবং প্রণোদিত নির্ভরণ বা Induced regresion ।

আটক অভিযান

আটক অভিযানের ধরন এবং সময় জিজ্ঞাসাবাদকারী দলের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয় যাতে করে অভিযানের ধরণ এমন হতে হবে যাতে করে তা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত উপস্থিত হয়ে সর্বোচ্চ মানসিক অস্বস্থি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। যে মুহূর্তটায় গ্রেফতারের আশংকা সবচেয়ে কম থাকে এবং যখন মানসিক ও শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে – এরকম সময় আটক অভিযানের জন্য নির্বাচন করা হয়। সবচেয়ে আদর্শ সময় ভোরবেলায় কেননা এ সময় যে শুধু একজনকে হতভম্ব করে দেয়া সহজ , তা নয় , এ সময়টায় মানুষের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে বিরাজ করে। ভোরবেলায় কোন কারণে অভিযান চালানো সম্ভবপর না হলে পরবর্তী আদর্শ সময় সন্ধ্যা বেলা। চলবে।

তথ্যসূত্র :

১। Gannon, James – Stealing Secrets, Telling Lies: How Spies and Codebreakers Helped Shape the Twentieth Century. Washington, DC: Brassey’s, 2001
২। Herman, Michael – Intelligence Power in Peace and War. Cambridge, UK: Cambridge University Press, 1996
৩। Knightly, Phillip – The Second Oldest Profession: Spies and Spying in the Twentieth Century. New York: Penguin, 1988.
৪। O’Toole, G. T. A. The Encyclopedia of American Intelligence and Espionage. 1988
৫। ইন্টেলিজেন্স এবং কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের ওপর নেটো সশস্ত্র বাহিনীর বিবিধ এবং প্রাসঙ্গিক ফিল্ড ম্যানুয়ালস ও হ্যান্ডবুকস ।

সন্ত্রাসীদের হাতে বৈধ অস্ত্র!

 

সরোয়ার আলম
অঅ-অ+
চট্টগ্রামের লালখান বাজার ওয়ার্ড যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের নাম পুলিশের খাতায় আছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা আছে ২০টি। এক-এগারোর সময় পালিয়ে গিয়েছিলেন দুবাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবার ফিরে আসেন দেশে। বীরদর্পে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন অস্ত্র হাতে নিয়ে। দিদারুল লাইমলাইটে চলে আসেন গত বছরের ৪ মে। হেফাজতে ইসলামকে ঘায়েল করতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি চালান। পরদিন তাঁর সেই অ্যাকশনের ছবি প্রকাশিত হয় বিভিন্ন দৈনিকে। পুলিশ বলছে, দিদারুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দিদারুল দাবি করে আসছেন, এ সরকারের আমলেই তিনি শটগানের লাইসেন্স পেয়েছেন।
দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক। গুলশানে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। বিগত সরকারের আমলে একটি শটগান ও একটি রিভলবারের লাইসেন্স পেয়েছেন চঞ্চল। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের অন্তত দেড় ডজন মামলা রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দিদারুল ও চঞ্চলের মতো সারা দেশে দুই সহস্রাধিক দাগি সন্ত্রাসী দলীয় পরিচয় কাজে লাগিয়ে অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও একাধিক সন্ত্রাসী লাইসেন্স পেয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মহাজোট সরকারের আমলে পাঁচ বছরে সাত হাজার ১০০ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে এসব অস্ত্রের লাইসেন্সের সঠিক হিসাব নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
জানা গেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৯৫২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কয়টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তার প্রোফাইল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার হিসাব মিলেছে। এখনো ২০ হাজার বৈধ অস্ত্রের হিসাব মিলছে না। অভিযোগ রয়েছে, কোনো সরকারের আমলেই নীতিমালা মেনে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক তদবিরে যাকে-তাকে দেওয়া হচ্ছে লাইসেন্স; যদিও মন্ত্রণালয় ও পুলিশ কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাচাই-বাছাই ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের এসব লাইসেন্স পাওয়ার কথা নয়। তার পরও কেউ যদি পেয়ে থাকে, তদন্ত করে লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না।’ বৈধ অস্ত্রের মালিকরা কোনো ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বৈধ অস্ত্রের অপব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় লাইসেন্স দেওয়াসহ অস্ত্র ব্যবস্থাপনা কড়াকড়ি করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। পরে একটি নতুন নীতিমালা তৈরি করা হয়। নীতিমালা সংশোধন করার পরও অনেক অযোগ্য লোক অস্ত্রের লাইসেন্স পাচ্ছে। বিশেষ করে অপরাধীরা দলীয় পরিচয় কাজে লাগিয়ে সহজেই অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে নিচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে সাত হাজার ১০০ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্সপ্রাপ্তদের মধ্যে দুই সহস্রাধিক দাগি সন্ত্রাসী। বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লাইসেন্স নেওয়ার সময় যে ঠিকানা দেওয়া হচ্ছে, ওই ঠিকানারও হদিস মিলছে না।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যেসব অস্ত্রের হিসাব মিলছে না সেগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। অনেক কিলার বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। অস্ত্রের মালিক ও হস্তান্তরের ব্যাপারে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি।’
বৈধ অস্ত্রে অপরাধ : লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে মানুষ হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারদলীয় একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে। তাঁর বৈধ অস্ত্র দিয়ে তাঁরই দেহরক্ষীকে হত্যা করার অভিযোগটি এখন আদালতে বিচারাধীন। রাজধানীর মিরপুরে নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি করার সময় দেলোয়ার হোসেন নামে এক সন্ত্রাসীকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অনুসন্ধানে জানা যায়, দেলোয়ার নিজেকে আমদানি-রপ্তানিকারক পরিচয় দিয়ে ২০০৯ সালে অস্ত্রের লাইসেন্স নেন। অস্ত্রের জন্য আবেদন ফরমে তিনি যেসব তথ্য ব্যবহার করেছিলেন তার সবই ছিল ভুয়া। এমনকি তিনি যে টিন সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন, তাও ছিল নকল। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শ্রাবণ এন্টারপ্রাইজের ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওই নামে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নেই।
চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের বৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে নাজেহাল করার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন লাইন্সেস করা অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে জনতার ওপর গুলি চালিয়ে লাইমলাইটে চলে এসেছিলেন; যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত বছরের ২৯ জুলাই গুলশানে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল ও তারেক তাঁদের লাইসেন্স করা অস্ত্র ব্যবহার করেন বলে র‌্যাবের দাবি। তারেক এরই মধ্যে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন। আর চঞ্চল এখন রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছরের ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধের দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিল্কিও লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছিলেন। তাঁর নামেও দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। ঢাকায় বিএনপির সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সিরাজুল ইসলাম সেন্টু এখন আওয়ামী লীগের নেতা। কয়েক বছর আগে ফতুল্লায় বিসিক শিল্পনগরীতে এক মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় ফতুল্লার পঞ্চবটি মোড়ে বৈধ অস্ত্র দিয়ে ট্রাফিক পরিদর্শককে ধাওয়া দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৩ মে রাজধানীর ওয়ারীতে আশিকুর রহমান অপু হত্যাকাণ্ডে চারটি বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃত রমজানের কাছ থেকে তিনটি বৈধ অস্ত্র উদ্ধারও করেছিল পুলিশ। ২০১২ সালের ২৫ মে শান্তিবাগে একটি ফ্ল্যাটে খুন হন মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মিলন। তাঁর কাছ থেকে পুলিশ একটি অস্ত্র উদ্ধার করেছিল। ওই আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক মিলনের ভগ্নিপতি একটি টেক্সটাইল মিলের নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান। গত বছরের ২৪ জুলাই রাতে সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরীর বাসায় তাঁরই শটগানের গুলিতে আহত হন পৌর প্যানেল মেয়র সেলিম আহমেদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম হায়দার ও পৌর কর্মচারী আল আমীন। ২০১২ সালের এপ্রিলে নড়াইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রবিন তাঁর বৈধ অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছিলেন বিদ্যুৎ অফিসে। এ রকম আরো অনেক ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের তালিকাভুক্ত যেসব সন্ত্রাসীর বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স আছে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বরিশালের ভিপি জয়নাল, যুবলীগ ক্যাডার ফেরদৌস, ফেনীর একরামুল হক, আরজু, ছোট মুন্না, পিয়াস, কানকাটা ইরান, সিরাজুল ইসলাম, মাউরা বাবু, হেলাল, মাকসুদ, বশির আহমেদ রানা, অগা মিঠু, টাওয়ার সেলিম, বাদল, হোসেন, সাতক্ষীরার তানভীরুল ইসলাম রানা, নিখোঁজ লিয়াকত হোসেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ, আশিক, সুফিয়ান, মোহাম্মদপুরের কানকাটা সেন্টু, কুমিল্লার জসিম, আবিদুর রহিম, রুহুল আমিন, খুলনার হেমায়েত, জুলহাস, রবিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিপজল, আবু রুশদ, চট্টগ্রামের মামুন, নাছির প্রমুখ। নারায়ণগঞ্জের ত্রাস ও ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মমিনুল্লাহ ডেভিডেরও অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। ডেভিড পরে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন।
যেভাবে দেওয়া হয় লাইসেন্স : পিস্তল, রিভলবার ও শটগানের লাইসেন্স দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। অন্যদিকে বন্দুকের লাইসেন্স দিয়ে থাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এক ব্যক্তির নামে সর্বোচ্চ দুটি লাইসেন্স থাকার বিধান রয়েছে। লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, পেশা, বার্ষিক আয়, করদাতার শনাক্তকরণ নম্বর দাখিল করতে হয়। আবেদনকারীর নাম-ঠিকানা, পেশাসহ জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই ছাড়াও অতীত অপরাধের রেকর্ড যাচাই করে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এসব বিষয়ে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়। দুষ্কৃতকারী, সন্ত্রাসী বা ফৌজদারি আইনে সাজাপ্রাপ্ত কোনো অপরাধীকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম নেই।
জানা গেছে, বিধিমালায় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় বছরের পর বছর অস্ত্র না কেনার পরও লাইসেন্স বাতিল করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব সমস্যা নিরসনে নতুন নীতিমালার খসড়ায় এ-সংক্রান্ত একটি বিধান রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে তৈরি হচ্ছে প্রোফাইল : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অস্ত্রের প্রকৃত হিসাব না পাওয়ায় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খসড়া হিসাব তৈরির কাজ শুরু করা হয়। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখনো প্রোফাইল তৈরির কাজ চলছে। কিছু বৈধ অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখের ওপর হিসাব করা হয়েছে। এই হিসাব আরো দীর্ঘ হতে পারে। সন্ত্রাসীদের হাতে যাওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
অস্ত্রের হিসাব মেলাতে কমিটিও ব্যর্থ : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে জোট সরকারের আমলে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় জমা পড়া অস্ত্র এবং লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা অস্ত্রের তথ্যে ব্যাপক গরমিল ধরা পড়ে। তখনই সরকার অস্ত্রের প্রকৃত হিসাব বের করতে কয়েকটি কমিটি গঠন করেছিল। বৈধ অস্ত্রের হিসাবে গরমিলের জন্য চারটি কারণ চিহ্নিত করে সেসব কমিটি। কারণগুলো হচ্ছে, অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন না করা সত্ত্বেও বছরের পর বছর লাইসেন্সধারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া, লাইসেন্স প্রদানকারী জেলা কর্তৃপক্ষের দপ্তরে নবায়ন না করে অন্য জেলায় নবায়ন করা, স্বাধীনতার আগে অবাঙালিদের নামে দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল না করা এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে ব্যবহৃত বেহাত হয়ে যাওয়া বৈধ অস্ত্রের তালিকা তৈরি না করা। কারণ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে কিছু সুপারিশও করে কমিটি। তবে ওই সুপারিশ আমলেই নেয়নি তখনকার সরকার।
পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাচাই-বাছাই করে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। তদন্তে প্রমাণিত হলে অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া যেসব বৈধ অস্ত্রের হদিস নেই সেগুলোর ব্যাপারেও তদন্ত চলছে।’
নীতিমালায় যা আছে : নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, পিস্তল ও রিভলবারের লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীকে বছরে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা এবং শটগান বা রাইফেলের ক্ষেত্রে বছরে কমপক্ষে এক লাখ টাকার করদাতা হতে হবে। বর্তমানে সব ধরনের অস্ত্রের জন্য আবেদনকারীর যোগ্যতা হিসেবে বছরে দুই লাখ টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান রয়েছে। বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সমপদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সরকারের প্রথম শ্রেণীর স্থায়ী কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এবং বিমান ও নৌবাহিনীর সমপদমর্যাদা বা এর ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি আয়কর শর্তের আওতার বাইরে থাকবেন। জাতীয় দলের শ্যুটারদের ক্ষেত্রে জাতীয় শুটিং ফেডারেশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শ্যুটারদের নির্দিষ্ট শুটিং ইভেন্টের জন্য সর্বোচ্চ তিনটি অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে পারবে। কোনো বিদেশি নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

– See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/03/09/59948#sthash.JPyzxU1D.dpuf

বার কাউন্সিল ও এর অধিনে পরিক্ষা ব্যাবস্থা

বার কাউন্সিল, আইজিবীদের নিয়ন্ত্রনের একটি প্রতিষ্ঠান। আইনজিবী দের লাইসেন্স দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ। লাইসেন্স দেওায়ার জন্য আইনজিবীদের ৩ টি ধাপে পরিক্ষার সিড়ি পাড় হতে হয়।

প্রথম এ এমসিকিউ
২য় লিখিত 
৩য় ভাইভা

এবার আসি পরিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। আমাদের কাছ থেকে যে পরিমান টাকা নেওয়া হয় সে তুলনায় সুযোগ দেওয়া হয় না।সরকারী কলেজে সীট পরে, এক বেঞ্চ এ ৫ করে বসানো হয়। আশে পাশে নকলের সমারহ।দেখার কেও নাই।আমার এমসিকিউ পরিক্ষার সময় পিছনে এক ছাত্র লীগ নেতা কে স্যার রা প্রশ্ন দিয়ে দিলো।তাকে পরে মোবাইলে আন্স করে এসএমএস করে পাঠিয়ে দিচ্ছিলো। ওই লোকের হয়ে গিয়েছিলো

গত কাল হলো লিখিত পরিক্ষা, সেখানেও নকলের ছড়াছড়ি, দেখার কেও নাই।
ঢাকা কলেজ এবং তিতুমীর সরকারী কলেজে এর জন্য সিট পরিকল্পনা রাখা হয়। কিন্তু নকল ও কলেজের নেতাদের দাদাগিরি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে বার কাউন্সিল! এসব কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখা যায়, অনেকে প্রকাশ্যে বই বা নকল কপি রেখে, বিভিন্ন স্টাইলে নকল করে চলছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ঘনঘন বিনা অনুমতিতে হলে প্রবেশ করে এসব নকল কপি সরবরাহ করেছেন অনেক পরীক্ষার্থীদের। অনেকে আবার আগে থেকেই হাতে বই নিয়ে হলে প্রবেশ করে দেখে দেখে লিখছিলেন। অনেককে কানে হেডফোন বা মোবাইলের এয়ারফোন লাগিয়ে অপর প্রান্ত থেকে শুনে শুনে লিখতে দেখা গিয়েছে। বেশির ভাগ সময় দায়িত্ব থাকা শিক্ষকরা এবিষয়ে কিছুই বলেননি এমনকি এসব প্রতিরোধে বার কাউন্সিলের কর্মকর্তা বা প্রতিনিধিরাও কোন পদক্ষেপ নেননি।

আসলে বার কাউন্সিলের নেতারা রাজনিতি নিয়ে ব্যস্ত থাকাতে তারা কখনই এই পরিক্ষা বেবস্থায়র প্রতি কোন নজরি দেয় না ।একটা অকারজকারি প্রতিষ্ঠান এই বার কাউন্সিল। শুধু টাকা নেওয়াই এই প্রতিষ্ঠানের কাজ।আর আইন পেশা কে কুলুষিত করার পেছনে এই বার কাউন্সিল এর নেতাদের ভুমিকা অনেক।পরিক্ষায় নকল বন্ধ না করতে পারলে নিন্ম মানের শিক্ষারথিরা নকল করে পাশ করে কোর্টে গিয়ে কি করবে তা সহজেই বুঝা যায়। বার কাউন্সিলের নিষ্ক্রিয়তা আইন পেশার সম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছে