মঙ্গলে পাড়ি জমাবেন বাংলাদেশী লুলু


মঙ্গলে পাড়ি দেয়া প্রথম বাংলাদেশী নারী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছেন লুলু ফেরদৌস (৩৫)। প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলে এটা কোন প্রমোদ ভ্রমণ নয়। ডাচ নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ানের পৃষ্ঠপোষকতায় এটা মঙ্গলের উদ্দেশে ওয়ান-ওয়ে যাত্রা। মঙ্গলযাত্রা নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত তিনি। ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা ফেরদৌস সেই ৬ বছর বয়স থেকে নভোচারী হওয়া আর মঙ্গলে যাওয়ার স্বপ্ন লালন করে আসছেন। বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের প্রথম নারী বিমানচালক হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাকে বারবার জানিয়েছে একজন মেয়ে কখনও তাদের হয়ে বিমান চালাবে না। পরে কমার্শিয়াল পাইলট হওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানেও নারী হওয়ার কারণে প্রত্যাখ্যাত হন। তার পরও তিনি হাল ছেড়ে দেননি। বিদেশে পাড়ি দেয়ার জন্য দীর্ঘ ১১ বছর কাজ করে অর্থ সঞ্চয় করেন। ২০০৭ সালে বিমানচালনা বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০১২ সালে ‘এয়ার ট্রান্সপোর্টেশন এডমিনিস্ট্রেশন’ ডিগ্রি নিয়ে ওমাহার ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাসকা থেকে গ্র্যাজুয়েট হন। পরে তিনি নেব্রসকাতে নাসার গবেষণা সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। বর্তমানে তিনি এরোস্পেস সায়েন্সে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনে পড়াশোনা করছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে মঙ্গলগ্রহে মানববসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে মার্স ওয়ানের নেয়া উদ্যোগে আবেদন করেন। লুলু ফেরদৌস বিশ্বের ১০৫৮ জন আগ্রহী অভিযাত্রীদের মধ্যে একজন যারা বাছাইয়ের পর ২য় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মঙ্গলে ওয়ান-ওয়ে সফর কার্যক্রমে ২ লাখেরও বেশি মানুষ আবেদন করেছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত নানা বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হবে ২৪ জনকে। চূড়ান্ত ২৪-এ নির্বাচিত হন বা না হন তিনি উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে চান। তবে ওই মিশনটি তার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এক মিশন হতে পারে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। ফেরদৌস আরও বলেন, অবশেষে যদি মার্স ওয়ানের জন্য নির্বাচিত হয়েই যান তাহলে এটাই প্রমাণিত হবে যে কোন দেশের স্থানীয় সীমানার মধ্যে স্বপ্ন সীমাবদ্ধ নয়।
সূত্র: ওমাহা ওয়ার্ল্ড হেরাল্ড

জেনে নিন এজহার সম্পর্কে বিস্তারিত

1520700_543494415741878_941575980_n

 

এজাহার বা এফআইআর কী ও কেন এবং কিভাবে করবেন ?

এম.আর.ওয়াজেদ চৌধুরী(রায়হান)

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা কারণে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি অনেকেই ভালোভাবে না জানার বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে । বেশ কয়েক দিন আগে আমার গ্রামের এক বন্ধু কে প্রতিপক্ষ হত্যার উদ্দেশে রাস্তায় আক্রমণ করে । ভাগ্য ভালো আশেপাশের মানুষ এগিয়ে আসলে বেশ আহত অবস্থায় বেচে যায় । আমি খবর পেয়ে ফোন দিলাম । সে অচেতন থাকায় তার ছোট ভাই রিসিভ করল আর জানতে চাইলো কি করবে এখন । আমি বললাম থানায় গিয়ে আক্রমণকারীদের নাম ঠিকানা নিয়ে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ সহ একটা এজহার দায়ের করতে । কিন্তু সে জানেনা কিভাবে তা করতে হয় বা তার কি করা উচিৎ থানায় গিয়ে । এরকম অবস্থার স্বীকার হয়ে থাকেন অনেকেই । পারিবারিক সহিংসতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সহিংসতাও বেড়ে গেছে বহুগুণ । বাড়িঘর – দোকান- ব্যবসা বাণিজ্য – নিজের জীবন সব কিছুই যে কোন মূহুর্তে দূর্ঘটনার তথা হামলা- আক্রমণের স্বীকার হচ্ছে দেশজুড়ে । ঘটনা যদি ঘটেই যায় এবং আপনি যদি আইনের আশ্রয় নিতে চান তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটা হলো “এজহার” ।

বিস্তারিত :

* এজহার কি ? সহজ কথায়, অপরাধ বা অপরাধমূলক কোনো কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য থানায় যে সংবাদ দেওয়া বা জানানো হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর(ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বলে। প্রকৃতপক্ষে, এজাহারের মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়। কারণ রাস্ট্র পক্ষের যে কোন মামলার আইনি প্রক্রিয়ার শুরু হয় এই এজহারের মাধ্যমে । অর্থাৎ যে কোন মামলার প্রথম ধাপ হল এই এজহার।

* এজাহার কাকে করতে হবে ?

√ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে;

√ তাঁর পরিবারের কেউ ; কিংবা

√ অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন।

* আবেদন কোথায় করতে হবে?

আবেদনটি দাখিল করতে হবে নিকটস্ত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অথবা ওসি র নিকট ।

* দেওয়ার পদ্ধতি কি ?

এজাহার লিখিত ও মৌখিক দুই ভাবে দেওয়া যায় । তবে লিখিত দেওয়াটাই ভালো । ঘটনার পূর্ণ বিবরণ, ঘটনার স্থান, সময় ,কীভাবে ঘটনা ঘটল, কেন ঘটল, দায়ী ব্যক্তি তথা আসামির নাম _ঠিকানা জানা থাকলে তার পূর্ণ বিবরণ স্পষ্টভাবে লিখতে হবে । এজাহারকারীর পূর্ণ ঠিকানা ও সই থাকতে হবে, যদি লিখিত বা কম্পোজ আকারে দেওয়া হয় । যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেওয়া হয়,তাহলে এজহারকারীর বক্তব্য থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সঠিকভাবে লিখবেন। লিখিত আকারে নিয়ে এজাহারকারীকে তা পড়ে শোনাবেন । তারপর অভিযোগকারীর স্বাক্ষর নিবে। এবং যে কর্মকর্তা এজাহার লিখবেন, তিনিও সিল ও সই দেবেন। একটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যে, কখনো এজাহার করতে যেন দেরি না হয়। অনেক সময় মামলার গ্রহণ যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে । কারণ দেরিতে এজাহার করলে মামলার গুণাগুণ নষ্ট করতে পারে। যার ফলে অভিযোগকারী ন্যায়বিচার না পাওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। যদি কোনো কারণে এজাহার করতে দেরি হয়েই যায় তাহলে তার সুনির্দিষ্ট কারণসহ আবেদনে উল্লেখ করতে হবে।

* পুলিশ কি করবে ?

এজাহার করার পর যদি উল্লিখিত অপরাধ আমলযোগ্য কিংবা এমন কোনো ঘটনাসংক্রান্ত হয়, যা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিলে আসামিদের ধরা যাবে বা শনাক্ত করা যাবে, বা করা উচিত ,সে ক্ষেত্রে পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে বা ঘটনার তদন্ত করবে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই ( ধারা : 156 ) আর যদি,এজাহারে বর্ণিত অপরাধ বা বিষয়টি আমলযোগ্য না হয়, তবে পুলিশ এ- সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নেবে । (ধারা: 155) উভয় ক্ষেত্রে মামলার তদন্ত অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিয়োজিত কোন ব্যক্তি নিম্মোক্ত ধাপগুলো সাধারণত পালন করে থাকেন ; (ক) ঘটনাস্থলে যাওয়া । (খ) মামলার ঘটনা এবং অবস্থা । ascertain করা বা অবগত হওয়া । (গ) সন্দেহভাজন অপরাধী বা অপরাধীদের বের করা এবং গ্রেপ্তার করা । (ঘ) অভিযুক্ত অপরাধ সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করা । যেমন :- সংশ্লিস্ট ব্যক্তিসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি নেয়া ও জিগ্গাসাবাদ করা ; জব্দ তালিকা তৈরি করা ; case ডায়েরি তৈরি করা ; 173 ধারা অনুযায়ী চার্জশিট তৈরির ব্যবস্থা করা ।

ফৌজদারি কার্যবিধির 154 , 190 ,200 ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে।

 

লেখক : ছাত্র । আইন অণুষদ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্রগ্রাম ॥

নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরনের পরিবর্তন চায় তরুণ সমাজ

1509105_840843155942067_1473876229_n

বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর যেখানে অর্ধেক নারী সেখানে তাদের সহযাত্রী করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায়। নারীদেরকে পেছনে রেখে, নির্যাতন করে, অধিকার বঞ্চিত করে আর যাই হোক, সমাজের উন্নতি করা যাবে না, কিংবা বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। বাহ্যিকভাবে আমরা আধুনিক হতে পেরেছি, তবে  আচরন  এখনো  পুরোপুরি  সংকীর্ণতামুক্ত হয়নি। তাই প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে  সংরক্ষিত আসন ৯টি (নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য)। তাহলে গড়ে নারীদের জন্য মাত্র ৩ টি আসন রয়েছে এসব পরিবহনে।এতে করে নারীদের সম্মান বাড়েনি বরং কখনও কখনও তাদেরকে কটাক্ষ করা হয়, অনেক সময় বাসে মহিলাদের সিট নেই বলে তাদের বাসে উঠানো হয়না। এছাড়াও ঢাকা শহরে পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের পর পুরুষের ক্ষেত্রে ২/৩ টাকা আর নারীদের ক্ষেত্রে ৫ টাকা দিতে হয়। অর্থ সমস্যা না থাকা মানুষেরা বিলাসবহুল শপিং মল খুঁজেন, কিন্তু কেউ ভাবেনা তাদের কথা যাদের কাছে ৫টি টাকা উপার্জনও একটি সংগ্রাম। ভেবে দেখা দরকার, একটি টোকাই মেয়ে শিশুর কথা। যার দৈনিক আয় ৩০-৩৫ টাকা। সে টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজনে যদি প্রতিবার ৫ টাকা দেয় তবে তার উপার্জনের কত শতাংশ ব্যয় হলো? সমাজের এমন অদেখা বৈষম্যগুলোকে আর্ন্তজাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক ব্যাতিক্রমী মানববন্ধন করে সিরাক-বাংলাদেশ, জাস্টিস ফর বাংলাদেশ ও অরুণোদয়ের তরুণ দল। ব্যাতিক্রমী এই মানববন্ধনের অধিকাংশ অংশগ্রহনকারী ছিলেন পুরুষ এবং এ প্রসঙ্গে আর্ন্তজাতিক সংস্থা উইমেন ডেলিভার কর্তৃক নির্বাচিত গ্লোবাল ইয়ং লীডার এস এম সৈকত বলেন, অধিকাংশক্ষেত্রেই নারীর প্রতি বৈষম্য, নির্যাতনের অভিযোগের তীর যেখানে পুরুষের দিকে সেখানে পুরুষদেরই এগিয়ে আসতে হবে পরিবর্তনের মিছিলে। তিনি আরও বলেন, আজকের দিনের প্রত্যাশা হওয়া উচিত যেন আগামীকালের সংবাদমাধ্যমে এমন কোন ঘটনা চোখে না পড়ে যে একজন নারীও নির্যাতনের কিংবা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। আর এ পরিবর্তনের অগ্রপথিক হতে হবে পুরুষদেরকেই।

জাস্টিস ফর বাংলাদেশের কর্মসূচী সমণ¦য়ক সৈয়দ মাজারুল ইসলাম বলেন, নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার সম্মানটুকু বুঝিয়ে দিলে পুরুষের সক্ষমতা কমে যায় না। সর্বক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে অর্থ উপার্জনের হার অনেক বেড়ছে দিনে দিনে তবে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই পিছিয়ে। পারষ্পরিক সম্মান এবং সহযোগীতায় দূর করতে হবে নারী-পুরুষের এই বৈষম্য।

সিরাক বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মানজুদা আক্তার বলেন, নারীরা সমধিকারের কথা বললে বিদ্রুপের স্বীকার হতে হয়, তাদের শারীরিক সক্ষমতার প্রশ্নও শুনতে হয়। তাই মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরবর্তন না হলে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনসেফা তৃপ্তি বলেন, বৈষম্যের চিত্রগুলো খুব সহজ। একজন নারীকে তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হয়, যেটা একজন পুরুষকে করতে হয় না।  রাস্তায় যদি কেউ আপনার  মা, বোন, স্ত্রী ও কণ্যার  দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন কেউ বিনা পয়সায় চিড়িয়াখানার কোন জন্তুকে দেখছে তখন আপনার কেমন লাগবে? তবে অন্য কারো বেলায় আপনার দৃষ্টি কেন সংযত থাকবে না? পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এর যাত্রাকে আরো বেগবান করতে হবে।

অরুণোদয়ের তরুণ দলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, রাষ্ট্র থেকে ব্যাক্তিপর্যায়ে অনেকক্ষেত্রেই নারীর প্রতি বৈষম্য রয়েছে। এ বৈষম্য দূরীকরণে নারী ও পুরুষের সম-অংশগ্রহনই সমতা নিশ্চিত করবে।

তরুণদের এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন বিএইচইআরডির চেয়ারম্যান মো.আদনান সিকদার, ক্যাপিটল হোমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম খাইরুল ইসলাম, শাপলা সংস্থার মহাসচিব ইঞ্জি:মো. মোস্তাফিজুর রহমান, আশ্রয় সংস্থার রুমেনা আফরোজ সেতু, দামাল বাংলা’র সম্পাদক জাহিদুল আলম আল-জাহিদ, ন্যায়ের আলো সংস্থার নাজমুল হোসাইন, বিএইচআরএলএস এর পরিচালক আফসানা জেরিন খান, সমাজসেবী আয়েশা সিদ্দিকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহান আরা, সোহেল প্রামানিক, আব্দুর রাজ্জাক, কাইরোস সোসাইটির রিজিওনাল প্রেসিডেন্ট গোলাম কিবরিয়া, অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান, বিসিএইডআরডি’র নির্বাহী পরিচালক মাহাবুল হক, এসএসইউএফ এর মাধব চন্দ্র দাস, অরুণোদয়ের তরুণ দলের মো.তাওহিদুল ইসলাম, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. হোসাইন, মো. আনোয়ার, মো.হৃদয়, মো.সোহেল, সজিব, সিরাক-বাংলাদেশের মেহেদী হাসান, কামাল হোসেন, আবু সাঈদ মো.সোহেল প্রমুখ।

1527125_840828299276886_1272831620_n (1)

1920317_840829062610143_504553302_n

নারী তুমি কোথায় নিরাপদ?

নারী তুমি কোথায় নিরাপদ? না ঘরে না বাইরে না বাবা মা র কাছে। আমাদের  সমাজ বেবস্থা  নারী দের আজ ও সম্মন দিতে পারে নাই। একটা  মেয়ে জন্মানোর   আগে  থেকে ই  মা বাবা র  রোষানলে  পরে।অনেকে মেয়ে হবে সুনলেই এব্রশোন করিয়ে ফেলে। কারো পরিবারে ছেলে সন্তান না হলে পর পর ২ টা বা ৩ টা মেয়ে হলেই স্ত্রি র উপরে নেমে আসে নির্যাতন । তারা হয়তো যানে না সন্তান মেয়ে হবে না ছেলে হবে তা নির্ভর  করে ছেলে দের উপর মেয়েদের উপর না।এইভাবেই জন্মের পূর্বের  থেকেই মেয়ে রা অত্যাচারের  স্বীকার  হয়।
আমাদের সমাজে মেয়েদের কে বোঝা  মনে করেন।তারা মনে করে একটা  মেয়ে কে লেখা পড়া  করিএয়া কি লাভ?বিয়ে করে পরের বাড়ি চলে যাবে।কিন্তু একটা শিক্ষিত মা ই পারে তার পরিবার কে ভাল মতো চালাতে।আমাদের সমাজে শুধু দরিদ্র পরিবারে মেয়ে দের নির্যাতন  করা হয় তা নয়, ধনি পরিবারে ও চলে নারির উপর অত্যাচার। বেশ কিছু দিন আগে পত্রিকায় পরেছিলাম গুলশানের এক ধনি পরিবারের ছেলের বৌ কে খওয়ার সাথে বিষ মিলিয়ে খওয়ায়।
এইবার আসি  ঘরের বাইরের নির্যাতন এর বাপারে। এখন জা যুগ পরেছে যে একটা ৩ বছরে র বাচ্চা ও নিরাপদ না।পত্রিকা খুলেই দেকা যায় ৩ বছরের বাচ্চা ধর্ষণের স্বীকার।  কত টা পশু হলে একটা শিশু বাচ্চা কে ধর্ষণ করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।ইভ টিজিং,এসিড নিক্ষেপ এর মত  জঘন্য  অপরাধ ঘটে ।
কর্ম ক্ষেত্রেও  মেয়ে দের পরতে হয় চরম  ভগান্তি তে।মেয়ে  দের কেও  বসের ভগের স্বীকার হতে হয় অনেক খেত্রেই।আর বসের কথা না শুনলে  চাকরী হারাবার ভয়।অনেকে সম্মানের ভয়ে চুপ থাকে।তারপর ও যদি প্রকাশ পেয়ে গালে এই সমাজ পরিবার মেয়ে টাকে দোষ দিতে একটু ও কার্পণ্য করে না।বাবা মা বলবে আরো ত মেয়ে আছে তাদের সাথে তো এমন হয় না,তোর সাথে হল কেনো?জামন টা দেখেছিলাম টাঙাইলের  গাং রেপের স্বীকার  মেয়ে টির খেত্রে।বাবা তাকে মেরে বাসা থেকে বের করে দেয়
মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়ে হয়ে জন্মানোই পাপ। আমাদের ইসলাম ধর্মে কিন্তু মেয়ে দের অনেক সম্মান দেওা হয়েছে।কিন্তু আমরা তা মানি না।মাঝে মাঝে মনে হয় এই সমাজ পতি দের  চিৎকার কার করে বলি  তুম্রা যে নারী কে অপমান কর সেই ্নারী না থাকলে তুম্রা পুরুষ জাতি ও থাকতা না,কারন এই নারী শত কষ্টে তোমাকে জন্ম দেয় এবং লালন পালন

চোখ বেঁধে তুলে নেওয়া হলো তিন সহোদরকে

pic-24_59366

ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে গ্রেপ্তারের কথা বলে তিন সহোদরকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের একজন দশম শ্রেণীর ছাত্র। গত বুধবার শেষরাতে উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের ভায়াবহ গ্রামে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিন সহোদর হলো, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আবু হানিফ (২২), এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাজমুল হক (২০) ও দশম শ্রেণীর ছাত্র ছানোয়ার হোসেন (১৪)। তাদের বাবা আসাদ উল্যাহ মুন্সী একজন কৃষক। তিনি ও তাঁর স্ত্রী এ ঘটনায় আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। ঘটনার সময় ‘হাতে অস্ত্র, পরনে কালো পোশাক ও মাথায় কালো কাপড়’ বাঁধা লোকদের কাছে তাঁরা জানতে চান, কেন তাঁদের ছেলেদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁদের জবাব দেওয়া হয়, ‘পরে জানতে পারবেন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরিবারের লোকজন তিন সহোদর সম্পর্কে ভালুকা থানা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর র‌্যাব কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে তাদের জানানো হয়। পরিবারের সদস্যরা দাবি করে, তিন ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তারকারীরা নিজেদের র‌্যাবের লোক বলে পরিচয় দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে একসঙ্গে তিন ভাইকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, ওই তিন ভাই নিরীহ প্রকৃতির, কখনো কোনো ঝামেলায় কাউকে জড়াতে দেখা যায়নি। ভালুকা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, পরিবারটির কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ছেলেদের বাবা ও তাঁর সঙ্গে থানায় আসা লোকদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁদের বর্ণনা শুনে অপারেশনটি র‌্যাবের বলেই তাঁর ধারণা। ওই ঘটনা নিয়ে তিনি র‌্যাব, ময়মনসিংহের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। গতকাল সকালে উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে ভায়াবহ গ্রামে ওই বাড়িতে গেলে হাহাকার করে ওঠেন ছেলেদের মা মজিদা খাতুন। আগের রাতের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি গরি (ঘড়ি) চিনি না। তবে রাইত তিনডা অইব। ঘরের দরজাত ধাক্কা দেয়া দরজা খুলবার কইতাছে। কিন্তু আমরা দরজা খুলছি না। ডরাইতাছি, এত রাইত, কেডা আইল। ডাহাইত মাহাইত নাকি। আমি জিগাইছি, আমনেরা কেডা, এত রাইতে ঘরের দরজা খুলবার কইতাছুন কের লাইগ্যা? তারা কইল, আমরা আইনের লোক। এই কতা কইয়া আমার বড় পুলা আবু হানিফ যে ঘরে থাহে হেইঘরের দরজাডা ভাংইগ্যা তারে ঘরেত্বে বাইর কইরা আনছে। পরে হেরে দেআ ডাহাইয়া আমার ছুডু দুই পুলা নাজমুল হক আর ছানোয়ার যে ঘরে থাকে হেই ঘরের দরজা খুলাইয়া হেই দুইজুনরে বানছে।’
মজিদা খাতুন বলেন, ‘আমার পুলা তিনডারে যহন দইরা বাইন্দা ফালাইছে তহন আমি ঘরের দরজা খুইল্যা বাইর আইয়া তাগরে জিগাইছি, আমনেরা কেডা। আমার পুলাগরে বানছুইন কেআ? তহন তারা কইল, আমরা আইনের লোক। পরে সব জানবার পারবাইন। এই সময় আমার মাতা ঠিক আছিল না। দৌর দেআ আমার ভাশুররে ডাক দিবার যাইবার চাইছি, কিন্তু হেরা আমারে যাইবার দিছে না।’
তিন সন্তানকে তুলে নেওয়ায় আতঙ্কিত মা মজিদা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। সবার বড় মেয়ে আয়েশা বিবাহিত, স্বামীর বাড়িতে আছেন। বড় ছেলে কামরুল হাসান সাত-আট বছর ধরে সৌদি আরবপ্রবাসী। ধরে নিয়ে যাওয়া মেজো ছেলে আবু হানিফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তিনি গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির প্যান্ডোলা সোয়েটার কারখানায় চাকরি করেন। আরেক ছেলে নাজমুল গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। এবার আবারও পরীক্ষা দেবে। আরেক ছেলে দেলোয়ার শ্রবণ প্রতিবন্ধী। সে সংসারের কাজকর্ম করে। আর ধরে নিয়ে যাওয়া ছোট ছেলে ছানোয়ার ভালুকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। তিনি জানান, আবু হানিফ গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) কর্মস্থল থেকে বাড়িতে আসেন। তাঁর চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর বাবার কথায় জমির আগাছা পরিষ্কার করার জন্য রয়ে গেছেন। তিনি বলেন, বুধবার রাত ৩টার দিকে কালো পোশাক পরা কিছু লোক তাঁর তিন ছেলেকে চোখ বেঁধে নিয়ে গেছে। তিনি তাদের একজনের কাঁধে বন্দুক দেখেছেন।
ছেলেদের বাবা আসাদ উল্যাহ মুন্সী জানান, বাড়িটি তিনি নতুন করেছেন। পাশেই পুরনো বাড়ি। পুরনো বাড়িতেই রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া চলছিল। রাতে নতুন বাড়িতে থাকা শুরু করেছিলেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, তাঁর ছেলেরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বা তাদের নামে কোনো মামলা-মোকদ্দমাও নেই। তাঁর সঙ্গেও জমিজমা বা অন্য কিছু নিয়ে কারো সঙ্গে বিরোধ নেই। ঘটনার সময় প্রথমে তিনি ভয়ে ঘর থেকে বের হননি। পরে ছেলের ঘরের দরজা ভেঙে ফেললে বের হয়ে আসেন। ছেলেদের ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে বলা হয়, ‘সকালে জানতে পারবেন।’ পরে তারা তাঁকে আটক করে রেখে ছেলেদের প্যান্ট পরিয়ে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। বিষয়টি তিনি ভালুকা থানার পুলিশকে জানিয়েছেন। তাঁর প্রতিবেশী ডা. সুবল চন্দ্র রায় ওই তিন ভাই ও পরিবারটি সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এরা শান্ত প্রকৃতির মানুষ। কোনো ঝামেলায় জড়ায় না।’ আসাদ উল্যাহ মুন্সীর ভাতিজা আমিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর ওই তিন ভাই খুবই সহজ-সরল। তারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। ঘটনার রাতে চাচার নতুন বাড়ির ঘরের দরজা ভাঙার শব্দ পেয়ে তিনি ওই বাড়িতে ছুটে যান। ওই বাড়িতে যাওয়া মাত্রই কালো জামা, কালো প্যান্ট ও মাথায় কালো কাপড় বাঁধা চারজন লোক তাঁর গতি রোধ করে নিজেদের র‌্যাবের লোক বলে পরিচয় দেয়। তাদের সবার সঙ্গে অস্ত্র ছিল। ওই সময় তিনি তাঁর ভাইদের অপরাধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলে, ‘পরে জানতে পারবেন।’
তিন ভাইয়ের খালাতো ভাই সালাউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার ওই ভাইয়েরা লেখাপড়া আর খেলাধুলা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। তারা খুবই নিরীহ প্রকৃতির মানুষ।’
গতকাল সকালে ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায় এলাকার অনেক মানুষের ভিড়। তারা রাতের ঘটনা সম্পর্কে জানতে এসেছে। গ্রামবাসীর অনেকেই জানায়, ঘটনার সময়, ফজরের নামাজের আগে আগে এলাকার অনেকেই দূর থেকে কালো পোশাক পরিহিত কিছু লোককে ওই তিনজনকে নিয়ে যেতে দেখেছে। কিন্তু তারা সামনে এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। এ ঘটনায় তারা ভীত হয়ে পড়েছে। তাদের কয়েকজন বলে, অপরাধী হলে যে কাউকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেকোনো সময় ধরে নিয়ে যেতে পারে। তবে বিষয়টি স্থানীয় থানার পুলিশ অবগত থাকলে ভালো হয়।
ওই ঘটনার পর গতকাল সকালে পরিবারটির পক্ষ থেকে র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-১৪-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছারুয়ার জাহান এমরান কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন, র‌্যাবের পোশাক পরা অস্ত্রধারী কিছু লোক তাঁর ইউনিয়নের ভায়াবহ গ্রামের আসাদ উল্যাহ মুন্সীর তিন ছেলেকে গাড়িতে করে নিয়ে গেছে। পরে র‌্যাব গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ওই ছেলেদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, পরিবারটিকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। তারা নিরীহ প্রকৃতির মানুষ।
ভালুকা মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে জানান, ওই পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়েছে। তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। ওই তিনজনের ট্রেস পাওয়া না গেলে আপাতত জিডি নিয়ে পরে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের এসআই রুহুল কুদ্দুস তালুকদার কালের কণ্ঠকে জানান, বুধবার রাতে ভালুকায় ডিবি পুলিশের কোনো অভিযান হয়নি।
ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছরোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল সকালে ঘটনাটি জানার পরপরই তিনি ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ময়মনসিংহ র‌্যাব অফিস থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, র‌্যাব-১৪ ওই এলাকায় এ জাতীয় কোনো অপারেশন করেনি। বিষয়টি তাঁরা দেখছেন এবং এ ব্যাপারে এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য বলেছেন।
ওই ঘটনায় গত রাতে ভালুকা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার প্রক্রিয়া চলছিল।

পল্লবী থানায় নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে বাঁচানোর চেষ্টা

রাজধানীর পল্লবী থানায় জনি নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এসআই জাহিদকে বাঁচানোর
চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে দুই পক্ষের মারামারিতে জনির মৃত্যু হয়েছে বলে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। অথচ নিহত জনির পরিবার ও স্থানীয় লোকজন বলছে, ঘটনার দিন সেখানে দুই পক্ষের কোন মারামারির ঘটনাই ঘটেনি। পুলিশও এখন পর্যন্ত কথিত কোন প্রতিপক্ষকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এঘটনায় গত বুধবার নিহতের মা খুরশিদা বেগম বাদি হয়ে এসআই জাহিদসহ তিন পুলিশ সদস্য, পুলিশের কথিত সেই সোর্স সুমন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। অপর দুই পুলিশ সদস্য হলেন এসআই শোভন কুমার সাহা ও এএসআই বাতেন। শোভন কুমার পুলিশের দায়ের করা প্রথম মামলার বাদি। মানবধিকার সংগঠন ব্লাস্ট এই মামলায় আইনগত সহায়তা দিচ্ছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগের মামলার সঙ্গে ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে থানা হেফাজতে নির্যাতনের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মিরপুর জোন ও ডিএমপি সদর দপ্তরের পৃথক দু’টি দল ঘটনাটি তদন্ত করছে। তবে ঘটনার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনও তদন্ত কমিটিই এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এছাড়া খুনের দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার তো দূরের কথা তার সহযোগী পুলিশ সোর্স সুমন, রাসেল ও সোহেলকেও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তারের আগে কমিটির তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হতে হবে। অন্যদিকে তিন সোর্সকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা পালিয়ে গেছে।
গত ৮ই ফেব্রুয়ারি শনিবার ঘটনার দিন বিল্লাল নামে এক যুবকের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে পল্লবী থানার এসআই জাহিদের সোর্স সুমনের সঙ্গে জনির বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় সুমনকে একটি চড় মারে জনি। এর প্রতিশোধ নিতেই সুমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসআই জাহিদকে ঘটনাস্থলে ডেকে নেয়। এসআই জাহিদ ঘটনাস্থল থেকে জনি, ছোট ভাই রকি, ফয়সাল, রাজন, টিটুসহ আটজনকে ধরে নিয়ে যায়। সবাইকে থানার সামনে ও ভেতরের দোতলায় নিয়ে বেধড়ক পেটায়। এতে অসুস্থ হয়ে পরদিন সকালে মারা যায় জনি।
মারামারির ঘটনা সাজানোর চেষ্টা: সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনির মৃত্যুর পরপরই ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য চেষ্টা শুরু করে পল্লবী থানা ও মিরপুর জোনের পুলিশের কর্মকর্তারা। জনির মৃত্যুর পর পল্লবী থানার পুলিশ তার পরিবারের সদস্যদের না জানিয়েই একটি মামলা করে। থানার এসআই শোভন কুমার দাশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ইরানী ক্যাম্পে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি চলছিল বলে উল্লেখ করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, আনুমানিক শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মারামারি শুরু করলে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এতে অন্তত ২০-২৫ জন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে জনি, রকি, ফয়সাল, রাজন, টিটুসহ আটজনকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে। কিন্তু মারামারির ঘটনায় দেশীয় অস্ত্রধারীদের বাদ দিয়ে আহতদের গ্রেপ্তার করার কারণ জানতে চাইলে মামলার বাদী এসআই শোভন কুমার সাহা বলেন, সামনে যাদের পাওয়া গেছে তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহতের পরিবারকে বাদ দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার কারণ জানতে চাইলে এসআই শোভন কুমার সাহা বলেন, থানায় মামলা হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুরো ঘটনা আড়ালের জন্যই পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। একই ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা আর কোন মামলা যাতে না করতে পারে এ জন্য মামলাটি করা হয়েছিল। পরে নিহতের পরিবারের চাপে পুলিশ আগের মামলার সঙ্গে সম্পূরক একটি এজাহার গ্রহণ করে। এদিকে সরজমিন পল্লবীর ইরানী ক্যাম্প ও রহমত ক্যাম্পের একাধিক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের কথিত দুই পক্ষের মারামারির কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ইরানী ক্যাম্পের বাসিন্দা আবদুস সালাম নামে এক যুবক জানান, সেদিন ক্যাম্পে কোন মারামারির ঘটনাই ঘটেনি। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় পুলিশের সোর্স সুমনকে একটি চড় মেরে বের করে দেয়া হয়েছিল। এর বেশি কিছু ঘটেনি। কিন্তু হঠাৎ পুলিশ এসেই তাণ্ডব শুরু করে দেয়। বিল্লাল নামে যেই যুবকের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। তার বড় ভাই কামাল জানান, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান নিয়ে কোন মারামারির ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় তাকে চড় মারার কারণে এসআই জাহিদকে ডেকে এনে সবাইকে ধরিয়ে দেয়।
একই ঘটনায় আটক, আলাদা ঘটনায় চালান: পল্লবীর ইরানী ক্যাম্পের ওই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে একই ঘটনায় আটজনকে পুলিশ আটক করলেও তিনজনকে আলাদা ঘটনায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলার কাগজপত্র ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন ইরানী ক্যাম্প থেকে জনি, রকি, ফয়সাল-১, টিটু, রাজন, জাভেদ, ফয়সাল-২ ও ইমরানকে একসঙ্গে আটক করে পুলিশ। থানায় নিয়ে যাওয়ার পর এসআই জাহিদ প্রথম পাঁচজনকে নিজের তত্ত্বাবধানে রাখেন। বাকি তিন জনকে অপর এক এসআইয়ের তত্ত্বাবধানে দেন। এসআই জাহিদ তার সঙ্গীয় দুই এএসআই রশিদুল ও কামরুজ্জামান এবং নজরুল নামে দুই কনস্টেবল নিয়ে থানার দোতলায় গিয়ে জনি, রকি, ফয়সাল-১, রাজন ও টিটুর ওপর নির্মম নির্যাতন চালান। এতে পরদিন সকালে জনি মারা গেলে অন্যদের ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এছাড়া একই সময় জাভেদ, ফয়সাল-২ ও ইমরানকে আটক করা হলেও স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের কথিত পাঁচআনি (নন কগনিজেবল) মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিল্লাল নামে যে যুবকের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে তাদের আটক করা হয় সেই বিল্লালের ভাই কামাল জানান, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে সবাইকে একসঙ্গে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ভোরে তিনি থানায় যোগাযোগ করলে জনি বাদে অন্যদের ছেড়ে দেয়ার জন্য বাদশা নামে এক পুলিশ কনস্টেবল তার কাছ থেকে ৬০০০ টাকায় চুক্তি করে। তাদের পাঁচআনি মামলায় আদালতে পাঠানোর কথা বলে কনস্টেবল বাদশা। এমনকি তিনি নিজেই নিজেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আদালত থেকে জাভেদ, ফয়সাল-২ ও ইমরানকে ছাড়িয়ে দেন। ভুক্তভোগী জাভেদ বলেন, আটজনকে একসঙ্গে পুলিশ ধরলেও তাদের তিনজনকে প্রথম থেকেই লকআপে রাখা হয়। আদালতও তাদের তিনজনকে একসঙ্গে ছেড়ে দেয়। আদালত থেকে মুক্তির প্রক্রিয়ায় তার ভাই রুস্তম করেছেন বলে তিনি জানান। জানতে চাইলে রুস্তম জানান, কামালের মাধ্যমে এক পুলিশের সঙ্গে ৬০০০ টাকায় তাদের চুক্তি হয়েছিল। ছয়জনকে ছাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু তিনজনকে ছেড়ে ওই পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল বাদশা) তাকে বলেন, ‘তিনজনকেই নিয়ে যান। অন্যদের আলাদা মামলায় পাঠানো হয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার কনস্টেবল বাদশা টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পাঁচআনি মামলায় (৮৪ বা ৮৫ ধারা) গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠালে অল্প টাকা জরিমানা করা হয়। এই খরচের জন্য ৬০০০ টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা ৪৫০০ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের ৮৬ ধারায় আদালতে চালান করা হলে পুরো টাকা আদালতে জরিমানার অর্থ হিসেবেই ব্যয় হয়েছে। তিনি নিজে কোন টাকা নেননি বলে দাবি করেন। কনস্টেবল বাদশা বলেন, সবাইকে একসঙ্গে আটক করা হয়েছে- কেন তাদের আলাদা আলাদা মামলায় পাঠানো হয়েছে তা এসআই জাহিদ জানেন। তার নির্দেশেই আলাদা করে পাঠানো হয়েছিল।
সাত দিনের তদন্ত, ২৫ দিনেও শেষ হয়নি: পল্লবী থানায় আলোচিত এই ঘটনায় ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু ঘটনার ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল পর্যন্ত তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়নি। কমিটির সদস্যরা এ পর্যন্ত নিহতের পরিবার, নির্যাতিতদের, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বিল্লাল ও কামালসহ ২০-২২ জন সদস্য এবং প্রায় ৩০-৩২ জন পুলিশ সদস্যের বক্তব্য নিয়েছেন। এমনকি আহত জনিকে যেই হাসপাতালে নেয়া হয়েছে কালসীর সেই আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকার বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য ডিবি (পশ্চিম) এডিসি সাইফুল ইসলাম জানান, সবার বক্তব্য নেয়া হচ্ছে। এজন্য তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে একটু সময় লাগছে। এদিকে মিরপুর জোনের পুলিশের নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে সেই কমিটিও এখনও তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। কমিটির সদস্য পল্লবী জোনের এসি কামাল জানান, তদন্ত চলছে। সাক্ষ্য প্রমাণ নেয়া হচ্ছে। এসব শেষ হলেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
অপেক্ষা ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টের: পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে নিহত জনির গায়ে অসংখ্য জখমের চিহ্ন ও নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী থাকলেও মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার দিন জনি মদ পান করেছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এটি নিশ্চিত হওয়া গেলে মদ পানে জনির মৃত্যু বলে চালানোর চেষ্টা করা হতে পারে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, বিহারী ওই যুবক মদ খেয়েছিল কিনা তা বিষয় নয়, তাকে থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল কিনা এবং সেই নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে কিনা তাই মুখ্য বিষয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই রাসেল জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বড় ভাইয়ের পথেই এসআই জাহিদ: পল্লবী থানায় নির্যাতন করে জনিকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই জাহিদুর রহমান খান তার বড় ভাইয়ের পথ অনুসরণ করেছেন বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন। এসআই জাহিদের বড় ভাই আতিকুর রহমান খান একসময় পল্লবী থানায় সেকেন্ড অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পদোন্নতি পেয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধেও খুনের মামলার আসামি হিসেবে শামীম রেজা নামে এক ব্যবসায়ীকে ধরে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ১৪ই মে ব্যবসায়ী শামীম রেজাকে থানায় আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীমের মৃত্যু হলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। এলাকাবাসী ওসি আতিকের ফাঁসির দাবিতে মিছিলও করেছে। সে সময় ঢাকা রেঞ্জের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি ওসি আতিককে বিভাগীয় শাস্তি দেয়ার জন্য সুপারিশও করে। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ওসি আতিক তদবির করে তার শাস্তি ঠেকান। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দায়িত্বে অবহেলার জন্য তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
নিহত যুবকের চাচা হায়দার আলী জানান, কয়েকদিন আগে ওসি আতিকের বন্ধু পরিচয়ে এক লোক জনির মাকে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে গেছে। এসআই জাহিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেয়ার জন্য বলে আসেন তিনি। এছাড়া মাঝেমধ্যেই এসআই জাহিদ নিজেই ফোন করে হুমকি দিয়েছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরিবারের সদস্যদের গুম করে দেয়া হবে বলে তিনি হুমকি দিয়েছেন।

“সনদ বিড়ম্বনা :আইন পেশার উৎকর্ষ সাধন অতি জরুরি

” ড. শাহ্দীন মালিক:

1520700_543494415741878_941575980_n আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট; পরিচালক, স্কুল অব ল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আমি কোনো কর্তৃপক্ষ নই, বার কাউন্সিলেরও কেউ না, বার্ষিক চাঁদা দেওয়া সদস্য ছাড়া। তবে আইন শিক্ষা, আইন পেশা, আইন ও বিচার সম্পর্কে যেহেতু প্রায়শই অযথা চেঁচামেচি করতে করতে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, সেহেতু অভ্যাস দোষেই এই প্রতিক্রিয়া। এই প্রতিক্রিয়ার কিছু না কিছু অংশ কোনো শিক্ষার্থী আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের সদস্যের মতের সঙ্গে মিলবে না, হয়তো তাঁরা গোস্সা করবেন। কী আর করা! আইন পেশা ও আইন শিক্ষা—দুটোর অবস্থাই ভালো না। ভালো না মানে খারাপ—সে অর্থে না। ভালো না মানে—আরও অনেক ভালো করতে হবে। এখন বার কাউন্সিলে আইনজীবী-সনদ পরীক্ষার মৌখিক পর্ব চলছে। সনদ পাওয়ার পর নামের পাশে ‘অ্যাডভোকেট’ কথাটা লেখা যাবে। ‘অ্যাডভোকেট’ শব্দটা লিখতে হবে নামের পরে। আজকালকার মন্ত্রীদের মতো নামের আগে না। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় নামের আগে ‘অ্যাডভোকেট’ শব্দ অর্থাৎ আইন পেশায় অ্যাডভোকেট হিসেবে নিয়োজিত আছেন বলে জাহির করা বার কাউন্সিলের বিধান লঙ্ঘন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ দেশে মন্ত্রী হওয়া মানে তো আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যাওয়া। হয়তো মন্ত্রীদের তোষামোদকারী ও চাটুকারেরা তাঁদের মন্ত্রীদের ‘নাম কাটাবার জন্য’ মন্ত্রীর নমের আগে অ্যাডভোকেট কথাটা জুড়ে দিতে গিয়ে ভুলে গেছে যে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আইনজীবী সনদ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার কথা। অর্থাৎ যত দিন মন্ত্রী তত দিন অ্যাডভোকেট হিসেবে কোর্টে মামলা করা যাবে না। বার কাউন্সিলের বিধানে নিষেধ আছে। যাক গে। আইন শিক্ষায় রাষ্ট্রের বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। এখন সাকল্যে চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা আইনের ডিগ্রি লাভ করেছে। বছর তিনেক আগে জগন্নাথ আর এ বছর থেকে জাহাঙ্গীরনগর অর্থাৎ এখন সাকল্যে ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ, বড় সরকারি কলেজ, কোথাও সরকার আইন পড়ানোর ব্যবস্থা করেনি। আইন শিক্ষায় সরকারের অনীহার ফলে সৃষ্ট সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ভূরি ভূরি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। টাকা নিয়ে গেলেই ভর্তি হওয়া যায় আর চার বছর পর এলএলবি ডিগ্রি পাওয়া যায়। এসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যতিক্রমী মেধাবী শিক্ষার্থী ও কিছু শিক্ষক নিশ্চয়ই আছেন। তবে যে লেখার প্রতিক্রিয়ায় আমার এ লেখা, সেটাতে বার কাউন্সিলের পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যেটা বলা হয়নি তা হলো বার কাউন্সিলের অ্যাডভোকেট সনদ প্রার্থী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। এই সংখ্যাধিক্যতাই এখন বার কাউন্সিলেরও সম্ভবত বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের ২২ এপ্রিল বার কাউন্সিলের আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে এ বছরের এই জানুয়ারি। সেই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল আইনের ডিগ্রি পাওয়া কম-বেশি আট হাজার পরীক্ষার্থী। যত দূর শুনেছি, আট হাজারের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় হাজার তিনেক। প্রায় ১০টা বোর্ড এখন প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাজার তিনেক সনদপ্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছে। বোর্ডের বেশির ভাগ সদস্যই মাননীয় বিচারপতিরা। এত ‘ইন্টারভিউ’ নিতে নিতে তাঁরা হয়তো গলদঘর্ম। তবে দৈনন্দিন বিচারিক কাজের পর আগে পরীক্ষার খাতা দেখা, এখন মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া—এ দায়িত্ব তাঁরা যে নিয়েছেন এ জন্য আমরা নিঃসন্দেহে কৃতজ্ঞ। গতবার যেহেতু পরীক্ষার্থী ছিল আট হাজার, এবার সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজারে দাঁড়ালে মোটেও বিস্মিত হব না। আগেই বলেছি, এলএলবি সার্টিফিকেট দেওয়ার লোকের অভাব নেই। ইদানীং আবার ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ল কলেজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক প্রতিষ্ঠানে একবারে খাস বিলেতি এলএলবি ডিগ্রিও দিচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের কোনো আইন না পড়েই বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষা দিয়ে বাংলাদেশে আইনজীবী হিসেবে সনদ পেয়ে বাংলাদেশের কোর্টে কাজ করবে। দেশে এখন নিবন্ধিত আইনজীবীর সংখ্যা ৪৬ হাজারের কিছু বেশি। এবার যারা মৌখিক পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের বেশির ভাগ আসছে মার্চে বার কাউন্সিলের পরবর্তী যে পরীক্ষা-প্রক্রিয়া শুরু হবে, তাতে পরীক্ষার্থী ১০ হাজার হলে দেশে নিবন্ধিত আইনজীবীর সংখ্যা শিগগিরই ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এত জায়গা থেকে এত সহজে ল ডিগ্রি পাওয়া গেলে প্রতিবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হু হু করে বাড়বে। কিন্তু দেশে মামলার সংখ্যা কি বাড়ছে? বাড়ছে না। সারা দেশের সব আদালতে সব ধরনের যত মামলা দায়ের হয় তার সংখ্যা গত পাঁচ বছর ধরে ১০ থেকে ১১ লাখের মধ্যে ওঠানামা করছে। বড় দাগে হিসাব মেলানোর সুবিধার্থে যদি বলি তাহলে বলব, প্রতিবছর নতুন ১০ লাখ মামলা দায়ের হয়। এর অন্তত অর্ধেক মামুলি মামলা। ছোটখাটো অপরাধ, ৫০-৭০ হাজার টাকার দাবিদাওয়া, মাসিক দুই হাজার টাকা খোরপোশ ইত্যাদি। অর্থাৎ এসব মামলার পেছনে মক্কেল হাজার হাজার টাকা খরচ করে না—কিছু ব্যতিক্রমী ছাড়া। ১০ লাখ মামলার পেছনে আছে—আবার বড় দাগে—৫০ হাজার আইনজীবী। গড়ে বছরে জুটবে ২০ মামলা। আইনজীবী-প্রতি মাসে দুটোরও কম মামলা। মোদ্দা কথা, যদি গত পাঁচ বছরে দেশে মোট মামলার সংখ্যা না বাড়ে তাহলে আইনজীবীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ানো কতটা যৌক্তিক? দুনিয়ার অন্যান্য দেশের বার কাউন্সিল এসবের হিসাব রাখে। যারা পেশায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তাদের প্রতি দায়িত্বশীল হয়। নবীন কোনো আইনজীবী সনদ পাওয়ার দুই-তিন বছর পরে যদি উচ্চতর কোনো ট্রেনিং অথবা আরও পড়াশোনা করতে চায়, তাহলে তার কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ পেশাগত উৎকর্ষের কোনো পথ কারও জন্য খোলা নেই। বার কাউন্সিল এসব ব্যাপারে কিছুই করে না বা করতে পারে না। তার প্রধান এবং সম্ভবত একমাত্র কারণ হলো, সারা দেশের সব আইনজীবীর ভোটে তিন বছরের যে ১৪ জন আইনজীবী নির্বাচিত হয়ে বার কাউন্সিল গঠন করেন, তাঁরা তাঁদের তিন বছরের মেয়াদকালে পূর্ণোদ্যমে আইন পেশায় নিয়োজিত থাকেন। এমনিতেই প্রসিদ্ধ-খ্যাত-বিখ্যাত আইনজীবী, তারপর বার কাউন্সিলের নির্বাচিত নেতা। তিন বছরের মেয়াদকালে, বলা বাহুল্য, পেশাগত ব্যস্ততা অন্তত দ্বিগুণ হয়। আগেও ব্যস্ত ছিলেন এখন অতি ব্যস্ত। বার কাউন্সিলের কাজে সময় দেওয়ার সময় কোথায়? বরং চেষ্টা-তদবির করে নবীনদের আইনজীবীর কাতারে তালিকাভুক্ত করলে নিজের ও দলের ভোট বাড়বে। বার কাউন্সিল এভাবে চলতে পারে না। ১৪ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্যে যে পাঁচজন বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, অন্তত তাঁদের মেয়াদকালে পেশা থেকে বিরত থেকে বার কাউন্সিল তথা সব আইনজীবী, দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থার মঙ্গল ও উন্নতি সাধনে মনোনিবেশ করা উচিত। অন্তত মেয়াদের তিন বছরে নতুন কোনো মামলা নেবেন না এই নিষেধাজ্ঞা অত্যাবশ্যক। জানামতে, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা বেশ কয়েক বছর ধরে পদে থাকা অবস্থায় নতুন মামলা না নেওয়ার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা বার কাউন্সিলের, সুপ্রিম কোর্ট এবং ঢাকা বার সমিতির নির্বাচিত নেতাদের এখনই মেনে চলা দরকার। যাঁরা এতটুকু স্বার্থ ত্যাগ করতে পারবেন না, তাঁদের সঙ্গে চাঁদাবাজি করা আর ফায়দা লোটা তথাকথিত রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কী পার্থক্য থাকল। নেতার বার কাউন্সিলে সময় কাটালে বিচারব্যবস্থায় কীভাবে উন্নতি হবে, মামলা-জট কীভাবে কমবে, সংসদে কোন আইন পাস হওয়া দরকার আর বার কাউন্সিলের আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষা কীভাবে ভালো হয়—সবই হবে। যে লেখার প্রতিক্রিয়ায় এত কথা, সেই আইন শিক্ষার্থী-লেখকেরা মোটেও প্রীত হবেন না যদি বলি আইন পেশায় অন্তত তিন বছর সঠিকভাবে নিয়োজিত না থেকে বিচারক পদে পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হওয়া উচিত নয়। এলএলবি পাস করে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উতরে গিয়ে ২৩-২৪ বছরে বিচারক হয়ে যাওয়া—বাস্তবতার নিরিখে খুবই বেমানান। ২৩ বছরে অনেক আইন মুখস্থ করা যায়, আইনের বড় বড় বইও রপ্ত করা যায় কিন্তু জীবন বোঝা যায় না। জীবন বোঝা না গেলে ন্যায়বিচার করা যায় না। ন্যায়বিচার না হলে সমাজ টেকে না। ২৫ বছর বয়সে কোর্টে ২৫ বছর প্র্যাকটিস করা পঞ্চাশোর্ধ্ব আইনজীবীকে মোকাবিলা করা যায় না। যা হওয়ার হয়েছে এখন নিম্ন আদালতে বিচারকের ন্যূনতম বয়স বা তিন বছরের আইনজীবী হিসেবে অভিজ্ঞতা, উচ্চ আদালতে বিচারপতিদের ন্যূনতম বয়স ৫০ বছর ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। আগামী বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হাজার দশেক হবে। চাকরির অন্যান্য পরীক্ষার জন্য প্রথমে এমসিকিউ অর্থাৎ মালটিপল চয়েস পরীক্ষা নিয়ে ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষা নিতে হবে। এখনকার ছেলেমানুষী তিন ঘণ্টার শুধু একটা পরীক্ষার পরিবর্তে অন্তত পাঁচটা বিষয়ে ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা নিতে হবে। সব চাকরিতে যেমন আগেভাগেই ঘোষণা করা হয় ১০০ বা ২০০ জন নিয়োগ করা হবে, সেভাবে প্রতিবছর হিসাব করে বার কাউন্সিলকে ঘোষণা দিতে নতুন কতজন আইনজীবীকে সনদ দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে চাকরি- বাকরি সবই মেধার ভিত্তিতে উত্তীর্ণ প্রথম ১০০ বা ৫০০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, বার কাউন্সিলকেও সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বার কাউন্সিলের নির্বাচিত নেতাদের তাঁদের মেয়াদকালে নতুন কোনো মামলা না নিয়ে বার কাউন্সিলের কাজে সময় দেওয়া। সময় দিতে না পারলে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। মামলা থেকে আইনজীবীর সংখ্যা বেশি। আইন পড়ানোর সবটাই তাত্ত্বিক। আদালতের আইনের সঙ্গে যা পড়ানো হয়, তার মিল নেই বললেই চলে। আইনজীবী এ মাসে নতুন কোন মক্কেল পাননি, তাই পুরোনো মামলা জিইয়ে রাখতে হবে। ফলে মিথ্যা মামলা বাড়ছে, মামলা দীর্ঘায়িত হচ্ছে, দুর্নীতি বাড়ছে। মামলার খোঁজে দিগিবদিক শূন্য হয়ে দৌড়াদৌড়ি। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে না জেনে, না বুঝে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ৭০-৮০টা প্রাইভেট ল কলেজে ভর্তি হচ্ছে। পেশাটার বারোটা বাজার আগে নেতাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে কোর্টে রাজনৈতিক নেতাদের মামলার দিনে মিছিল, বিক্ষোভ এবং এসব ঘটনায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ব্যস্ত আইনজীবীদের সংখ্যাই কেবল বাড়বে। কোর্টে আসা আইনের আশ্রয়প্রার্থী মক্কেল হয়ে যাবে খদ্দের। ব্যবস্থাপত্র কম-বেশি সবারই জানা। দরকার ব্যবস্থাপত্র বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত।

ছাত্রলীগ নেতাদের নামে মামলা করে বিপাকে পুলিশ

12980_polish

খুলনার সরকারি কমার্স কলেজের ক্যাম্পাস থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় ছাত্রলীগের চার নেতার নামে অস্ত্র আইনে মামলা করে বিপাকে পড়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, নগর ডিবি পুলিশের কয়েক কর্মকর্তা ষড়যন্ত্র করে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের জড়িয়েছে। একই সঙ্গে আলোচিত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে নগরীর ৫টি সরকারি কলেজে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করেছে মহানগর ছাত্রলীগ। তবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও কলেজের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, কলেজ ক্যাম্পাসের যে কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে তা ছাত্রলীগের নেতারা ব্যবহার করত। তাদের কাছেই কক্ষের চাবি থাকত। জানা যায়, খুলনা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গত মঙ্গলবার রাতে সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদ ও বিএনসিসির কক্ষ দুটি তল্লাশি করে দুটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ১২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ম্যাগাজিন, ধারালো অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দীপক কুমার রায় ও কলেজের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি দেব দুলাল বাড়ৈ বাপ্পি ও তার আপন ভাই সজল বাড়ৈ, ছাত্রলীগ নেতা সবুজ হাজরা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন গতকাল খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সুজনের দাবি, অস্ত্র মামলাটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ডিবির ওসি তৈমুর ইসলাম এক সময় ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন। তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের জড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগকে কলুষিত করার চেষ্টা করছেন। ছাত্রলীগ নেতা সুজন ওসি তৈমুর ইসলামের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানেরও দাবি করেন। তবে খুলনা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার দাবি, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের রাতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কলেজের শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির ওসি তৈমুর ইসলাম একজন সাহসী অফিসার। তিনি নগর ডিবি পুলিশে যোগ দিয়ে মাদকের কয়েকটি বড় চালান আটকে সমর্থ হন। তার তৎপরতায় খুলনার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীরা ভীতিকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ডিবি পুলিশের কর্মতৎপরতাকে বিতর্কিত করতেই মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

থানায় হামলা করে পুলিশ পেটাল আওয়ামী লীগ

পুলিশের গুলিতে ছাত্রলীগ নেতাসহ আহত ১২

 

নোয়াখালী প্রতিনিধি

কবিরহাট পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মোছলে উদ্দিন নবীর দুই ভাইকে গ্রেফতারের ঘটনা ও পৌর মেয়র জহিরুল হক রায়হানকে আটকের গুজবে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও গোলাগুলি হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ পরওয়ানা (৩০) গুলিবিদ্ধ ও জেলা ছাত্রলীগ যুগ্ম-সম্পাদক রিয়াজ হোসেন (২৬), ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন, কবিরহাট কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম সোপন এবং পুলিশসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। বুধবার রাত ১২টা থেকে দুই ঘণ্টা স্থায়ী সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে তিন ছাত্রলীগ নেতাকে নোয়াখালী মেডিকেল ও একজনকে ঢাকায় ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, কবিরহাট পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক রায়হানকে থানায় আটকের গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী থানায় হামলা এবং ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা হামলা এবং গুলি চালায়। একপর্যায়ে পুলিশ দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর তোপের মুখে মেয়র ও ওই দুজনকে ছেড়ে দেয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে অতিরিক্ত ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম মাহবুবুল আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘পৌর মেয়র জহিরুল হক রায়হান মদ্যপ অবস্থায় রাতে থানায় এসে বলেন, আমাকে গ্রেফতার করেন। একপর্যায়ে তিনি তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের ফোন করেন। পরে দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী থানায় এসে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এতে থানার ৯টি কক্ষের জানালার কাঁচ ও প্রধান ফটকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে ৪০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।মদ্যপ অবস্থায় থানায় গিয়ে গ্রেফতার করতে বলা ও নেতা-কর্মীদের ডেকে আনার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করে পৌর মেয়র জহিরুল হক রায়হান বলেন, ‘ওসি দায় এড়ানোর জন্য এসব বলছেন। আমি দুজন প্রতিবেশীকে থানায় ডেকে নেওয়ার বিষয়ে জানতে থানায় গিয়েছিলাম। এ সময় চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ আমাকে আটক করেছে। এলাকার জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে থানায় হামলা চালায় এবং পুলিশও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নেওয়া দুজন বকতিয়ার হোসেন ও মনির হোসেনকে ছেড়ে দেয়।’ পুলিশ জানায় , হামলা-ভাঙচুর ও গুলির ঘটনায় পুলিশের তিন কনস্টেবল ইয়াছিন মিয়া, মো. কাইয়ুম ও মো. বাবুলসহ অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে কবিরহাট থানার ওসিকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এদিকে থানায় হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

– See more at: http://www.bd-pratidin.com/2014/03/07/47225#sthash.lHEqjtGX.dpuf

চিকিৎসক, প্রকৌশলীরাই বেশি বেকার

bekar

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতরাই সবচেয়ে বেশি বেকার। চাকরির বাজারে কেবল ভালো অবস্থানে আছে স্নাতক ও এর সমপর্যায়ের ডিগ্রিধারীরা। এর বেশি লেখাপড়া করলেও চাকরির বাজারে সুবিধা করতে পারছেন না উচ্চ ডিগ্রিধারীরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবচেয়ে বেশি বেকার চিকিৎসক ও প্রকৌশলীরা। আর বেকারত্বের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা।
বিবিএস সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০-এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনেই বেকারত্বের এই চিত্র পাওয়া গেছে। অথচ দেশে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হতেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক-প্রকৌশলীদের হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ মধ্যে নারী চিকিৎসক-প্রকৌশলীদের অবস্থা আরও খারাপ। তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। এর পরেই আছেন উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রিধারীরা। তাঁদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর বেকারদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছেন স্নাতকোত্তররা, ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, এটা খুবই আশ্চর্যজনক তথ্য। চিকিৎসকদের বেকার থাকার সুযোগ দেখি না। কেননা, এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পর সব চিকিৎসকই সপ্তাহে কমপক্ষে এক ঘণ্টা চেম্বারে রোগী দেখেন। তবে প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রে বেকার থাকার সামান্যতম সুযোগ থাকে। কারণ, তাঁদের পেশাটাই চাকরিনির্ভর। চাকরি না পেলে বেকার। জরিপের সময় চিকিৎসক বা প্রকৌশলীরা হতাশা কিংবা অন্য কোনো কারণে প্রকৃত তথ্য না দিতে পারেন বলে তিনি মনে করেন।
জরিপ আরও বলছে, স্নাতক ডিগ্রিধারীরাই চাকরি কিংবা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি সম্পৃক্ত থাকেন। স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারীদের মধ্যে মাত্র দশমিক ৫০ শতাংশ বেকার। আর কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণকারীদের কেউ বেকার থাকেন না।
বিবিএসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ দেশের বাস্তবতায় স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে ভালো চাকরির প্রত্যাশা কম থাকে। তাই যেকোনো ধরনের চাকরি পেলেই তাঁরা করেন অথবা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের মধ্যে চাকরির প্রত্যাশা বেশি থাকে। তাই সন্তোষজনক চাকরি না পাওয়ায় বেকার জীবন যাপন করেন।
তবে অশিক্ষিত বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশ কম। ১০০ অশিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যে মাত্র তিনজনেরও কম বেকার থাকেন। বিবিএসের হিসাবে এই হার ২ দশমিক ৮২ জন। মূলত দেশের কৃষি খাতের শ্রমবাজারে তাঁরা কাজ করে থাকেন।
তবে অশিক্ষিত বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন নারীদের প্রায় ৯৬ শতাংশই কৃষি কিংবা অন্য খাতের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন। এ ছাড়া প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যেও বেকারত্বের হার এক অঙ্কের ঘরে।
বিবিএসের কর্মকর্তারাই বলছেন, এই জরিপের সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হচ্ছে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্বের পরিসংখ্যান। তবে বিবিএসের সাবেক পরিচালক (শিল্প ও শ্রম শাখা) শামসুল আলম এই জরিপ প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে গত রোববার বলেন, চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলীরা নিজেদের কর্মজীবন নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকায় জরিপের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সময় অনেকেই নিজেদের বেকার বলে দাবি করেছেন। এ জন্য হয়তো চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলীদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রার এ জেড এম বাসুনিয়া এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দেশের কোনো চিকিৎসকই বেকার নন। সবাই সপ্তাহে এক ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। তাঁর মতে, পেশাজীবী হওয়ায় চিকিৎসকেরা চাকরি না করলেও বেকার হন না। তাঁরা চেম্বারে রোগী দেখতে পারেন, আয় করতে পারেন।
বেকারত্বের নতুন তথ্য: বাংলাদেশে মোট বেকারের সংখ্যা নিয়ে দুই ধরনের পরিসংখ্যান রয়েছে। এক হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা মাত্র ২৫ লাখ ৬৮ হাজার। এই সংখ্যা দেশের মোট শ্রমশক্তির মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ। তবে বিবিএসের এই হিসাব কেউই মানতে চান না। কারণ, বেকারত্বের এই হার উন্নত অনেক দেশের তুলনায় কম। ফলে বিবিএস নতুন আরেকটি হিসাব প্রকাশ করেছে জরিপের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে।
নতুন হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ৮০ লাখ ২৫ হাজার, যা মোট শ্রমশক্তির ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। বিবিএসের হিসাবে দেশে ২৫ লাখ ৬৭ হাজার কর্মহীনের বাইরেও আরও ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ আছেন, যাঁরা গৃহে সপ্তাহে অন্তত ১৫ ঘণ্টার কম কাজ করেন কিন্তু কোনো মজুরি পান না। বেকারদের মধ্যে আবার নারীদের সংখ্যাই অনেক বেশি। পুরুষ বেকারের হার ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ, আর নারী বেকার ৩১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ গৃহস্থালির কাজে মজুরি পান না সাড়ে ৪৪ লাখ নারী।
তবে, এর বাইরে দেশে আছে বিপুলসংখ্যক অর্ধবেকার। বিবিএসের হিসাবে তা এক কোটি নয় লাখ ৮৬ হাজার, যা মোট শ্রমশক্তির ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ। সংজ্ঞা অনুযায়ী, যারা সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টার কম কাজ পান বা করেন।

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১

1520700_543494415741878_941575980_n
(১৯৬১ সনের ৮নং অধ্যাদেশ)
বিবাহ এবং পারিবারিক আইন কমিশনের কতিপয় সুপারিশ কার্যকর করার জন্য প্রণীত অধ্যাদেশ৷

যেহেতু,বিবাহ এবং পারিবারিক আইন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা দরকার ও সমীচীন৷ সেহেতু, ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবরের ঘোষণা দ্বারা রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ক্ষমতা বলে,নিম্নলিখিত অধ্যাদেশটি প্রণয়ন ও জারী করলেন:

১৷ সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, সীমা, প্রয়োগ ও বলবতের সময় (Short title, extent, application and commencement):
এই অধ্যাদেশকে ১৯৬১ সনের ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ’নামে অভিহিত করা হবে।
ইহা সমগ্র বাংলাদেশে এবং যে যেখানেই থাকুক না কেন,বাংলাদেশের সকল মুসলিম নাগরিকের উপর প্রযোজ্য হবে।
সরকার,সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি মারফত যে তারিখ নির্ধারণ করবেন,সেই তারিখ হতে উহা কার্যকর হবে।
(উল্লেখ্য যে,১৯৬১ সনের ১৫ই জুলাই তারিখ হতে এই অধ্যাদেশটি বলবত হয়েছে)

২৷ সংজ্ঞাসমূহ (Definitions):এই অধ্যাদেশে,বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গ হতে বিপরীত কিছু প্রতীয়মান না হলে-
(ক) ‘সালিসী পরিষদ'(Arbitration Council)বলতে চেয়ারম্যান এবং এই অধ্যাদেশে উল্লিখিত কোন বিষয়ের সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের প্রত্যেকের একজন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত পরিষদকে বুঝাবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন পক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে ব্যর্থ হলে অনুরূপ প্রতিনিধি ছাড়া গঠিত পরিষদই সালিসী পরিষদ হবে।
(খ) চেয়ারম্যান (Chairman)বলতে বুঝাবে-
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান;
পৌরসভার চেয়ারম্যান;
মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র বা প্রশাসক;
সেনানিবাস এলাকায় অত্র অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি;
কোন ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ,পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বাতিল করা হলে সেক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক অত্র অধ্যাদেশের অধীনে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ,পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত ব্যক্তি।
তবে শর্ত থাকে যে,যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভার চেয়ারম্যান একজন অমুসলমান অথবা তিনি নিজেই সালিসী পরিষদের নিকট কোন দরখাস্ত করতে চাহেন এমন হলে,অথবা অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা উহার একজন মুসলমান সদস্যকে এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যাবলী পূরণকল্পে একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
(গ) ‘মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন'(Municipl Corporation) বলতে ১৯৮২ সালের চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮২ সনের ৩৫ নং অধ্যাদেশ) অথবা ১৯৮৩ সালের ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮৩ সনের ৪০নং অধ্যাদেশ),অথবা ১৯৮৪ সালের খুলনা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮৪ সনের ৭২ নং অধ্যাদেশ) অনুযায়ী গঠিত মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বুঝাবে এবং নির্ধারিত এখতিয়ার সম্পন্ন হবে।
(ঘ) ‘পৌরসভা'(Paurashava) বলতে ১৯৭৭ সালের পৌরসভা অধ্যাদেশ (১৯৭৭ সনের ২৬ নং অধ্যাদেশ) অনুযায়ী গঠিত পৌরসভা বুঝাইবে এবং নির্ধারিত এখতিয়ার বুঝায়।
(ঙ) ‘নির্ধারিত'(Prescribed) বলতে ১১ ধারার অধীনে প্রণীত বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত বুঝায়।
(চ) ‘ইউনিয়ন পরিষদ'(Union Parishad) বলতে ১৯৮৩ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশের (১৯৮৩ সনের ৫১ নং অধ্যাদেশ) এর অধীনে গঠিত এবং উক্ত বিষয়ে নির্ধারিত এখতিয়ার সম্পন্ন ইউনিয়ন পরিষদকে বুঝায়।

৩৷ অত্র অধ্যাদেশ অন্যান্য আইনের উপর প্রাধান্য লাভ করবে (Ordinance to override other laws):
অপর কোন আইন,বিধি অথবা প্রচলিত রীতিতে যাই থাকুক না কেন,এই অধ্যাদেশের বিধানাবলী কার্যকর হবে।
সন্দেহ দূরীকরণের উদ্দেশ্যে,এতদ্বারা ইহা ঘোষণা করা যাচ্ছে যে,১৯৪০ সালের সালিসী আইন,১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি এবং আদালতের কার্যধারা নিয়ন্ত্রণকারী অপর কোন আইনের কোন ব্যবস্থা সালিশী পরিষদে প্রযোজ্য হবে না।

৪৷ উত্তরাধিকার (Succession): যাহার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে বন্টিত হবে,তার পূর্বে তার কোন পুত্র বা কন্যা মারা গেলে এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বন্টনের সময় উক্ত পুত্র বা কন্যার কোন সন্তানাদি থাকলে, তারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ঐ অংশ পাবে, যা তাদের পিতা অথবা মাতা জীবিত থাকলে পেতো।

৫৷ [বাতিল এই ধারাটি ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রেশন আইন দ্বারা বাদ দেওয়া হয়েছে]

৬৷ বহু বিবাহ (Polygamy):
(১) সালিশী পরিষদের লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি একটি বিবাহ বলবত থাকলে আরেকটি বিবাহ করতে পারবে না এবং পূর্ব অনুমতি গ্রহণ না করে এই জাতীয় কোন বিবাহ হলে তা মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪ (১৯৭৪ সনের ৫২নং আইন) অনুসারে রেজিষ্ট্রি হবে না।
(২) (১) উপ-ধারায় বর্ণিত অনুমতির জন্য নির্দিষ্ট ফিসসহ নির্ধারিত পদ্ধতিতে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এবং আবেদনপত্রে প্রস্তাবিত বিবাহের কারণ এবং বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা, তা উল্লেখ করতে হবে।
(৩) উপরোক্ত (২) উপ-ধারা মোতাবেক আবেদনপত্র পাওয়ার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারী এবং বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের প্রত্যেককে একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলবেন এবং এইরূপে গঠিত সালিশী পরিষদ যদি মনে করেন যে, প্রস্তাবিত প্রয়োজন এবং ন্যায়সঙ্গত, তা হলে কোন শর্ত থাকলে উহা সাপেক্ষে, প্রার্থিত বিবাহের অনুমতি মঞ্জুর করতে পারেন।
(৪) আবেদনটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সালিশী পরিষদ সিদ্ধান্তের কারণসমূহ লিপিবদ্ধ করবেন এবং যে কোন পক্ষ, নির্দিষ্ট ফিস জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট মুন্সেফের নিকট রিভিশনের (Revision) জন্য আবেদন দাখিল করতে পারবেন এবং সালিসী পরিষদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং কোন আদালতে উহার বৈধতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
(৫) সালিশী পরিষদের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে-
(ক) অবিলম্বে তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের “তাত্ক্ষণিক” অথবা “বিলম্বিত” দেনমোহরের (Prompt or deferred dower) যাবতীয় টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং উক্ত টাকা পরিশোধ করা না হলে উহা বকেয়া ভূমি রাজস্বের ন্যায় আদায়যোগ্য হবে।
(খ) অভিযোগক্রমে দোষী সাব্যস্ত হলে সে এক বত্সর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

৭৷ তালাক (Talaq):
(১) কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে,তিনি যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্র সম্ভব চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ দিবেন এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিশের একটি অনুলিপি (নকল) প্রদান করবেন।
(২) কোন ব্যক্তি (১) উপ-ধারার বিধান লংঘন করলে তিনি এক বত্সর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ডনীয় হবেন।
(৩) নিম্নের (৫) উপধারার বিধান অনুসারে প্রকাশ্যে বা অন্য কোনভাবে তালাক,আগে প্রত্যাহার করা না হয়ে থাকলে,(১) উপধারা মোতাবেক চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকরী হবে না।
(৪) উপরোক্ত (১) উপধারা অনুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং উক্ত সালিসী পরিষদ এই জাতীয় পুনর্মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
(৫) তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে,(৩) উপধারায় বর্নিত সময়কালে অথবা গর্ভাবস্থা,যেটি পরে শেষ হয়,অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক বলবত হবে না।
(৬) অত্র ধারা অনুযায়ী তালাক দ্বারা যে স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে সেই স্ত্রী,এই জাতীয় তালাক তিনবার এইভাবে কার্যকরী না হলে,কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে বিবাহ না করে পুনরায় একই স্বামীকে বিবাহ করতে পারবে।

৮৷ তালাক ছাড়া অন্যভাবে বিবাহ-বিচ্ছেদ (Dissolution of marriage otherwise than by talaq):
যেক্ষেত্রে তালাক দেয়ার অধিকার যথাযথভাবে স্ত্রীকে অর্পণ করা হয়েছে এবং স্ত্রী সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক বা স্ত্রী তালাক ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটাতে চাহে,সেক্ষেত্রে ৭ ধারার বিধানাবলী প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ যথাসম্ভব প্রযোজ্য হবে।

৯৷ ভরণ-পোষণ (Maintenance):
(১) কোন স্বামী তার স্ত্রীকে পর্যাপ্ত ভরণ-পোষণ বা খোরপোষ দানে ব্যর্থ হলে বা একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে তাহাদিগকে সমভাবে খোরপোষ না দিলে,স্ত্রী বা স্ত্রীগণ কেহ,অন্য কোন আইনানুগ প্রতিকার প্রার্থনা ছাড়াও চেয়ারম্যানের নিকট দরখাস্ত করতে পারেন। এইক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং ঐ পরিষদ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ বাবদ প্রদানের জন্য টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে সার্টিফিকেট জারী (ইস্যু) করতে পারবেন।
(২) কোন স্বামী বা স্ত্রী নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদান পূর্বক ঐ ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট খানা পুর্নবিবেচনা জন্য সংশ্লিষ্ট মুন্সেফের নিকট আবেদন করতে পারবেন এবং তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং কোন আদালতে এই সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
(৩) উপরের (১) অথবা (২) উপ-ধারা মোতাবেক দেয় কোন টাকা যথাসময়ে বা সময়মত পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব হিসাবে আদায় করা চলবে।

১০৷ দেনমোহর (Dower):
নিকাহনামা বা বিবাহের চুক্তিতে দেনমোহর পরিশোধের পদ্ধতি নির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত না থাকলে,দেনমোহরের সমগ্র অর্থ চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য (দেয়) বলে ধরে নিতে হবে।

১১৷ বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা (Power to make rules):
(১) এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য কার্যে পরিণত করার জন্য সরকার বিধিমালা (নিয়মকানুন) প্রণয়ন করতে পারবেন।
(২) এই ধারায় বিধিমালা প্রণয়নের সময় সরকার এইরূপ বিধান রাখতে পারেন যে,বিধিমালার কোনটি ভঙ্গের জন্য এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাচশত টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় প্রকার দণ্ড হতে পারে।
(৩) অত্র ধারা অনুসারে প্রণীত বিধিমালা সরকারী গেজেটে প্রকাশিত হবে এবং অতঃপর তা এই অধ্যাদেশে বিধিবদ্ধ হয়েছে বলে গণ্য হবে।

১১ ক৷ বিচারের স্থান (Place of trial):
বর্তমানে প্রচলিত অন্য যে কোন আইনে যাই থাকুক না কেন,এই অধ্যাদেশের অধীনে কোন অপরাধের বিচার হবে সেই আদালতে যে আদালতের স্থানীয় সীমারেখার মধ্যে-
(ক) অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে;অথবা
(খ) অভিযোগকারী (বাদী) অথবা আসামী (বিবাদী) বসবাস করেন অথবা সর্বশেষ বসবাস করছিল।

১২৷ ১৯২৯ সনের বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনের সংশোধন (Amendmeent of the Dissolution of Muslim Marriage Act, ১৯২৯):
১ঌ২ঌ সনের বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনের –
(১) ২ ধারায় –
(ক) দফা (ক) তে ‘চৌদ্দ’ শব্দটির স্থলে ‘ষোল’ শব্দটি বসবে;
(খ) (গ) দফায় ‘এবং’ শব্দটি বাদ যাবে; এবং
(গ) (ঘ) দফার শেষের দিকে দাড়ির পরিবর্তে কমা বসবে এবং এরপর নিম্নলিখিত নুতন দফা (ঙ), (চ) এবং (ছ) যোগ হবে৷ যথা-
(ঙ) ‘মিউনিসিপ্যাল করর্পোরেশন’ বলতে ১৯৮২ সালের চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮২ সনের ৩৫নং অধ্যাদেশ) অথবা ১৯৮৩ সনের ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ). (১৯৮৩ সনের ৪০ নং অধ্যাদেশ) বা ১৯৬৮৪ সালের খুলনা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮৪ সনের ৭২ নং অধ্যাদেশ)-এর অধীনে গঠিত মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনকে বুঝাবে যার এখতিয়ারের মধ্যে কোন বাল্য-বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে বা হওয়ার উপক্রম হয়েছে;
(চ) ‘পৌরসভা’ বলতে ১৯৭৭ সনের পৌরসভা অধ্যাদেশের (১৯৭৭ সনের ২৬নং অধ্যাদেশ) অধীনে গঠিত পৌরসভাবে বুঝাবে, যাহার এখতিয়ারের মধ্যে কোন বাল্যবিবাহ হয়েছে বা হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
(ছ) ‘ইউনিয়ন পরিষদ’ বলতে ১৯৮৩ সনের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ (১৯৮৩ সনের ৫১ নং অধ্যাদেশ) অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদ, যা এখতিয়ারে মধ্যে কোন বাল্য বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে বা হওয়ার উপক্রম হয়েছ।
(২) ৩ ধারাটি বাদ যাবে।
(৩) ৪ ধারায় ‘একুশ’ শব্দের পরিবর্তে ‘আঠার’শব্দটি বসবে।
(৪) ৯ ধারায় …’অত্র আইনানুসারে’শব্দগুলির পর ‘ইউনিয়ন পরিষদ’ অথবা সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা না থাকলে সরকার কর্তৃক উক্ত বিষয়ে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ব্যতীত কোন অবস্থায় এইরূপ মামলা বিচারার্থ গ্রহণ করা যাবে না৷ শব্দগুলি যুক্ত হবে; এবং
(৫) ১১ ধারাটি বাদ যাবে ।

১৩ ৷ ১৯৩৯ সনের মুসলিম বিবাহ-বিচ্ছেদ আইনের ( ১৯৩৯ সালের ৮ নং আইনের) সংশোধন:
১৯৩৯ সনের মুসলিম বিবাহ-বিচ্ছেদ আইনের (১৯৩৯ সালের ৮ নং আইন) এর ২ ধারায়-
(ক) দফা (ii)-এর পর নিম্নলিখিত নুতন উপ-দফা ( ii-ক) যুক্ত হবে, যথা:
(ii-ক) যেহেতু স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ব্যবস্থাবলী লংঘন করা একজন অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করেছে; এবং
(খ) (vii) দফায় ‘পনের’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ষোল’শব্দটি বসবে।

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন

1520700_543494415741878_941575980_n
________________________________________
আকরাম ৪০ বছর বয়সে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। রেখে গেল বাবা, স্ত্রী রেহানা, দুই ভাই ও এক মেয়ে মিতা। আকরাম কৃষিকাজ করত। তার প্রায় ১০ বিঘা জমি ও বসত বাড়ি ছিল। আকরামের মৃত্যুর পর আকরামের ভাই সাইদ আকরামের স্ত্রী রেহানাকে বলে যে আকরামের সম্পত্তিতে রেহানা ও তার মেয়ে মিতার কোন অধিকার নেই। সাইদ তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। অসহায় রেহানা কি করবে বুঝতে পারে না। সে তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। রেহানার বাবা উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে জানত না। রেহানার বাবা রেহানাকে নিয়ে উকিলের কাছে যান পরামর্শের জন্য। উকিল তাদেরকে উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে অনেক তথ্য দেন।
উকিল : মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী আকরামের সম্পত্তিতে রেহানা ও তার মেয়ে মিতার অধিকার আছে।
রেহানা : উত্তরাধিকার কি ?
উকিল : কোন নারী বা পুরুষের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে মৃতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের খরচ, দেনাশোধ বা মৃতব্যক্তি যদি কোন উইল সম্পাদন করে যান তবে তা হস্তান্তরের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে তার উপর মৃতের সন্তান সন্তানাদি ও আত্মীয় স্বজনের যে অধিকার জন্মায় তাকে উত্তরাধিকার বলে।
রেহানা : উত্তরাধিকার আইন কি ?
উকিল : যে নির্দিষ্ট আইন দ্বারা মৃতের সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করা হয় তাকে উত্তরাধিকার আইন বলে।
রেহানা : মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে উত্তরাধিকারীর শ্রেণীবিভাগ কিভাবে হয় ?
উকিল : মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে ৩ শ্রেনীর উত্তরাধিকার আছে। যেমন : অংশীদার, অবশিষ্টাংশ ভোগী, দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ।
রেহানা : অংশীদার কারা ?
উকিল : যে উত্তরাধিকারীদের অংশ কোরআনে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তারাই অংশীদার।
রেহানা : অবশিষ্টাংশভোগী কারা ?
উকিল : কোরআনে নির্দিষ্ট অংশীদারদের সম্পত্তি বন্টনের পর মৃতের সাথে যাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এবং অবশিষ্ট সম্পত্তিতে যাদের অধিকার রয়েছে তারাই অবশিষ্টাংশ ভোগী।
রেহানা : দূরবর্তী আত্মীয়দের মধ্যে কারা সম্পত্তি পাবে ?
উকিল : যাদের সাথে মৃতের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু তারা অংশীদার বা অবশিষ্টাংশভোগী নয় তারাই মৃতের দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ। যদি মৃতের অংশীদার এবং অবশিষ্টাংশ ভোগী উত্তরাধিকার না থাকে তাহলেই কেবল মৃতের দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ সম্পত্তি পাবেন।
রেহানা : মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী আমি কি সম্পত্তির উত্তরাধিকার ?
উকিল : মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে ৩ শ্রেণীর মধ্যে অংশীদারগণই প্রধান উত্তরাধিকার। কোরআনে নির্ধারিত অংশ তাদেরকে দেয়ার পর যদি সম্পত্তি থাকে তবে তা অন্যদের মধ্যে বন্টন করতে হবে অর্থাৎ অংশীদারগণ সকল উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অগ্রাধিকার পান। অংশীদারগণের মধ্যে স্ত্রী অন্যতম। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে নিচের ৬ জন কোন অবস্থায়ই উত্তরাধিকার হতে বাদ যায় না-
• পিতা
• মাতা
• ছেলে
• মেয়ে
• স্বামী
• স্ত্রী
উল্লেখ্য, স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রী এবং স্ত্রীর অবর্তমানে স্বামী সম্পত্তি পাবেন।
রেহানা: মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে আর কে কে অংশীদার আছেন?
উকিল: মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মোট ১২ জন অংশীদার আছেন। তাদের ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জন নারী। পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, কন্যাসহ অন্যরা হলেন-দাদা, পুত্রের কন্যা, দাদী বা নানী, আপন বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় ভাই, বৈপিত্রেয় বোন।
রেহানা : মৃতের বাবা কতটা সম্পত্তি পায় ?
উকিল : মৃত ব্যক্তির পিতা উত্তরাধিকার লাভে তিন অবস্থায় পড়তে পারেন-
ক. মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র বা পুত্রের পুত্র, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে বাবা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।
খ. পুত্র, পুত্রের পুত্র না থাকলে কিন্তু কন্যা, পুত্রের কন্যা থাকলে ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন এবং তাদের দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তাও পাবেন।
গ. মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে অন্যান্য অংশীদারদের দেয়ার পর বাকী সমস্ত সম্পত্তি পিতা পাবেন।
রেহানা : মৃতের মাতা কতটা সম্পত্তি পায় ?
উকিল : মৃত ব্যক্তির মাতা তিনভাবে উত্তরাধিকার লাভ করতে পারেন-
ক. মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে অথবা যদি পূর্ণ, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন।
খ. কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকলে এবং যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) পাবেন।
গ. কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তি স্বামী বা স্ত্রী হয়, তবে তার স্বামী বা স্ত্রী, মাতা ও পিতা উত্তরাধিকারী হলে সেই স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন।
রেহানা : স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তি কতটা পাবেন ?
উকিল : স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তি দুইভাবে পাবেন-
ক. সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির চারভাগের একভাগ (১/৪) পাবেন।
খ. যদি সন্তান বা সন্তানের সন্তান, যত নিম্নের হউক, না থাকে তাহলে স্বামী মোট সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ (১/২) পাবেন।
রেহানা : স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি কতটা পাবেন ?
উকিল : স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি দুইভাবে পাবেন-
ক. সন্তান বা পুত্রের সন্তান, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) পাবেন।
খ. যদি সন্তান না থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ (১/৪) পাবেন। এখানে উল্লেখ্য, যদি মৃতের একাদিক স্ত্রী থাকেন তাহলে কোরআনে বর্ণিত অংশ স্ত্রীদের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ হবে।
রেহানা : ছেলে মৃত বাবার সম্পত্তি কতটুকু পাবেন ?
উকিল : মৃত ব্যক্তির ছেলে/ ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি লাভ করবেন। যেক্ষেত্রে মৃতব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে বর্তমান সেক্ষেত্রে ছেলে/ ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের দ্বিগুন সম্পত্তি পাবেন। মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে পাবে।
রেহানা : মেয়ে মৃত বাবার সম্পত্তি কতটুকু পাবেন ?
উকিল : উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মেয়ে তিনভাবে সম্পত্তি পেতে পারেন-
ক. একজন কন্যার অংশ দুইভাগের একভাগ (১/২)
খ. একাধিক মেয়ে হলে সকলে মিলে সমানভাবে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) পাবে।
গ. যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে।
রেহানা : কেউ যদি সন্তানকে ত্যাজ্য করে তাহলে এই সন্তান কি সম্পত্তি পাবে ?
উকিল : মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন সন্তানকে ত্যাজ্য করা যায় না। ফলে সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিতও করা যায় না। তবে কোন ব্যক্তি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে গেলে এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে গেলে ঐ সন্তান সম্পত্তি পাবে না।
উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে জানার পর রেহানা তার অংশের সম্পত্তির দাবি করেন। সে আকরামের সম্পত্তির ১/৮ বা ৩/২৪ অংশ পায়, মিতা পায় সম্পত্তির ১/২ বা ১২/২৪ অংশ এবংবাবা অংশীদার হিসেবে ১/৬ বা ৪/২৪অংশ ও অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে ৫/২৪ অংশ (বাবা মোট পায় ৯/২৪ অংশ)। বাবা থাকায় এক্ষেত্রে ভাইয়েরা কোন সম্পত্তি পায় নি। উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকার কারণে তারা তাদের সম্পত্তি পায়। এই সম্পত্তি থেকে রেহানা বর্তমানে নিজেদের থাকা খাওয়ার খরচ ও মিতার পড়ালেখার খরচ করতে পারছে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১. একজন মুসলিম নারী বা পুরুষকে কি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য ত্যাজ্য করা যায় ?
উত্তর. না, একজন মুসলিম নারী বা পুরুষকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা বা ত্যাজ্য ঘোষণা করা যায় না।
প্রশ্ন ২. মৃত ব্যক্তির ছেলে না থাকলে মেয়ে কি সম্পূর্ণ সম্পত্তি পাবে ?
উত্তর. না, যদি মেয়ে সন্তান একজন হয় তবে মৃত ব্যক্তির মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে (১/২), একাধিক মেয়ে হলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই (২/৩) ভাগ পাবে। তবে যদি মৃতব্যক্তি জীবিত অবস্থায় মেয়েকে বা মেয়েদেরকে সম্পূর্ণ সম্পত্তি দান করে যায় তাহলে মেয়েরা সম্পূর্ণ সম্পত্তি পাবে।
প্রশ্ন ৩. মেয়েরা কি মায়ের সম্পত্তি ছেলের চাইতে বেশি পায় ?
উত্তর. না, মেয়েরা সবসময়ই ছেলের চাইতে অর্ধেক সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তি মা বা বাবা যেই হোক না কেন উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে একজন পুত্র, একজন কন্যার দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে।
প্রশ্ন ৪. সৎ ছেলে মেয়েরা কি বাবা-মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাবেন ?
উত্তর. না, কোন সৎ ছেলে-মেয়ে, সৎ বাবা-মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন না। এমন কি সৎ বাবা-মাও সৎ ছেলে-মেয়ের সম্পত্তির উত্তররাধিকারী হবেন না।

-: তালাক :-

1520700_543494415741878_941575980_n
পরিচ্ছেদসমূহ
• ১ তালাক
• ২ তালাকের উদ্দেশ্য
• ৩ তালাক সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
• ৪ তালাক প্রদানের পূর্বে করনীয়
• ৫ প্রকার
• ৬ ইদ্দত কাল
• ৭ তালাকের পর পুনর্বিবাহ
• ৮ তালাকের প্রবণতা

তালাক
পারিবারিক জীবনে ভাঙ্গন ও বিপর্যয় অত্যন্ত মর্মান্তিক ব্যাপার। তালাক হচ্ছে এ বিপর্যয়ের চুড়ান্ত পরিণতি। পারিবারিক জীবনে চুড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়,পরস্পর মিলে মিশে স্বামী স্ত্রী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্য মন্ডিত জীবন যাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,পারস্পারিক সম্পর্ক যখন হয়েপড়ে তিক্ত,বিষক্ত,একজনের মন যখন অপরজন থেকে এমন ভাবে বিমূখ হয়ে যায় যে,তাদের শুভ মিলনের আর কোন সম্ভাবনা থাকেনা; ঠিক তখনই এই চুড়ান্ত পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তালাক হচ্ছে নিরুপায়ের উপায়। স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে বেঁধে রাখার শেষ চেষ্টাও যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তখন বিবাহ নামক রশিকে ছিন্ন করে পরস্পরের অস্তিত্বকে রক্ষা করাই তালাকের উদ্দেশ্য। ইসলাম তালাক দেওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি অনুমোদন করে নি। তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে সঠিক পন্থা স্পষ্টভাবে বেধে দিয়েছে। যা সর্বকালে ও সর্বযুগে অতীব ভারসাম্য পূর্ণ এবং বিজ্ঞান সম্মত।
বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭ ধারা মতে তালাক সক্রান্ত যে বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে, সেখানে তালাক ঘোষণার কোন পদ্ধতি বলা হয়নি। মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে- “কোন পুরুষ তাহার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাহিলে তাহাকে মুসরিম আইনে অনুমোদিত যে কোন পদ্ধতিতে ঘোষণার পরই তিনি তাহার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এ মর্মে চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও উহার নকল দিবেন” অর্থাৎ তালাক প্রদান বা ঘোষণার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের প্রবর্তিত পদ্ধতিই হচ্ছে মুসলিম পারিবারিক আইনের পদ্ধতি। তাই শরীয়ত প্রবর্তিত তালাক সংক্রান্ত বিধানাবলি ভালভাবে জানা ও বুঝা খুবই জরুরী। বিশেষ করে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা অত্যন্ত জরুরী। এদিকে লক্ষ রেখে নিম্নে তালাকের সংঙ্গা,প্রকারভেদ, আমাদের করণীয় ইত্যাদি বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হল।
তালাকের সংজ্ঞাঃ- “তালাক” শব্দের অর্থ ছড়িয়া দেওয়া,ত্যাগ করা বা বন্ধন খুলে দেওয়া বা বাঁধন খুলিয়া ফেলা বা শক্ত রজ্জুর বাঁধন খুলে ফেলা। আরবী ভাষায় বলা হয় “আমি শহর ত্যাগ করেছি”। শরীয়তের পরিভাষায় তালাক অর্থ “বিবাহের বাঁধন তুলিয়া ও খুলিয়া দেওয়া, বা বিবাহের শক্ত বাঁধন খুলিয়া দেওয়া “স্বামী তার স্ত্রীর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়া।”
তালাকের উদ্দেশ্য
তালাক প্রদানের উদ্দেশ্য হল অন্যায়,জুলুম ও নিদারুন কষ্ট,জ্বালাতন ও উৎপীড়ন ইত্যাদি অশান্তি হতে মুক্তি লাভ করা। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে তালাক প্রদানের যে উদ্দেশ্য তা হল স্বামী স্ত্রী উভয়ের মধ্যে যে সকল অশান্তি সৃষ্টিকারী কারণ সমুহ রয়েছে তা হতে সংশোধনের চেষ্টা করা বা দুর করা।
তালাক সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
তালাক শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবী (সাঃ) তালাক সম্পর্কে বলেছেন তালাক অপেক্ষা ঘৃনার জিনিস আল্লাহ তায়ালা আর সৃষ্টি করেন নি হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত নিম্নোক্ত বাণী হতে তালাকের ভয়াভহতা উপলদ্ধি করা যায়।তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়োনা কেননা, তালাক দিলে তার দরুন আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে।
তালাক প্রদানের পূর্বে করনীয়
দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী’র মধ্যে বিবাধ-বিরোধ মনোমালিন্য দেখা দিতেই পারে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে এ ধরনের বিরোধ দেখা দিলে তাদের জন্য নসীহত রয়েছে যে “আর তাহলে প্রত্যেকেই যেন অপরের ব্যাপারে নিজের মধ্যে ধৈর্য্য ও সহ্য শক্তি রক্ষা করে অপরের কোন কিছু অপছন্দনীয় হলে তা ঘৃনা হলেও সে যেন দাম্পত্য জীবন রক্ষার সার্থে তা অকপটে বরদাশত করতে চেষ্টা করে। এর পরেও যদি দাম্পত্য জীবন সংরক্ষন করতে ব্যার্থ হয় তবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন বিরোধ মনোমালিন্য হয়েছে বলে ভয় কর তাহলে তোমরা স্বামীর পরিবারের থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক পাঠাও। তারা দু’জন যদি বাস্তবিকই অবস্থার সংশোধন করতে চায় তাহলে আল্লাহ তাদের সেজন্য তওফীক দান করবেন এবং তার সংশোধন করে স্বমী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে মিল মিশ করার চেষ্টা করবেন। আর যদি মিলমিশ অসম্ভব বলে মনে করেন তবে তাদের মধ্যেবিচ্ছেদের ব্যাবস্থা করবেন।”
মুসলিম পারিবারিক আইনে বিরোধ মিমাংসার জন্য এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আপোষ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যান বা সালিসী পরিষদের উপর। তিনি উভয় পক্ষকে নটিশের মাধ্যমে উপস্তিত করার জন্য বলবেন। কোন পক্ষ যদি হাজির না হয় তবে তাকে হাজির করার ক্ষমতা তার নেই। স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা করা ছাড়া চেয়ারম্যানের আর কোন দ্বায়িত্ব নেই। তালাক কার্যকর অথবা অকার্যকর কোনটাই করার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নেই।
প্রকার
পদ্ধতিগত দিক দিয়ে তালাক তিন প্রকারঃ-
(ক) আহসান বা সর্বোত্তম তালাক ; (খ) হাসান বা উত্তম তালাক এবং (গ) বিদ’ই বা শরিয়া বিরূদ্ধ তালাক।
ক্ষমতা বা এখতিয়ার গত দিক দিয়ে তালাক পাঁচ প্রকারঃ- (১)তালাকে সুন্নাত (২) তালাকে বাদী (৩)তালাকে তাফবীজ (৪)তালাকে মোবারত ও (৫)খোলা তালাক।
কার্যকর হওয়ার দিক দিয়ে তালাক প্রধানত দুই প্রকারঃ- (১) তালাকে রেজী ও (২)তালাকে বাইন
তালাকে বাইন আবার দুই প্রকারঃ- (১)বাইনে সগির ও (২) বাইনে কবির।
মর্যাদা ও অবস্থানের দিক থেকে তালাক চার প্রকারঃ- (১)হারাম (২)মাকরুহ (৩)মুস্তাহাব ও (৪)ওয়াজিব

(ক)তালাকে হাসানঃ- তালাকে হাসানা তাকে বলে,যে তুহুরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সহবাস,যায়েজ অবস্থা কিংবা গর্ভাবস্থা নেই। উলালেখিত অবস্থা সমুহ নেই এমন তুহুর অবস্থায় শুধু মাত্র এক তালাক দিয়ে ইদ্দত পূর্ণ হতে দেওয়া। অর্থাৎ তিন তুহুর অতিক্রম করলে তালাকটি কার্যকর হয়ে যায়। এমতাবস্থায় স্ত্রী ইচ্ছা করলে অন্য যে কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে কিংবা তালাক প্রপ্তা স্ত্রী ইচ্ছা করলে এবং স্বামী চাইলে তারা পুনঃ বিবাহে আবদ্ধ হতে পারে। এই ধরনের তালককে বলা হয় তালাকে আহসান।
“(খ) তালাকে হাসানঃ-” হাসান তালাক হলো প্রত্যেক তুহুরে একটি করে তালাক দিবে। এই নিয়মে তিন তুহুরে তিন তালাক দেওয়ার নিয়ম কে তালাকে হাসান বলে। তালাকে হাসান দিলে অর্থাৎ তিন তুহুরে তিন তালেক দিলে সেই স্ত্রী তার স্বামীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। সে তার স্বামীর নিকট রেজাত বা পূন বিবাহে আসতে পারবেনা। তবে স্ত্রীর যদি অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ হয় এবং দ্বিতীয় স্বামী যদি কোন দৈবাত কারণে তালাক দেয় অধবা মৃত্যু বরণ করে তবে ইচ্ছা করলে পূর্বের স্বামীর সহিত বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ হতে পারবে।
“(গ) তালােক েবদীঃ-” বিদায়াত তালাক হলো কোন ব্যাক্তি একসাথে তিন তালাক দিয়ে দেওয়া বা হায়েয অবস্থায় তিন তালাক দেওয়া অথবা যে তুহুরে সহবাস করেছে সেই তুহুরে তিন তালাক দেওয়া। উল্লেখিত যে কোন প্রকারে তালাক দেওয়া হউক না কেন তালাক দাতা গুনাহগার হবে গর্ভাবস্থা প্রকাশ পাইনি এমন সন্দেহ জনক অবস্থায় তিন তালাক প্রদান করাও বিদায়াত বা হারাম। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ তালাক অনুষ্টিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন অথবা শরীয়ত প্রবর্তিত পদ্ধতি কোনটাই অনুসরণ করা হচ্ছেনা। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে চেয়ারম্যান,মেম্বার বা কোন গন্য মান্য ব্যাক্তি তালাকের নোটিশ সহি বা স্বাক্ষর করলেই তালাক হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তারা তালাকের ঘোষনা দেন না, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় তালাকের নোটিশে লিখা হয় এক তালাক,দুই তালাক, তিন তালাক ও বাইন তালাক। এমন ধরনের তালাক প্রকাশ্য তালাকে বিদয়ীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে এবং যারা এধরনের তালাক অনুষ্ঠিত করিয়া থাকেন তারা সবাই গুনাহ্গার হবেন।
ইদ্দত কাল
ইসলামে তালাকের পর একজন মহিলাকে ইদ্দত পালন করতে হয়।সেই (ইদ্দত কালীন) সময়ের মধ্যে একজন মুসলীম নারীর পুন:বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। একজন মুসলীম নারীর জন্য ইদ্দত দুই প্রকার বা ভাগে ভাগ করা সম্ভব।
১)তালাকের পর ২)স্বামীর মৃত্যুর পর
প্রথমত তালাকের পর, একজন মুসলীম নারীকে তার তালাকের পর ৯০ দিন বা তিন চন্দ্রমাস অপেক্ষা করতে হবে ।এই ৯০ দিন হচ্ছে ইদ্দত কালীন সময়।

তালাকের পর পুনর্বিবাহ
তালাকের পর স্বামী ও স্ত্র্রী পুনর্বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তবে তা শর্তসাপেক্ষ। শর্তটি এই যে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কারো সঙ্গে শরিয়া অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে এবং নতুন স্বামী তালাক প্রদানের পর আগের স্বামীর সঙ্গে পুনর্বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এই শর্তটি কঠিন কারণ ইসলাম সামান্য অজুহাতে বা রাগের মাথায় উত্তেজনাবশতঃ তালাক দেয়ার বিপক্ষে।

তালাকের অধিকার
মুসলিম আইনে তালাকের অধিকার
________________________________________
সাইদ ও লোপার বিয়ের দুই বছর পর সাইদ লোপাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। লোপা তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। বিয়ের পর থেকেই সাইদ ও তার বাবা-মা লোপাকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত। কারণ বিয়ের সময় লোপার বাবা যে যৌতুক দিতে চেয়েছিল টাকার অভাবে তার সব দিতে পারে নাই। বিয়ের সময় লোপার বাবা সাইদকে বলেছিল যে, আমন মৌসুমের পর সাইদকে তাদের দাবী মত টাকা ও মটর সাইকেল কিনে দিবে। কিন্তু গত দুই বছর আমনের ফলন কম হওয়ায় লোপার বাবা সাইদকে শুধু টাকা দিতে পারেন। মটর সাইকেল কিনে দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয় না। লোপার বাবার বাড়িতে ফিরে আসায় তার বাবা-মা চিন্তায় পড়েন। এর কয়েক দিন পরেই সাইদ লোপাকে তালাকের নোটিশ পাঠায়। লোপা কি করবে বুঝতে পারে না। প্রচন্ড অসহায়বোধ করে। বিয়ের আগে সে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিল, তাই আইন সম্পর্কে তার কিছু ধারণা আছে। একদিন সে তার বাবার সাথে উকিলের কাছে যায় পরামর্শের জন্য। উকিল তাকে তালাকের অধিকার সম্পর্কে তথ্য জানান।
উকিল : মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়ে একটি চুক্তি। এই চুক্তি যে কোন পক্ষ রদ বা ভঙ্গ করতে পারেন। বিয়ের মাধ্যমে স্থাপিত সম্পর্ককে আইনগত উপায়ে ভেঙ্গে দেয়াকে তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদ বলে। স্বামী বা স্ত্রীর যে কোন একজনের ইচ্ছাতেও (শর্তাধীন) বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। কিন্তু তোমার স্বামী তোমাকে যৌতুকের জন্য তালাক দিয়েছে যা অন্যায়।
লোপা : তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রীর অধিকার কি সমান ?
উকিল : বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাতে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সমান নয়। এক্ষেত্রে স্বামীর ক্ষমতা বা অধিকারই বেশি।
লোপা : স্বামী বা স্ত্রী কিভাবে তালাক দিতে পারে ?
উকিল : স্বামী-স্ত্রী নিম্নলিখিত উপায়ে তালাক দিতে পারেন:
• স্বামী কর্তৃক তালাক (স্বামী আইনের নিয়ম মেনে যে কোন সময় স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন।)
• স্ত্রী কর্তৃক তালাক (স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দিয়ে থাকেন অর্থাৎ তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে স্ত্রী কর্তৃক তালাক)
• পারষ্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে তালাক (খুলা বা মুবারত পদ্ধতিতে তালাক)
• আদালতের মাধ্যমে তালাক।
লোপা : স্বামী কিভাবে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন ?
উকিল : একজন মুসলিম পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মস্তিস্কের পুরুষ যে কোন সময় স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। কিন্তু সে মুখে বা লিখে যেভাবে তালাক দিক না কেন তালাক সাথে সাথে কার্যকর হবে না। ব্যাখ্যা: ১
লোপা : স্ত্রী কি স্বামীকে তালাক দিতে পারে ?
উকিল : একজন স্ত্র্রী যখন ইচ্ছা তখন স্বামীকে তালাক দিতে পারেন না। মুসলিম আইনে স্বামীকে তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রী সীমিত অধিকার ভোগ করেন। নিম্নলিখিত যে কোন উপায়ে একজন স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন:
ক. স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে
খ. তালাক-ই-তৌফিজ-এর মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে
গ. খুলা’র মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে, এছাড়া
ঘ. স্বামী-স্ত্রী দুজনই মুবারতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। ব্যাখ্যা: ২
লোপা : হিল্লা বিয়ে কি ?
উকিল : প্রাচীন সমাজে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে গেলে তারা আবার বিয়ে করতে চাইলে মধ্যবর্তীসময়ে স্ত্রীকে আরেকটি বিয়ে করতে হত। এই দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাক্তি (স্বামী) স্ত্রীকে তালাক দিলে বা মারা গেলে স্ত্রী পুনরায় প্রথম স্বামীকে বিয়ে করতে পারত। এই মধ্যবর্তীকালীন বিয়েকে ‘হিল্লা’ বিয়ে বলে। তবে বর্তমানে হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্যাখ্যা: ৩
লোপা : বিয়ে-বিচ্ছেদ বা তালাকের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কি কোন দায়িত্ব আছে ?
উকিল : বিয়ে-বিচ্ছেদ বা তালাকের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান উভয় পক্ষকে ডেকে সালিশের ব্যবস্থা করতে পারেন। ব্যাখ্যা: ৪
লোপা : এক্ষেত্রে কাজী কি দায়িত্ব পালন করতে পারেন ?
উকিল : কাজীর দায়িত্বগুলো হলো :
• জন্ম ও বিবাহের মতো তালাকও রেজিষ্ট্রি করতে হয়।
• নিকাহ নিবন্ধক কাজী তার এখতিয়ারভূক্ত এলাকার মধ্যে আবেদনপত্রের ভিত্তিতে তালাক রেজিষ্ট্রি করবেন।
• তালাক রেজিস্ট্রির জন্য নিকাহ নিবন্ধক ২০০ টাকা ফি নিবেন (এই ফি সময়ে সময়ে সরকারী প্রজ্ঞাপন দ্বারা পরিবর্তন করা হয়)।
• যে ব্যক্তি তালাক কার্যকর করেছে সে রেজিস্ট্রির জন্য আবেদন করবে এবং ফি দেবে।
• উক্ত দুই পক্ষের মধ্যে সত্যি তালাক কার্যকর হয়েছিল কিনা তা নিকাহ নিবন্ধক পরীক্ষা করে দেখবেন।
লোপা : মুসলিম পারিবারিক আইনে তালাক সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?
উকিল : মুসলিম আইনে বিয়ে একটি চুক্তি, তাই এ চুক্তি নানা কারণে সমাপ্ত বা ভংগ করা যায়। মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের চুক্তি ভেঙ্গে বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটানো সম্ভব। ব্যাখ্যা: ৫
উকিল : তোমার বিয়ে কি রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল ?
লোপা : হ্যাঁ।
উকিল : তাহলে তুমি বুদ্ধিমানের কাজ করেছ। তালাক হলে তুমি তোমার দেনমোহর পাওয়ার আবেদন করতে পারবে।
সাইদ তালাক বহাল রাখার কারণে লোপা ও সাইদের বিয়েটা টেকে না। তবে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রিশন হওয়ার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের পর লোপা সাইদের কাছ থেকে দেনমোহর ও ভরণপোষণ পান।

সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১. মুখে মুখে তালাক দিলে তালাক কার্যকর হবে কি ?
উত্তর. না, ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্টেশন আইন অনুযায়ী কাজীর মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনকে পাঠাতে হবে।
প্রশ্ন ২. স্বামী কতৃর্ক স্ত্রীকে নোটিশ প্রদান ছাড়া তালাক দিলে তালাক কি কার্যকর হবে ?
উত্তর. হ্যাঁ, তালাক কার্যকর হবে, তবে নোটিশ প্রদান না করায় স্বামীর ১ বছরের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ড হবে।
প্রশ্ন ৩.স্বামী কি স্ত্রীকে কোন কারণ ছাড়াই তালাক দিতে পারেন ?
উত্তর. হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রীকে কোন প্রকার কারণ ছাড়াই তালাক দিতে পারেন।
৪. স্ত্রী কি স্বামীকে কোন কারণ ছাড়া তালাক দিতে পারেন ?
উত্তর. না, আইনে উল্লেখিত কারণ ছাড়া স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন না।
৫. গর্ভাবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলে তালাক কি কার্যকর হয় ?
উত্তর. না, গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে তালাক কার্যকর হয় না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ প্রদান করে ৯০দিন পর তালাক কার্যকর করতে হয়।
৬. বিচ্ছেদপ্রাপ্ত/ তালাকপ্রাপ্ত স্বামী- স্ত্রী কি পুনরায় ঘর সংসার করতে পারেন?
উত্তর. ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭ (৬) ধারা অনুসারে তালাকের মাধ্যমে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, বিচ্ছেদপ্রাপ্ত/ তালাকপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রী পুনরায় একত্রে ঘর- সংসার করতে চাইলে নতুন করে নিয়ম অনুসারে বিয়ে করতে হবে; তবে পুনর্বিবাহ করে ঘর-সংসার করায় আইনতঃ কোন বাধা নেই।

মুসলিম আইনে তালাকের অধিকার : ব্যাখ্যা
ব্যাখা: ১ ◊ ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী যে ব্যক্তি তালাক দিবেন তিনি লিখিত ভাবে তালাকের নোটিশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশন বরাবরে ও স্ত্রীর কাছে একটি নোটিশ পাঠাবেন।
• নোটিশ না পাঠালে ১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হবে।
• নোটিশ পাবার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র শালিসী পরিষদ গঠন করবেন এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা আনার চেষ্টা করবেন।
• শালিসী পরিষদ উভয়কে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতি ৩০ দিনে ১টি নোটিশ করে মোট ৩টি নোটিশ প্রদান করবেন। এর মধ্যে স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হবে। স্বামীকতৃর্ক নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।
• তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে তালাক কার্যকর হবে না। তবে সন্তান প্রসব হওয়ার পর পর্যন্ত নোটিশ বহাল রাখলে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে। কিন্তু এর মধ্যে স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।
• ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে অধ্যাদেশের কোথাও নোটিশ প্রধান না করলে তালাক হবে না একথা উল্লেখ নাই। তবে স্বামী শাস্তি পাবেন।
• তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী যখন ইচ্ছা তখন একতরফাভাবে তালাক দিতে পারেন। তাকে তালাকের কারণ দেখাতে হয়না। কেন স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলেন তা স্ত্রী জানতে চাইতে পারেন না। এটি স্বামীর একতরফা ক্ষমতা।
ব্যাখা: ২ ক. আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ
১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচেছদ আইন অনুযায়ী একজন স্ত্রী কি কি কারণে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন তা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছেঃ
1. চার বৎসর যাবৎ স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে বা কোন খোঁজ খবর না রাখলে।
2. দুই বৎসর ধরে স্ত্রীর খোরপোষ প্রদানে স্বামী অবহেলা করলে বা ব্যর্থ হলে।
3. স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে।
4. স্বামী ৭ বছর বা তার চেয়ে বেশী সময়ের জন্য কারাদন্ডে দন্ডিত হলে।
5. স্বামী কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে তার দাম্পত্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে।
6. বিয়ের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করার সময় পর্যন্ত বজায় থাকলে।
7. স্বামী দুই বৎসর ধরে অপ্রকৃতিস্থ থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্থ বা মারাত্মক যৌনরোগে আক্রান্ত থাকলে।
8. আঠারো বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগে অর্থাৎ নাবালিকা অবস্থায় স্ত্রীর বিয়ে হয়ে থাকলে এবং উনিশ বৎসর হওয়ার আগেই স্ত্রী বিয়ে অস্বীকার করলে। তবে এক্ষেত্রে স্বামীর সাথে দাম্পত্য মিলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলে এরকম মামলা দায়ের করা যাবে না।
9. নিম্নলিখিত যে কোন অর্থে স্বামী স্ত্রীর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করলে-
ক. স্বামী যদি স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে থাকেন;
খ. স্বামী খারাপ চরিত্রের মেয়েদের সাথে মেলামেশা করলে কিংবা নৈতিকতা বর্জিত জীবন যাপন করলে;
গ. স্ত্রীকে জোর পূর্বক নৈতিকতাবিহীন জীবন-যাপনের জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করলে;
ঘ. স্ত্রীর অমতে তার সম্পত্তি হস্তান্তর করলে কিংবা স্ত্রীকে তার সম্পত্তির ওপর বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা দিলে;
ঙ. স্ত্রীকে তার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে বাধা প্রদান করলে।
চ. যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থেকে থাকে এবং পবিত্র কুরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বামী তাদের সাথে সমান ব্যবহার না করলে।
১০. মুসলিম আইনে স্বীকৃত অন্য যে কোন যুক্তিসংগত কারণের উপরও স্ত্রী আদালতে তালাকের অনুমতির জন্য মামলা করতে পারেন।

আদালত বিয়ে বিচ্ছেদের ডিক্রি দিলে ডিক্রির একটা সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে হবে। চেয়ারম্যান নোটিশটিকে তালাকের নোটিশ হিসেবে গণ্য করে উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান করবেন। চেয়ারম্যান যেদিন নোটিশ পাবেন তার ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।
খ. তালাক-ই-তৌফিজ-
‘কাবিন নামা’র ১৮ নং কলামে স্বামী কতৃর্ক স্ত্রীকে বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষমতা দেয়াকে ‘তালাক-ই-তৌফিজ’ বলে। এই ‘তালাক-ই-তৌফিজের’ ক্ষমতা দেয়া থাকলে স্ত্রী আদালতের আশ্রয় ছাড়াই স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এক্ষেত্রে স্বামীর মতোই স্ত্রী তালাকের নোটিশ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবেন ও এক কপি স্বামীর কাছে পাঠাবেন। নোটিশ প্রাপ্তির ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।
গ. খুলা-
খুলা তালাক হলো স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর দাম্পত্য অধিকার থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রস্তাব। এক্ষেত্রে স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে স্বামীকে বিচ্ছেদের বিষয়ে রাজী করানোর চেষ্টা করবেন। স্বামী রাজী থাকলে এভাবে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। বিচ্ছেদের উদ্যোগ অবশ্যই স্ত্রীর কাছ থেকে হতে হবে।
ঘ. মুবারত-
স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে-বিচ্ছেদ সম্পন্ন হলে তাকে মুবারত বলে। যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদের ইচ্ছাদি পারস্পারিক হয় তখন একপক্ষ প্রস্তাব করে এবং চুক্তির মাধ্যমে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। যিনি বিয়ে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দিবেন তিনিই নোটিশ পাঠাবেন।
ব্যাখা: ৩ ◊ ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
• ১৯৬১ সালের আইনে তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে হিল্লা বিয়ের দরকার হয় না।
• তবে পর পর ৩ বার তালাক হলে তৃতীয় বারের পর স্বামী ১ম স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে স্ত্রীকে আরেকটি বিয়ে দিয়ে তারপর সেই বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রথম স্বামী স্ত্রীকে আবার বিয়ে করতে পারবেন।
ব্যাখা: ৪ বিয়ে-বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হলো ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুসারে যে নোটিশ তাকে দেয়া হয় তা পাবার ৩০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষকে ডেকে সলিশের ব্যবস্থা করা। সালিশে পুনর্মিলনের একটি সম্ভাবনা থাকে বলে এখানে চেয়ারম্যান ও সালিশী পরিষদের ভূমিকা অপরিসীম।
ব্যাখা: ৫ ◊ তালাকের ক্ষেত্রে স্বামীর অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন ও স্ত্রী কর্তৃক শর্ত সাপেক্ষে তালাকের অধিকার প্রদানসহ মুসলিম পরিবারের পারিবারিক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৩৯ সালে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন এবং ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইন জারি করা হয়।
• বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে এই আইনকে পরিমার্জন ও গ্রহণযোগ্য করা হয়।
• ১৯৭৪ সালে মুসলিম বিবাহ তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন প্রণীত হয়। মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর বৈধ স্বত্ত্ব-স্বার্থ নির্ধারণ করে স্ব স্ব স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন একত্রীকরণ ও সংশোধন করে এটি প্রণয়ণ করা হয়।
• এরপর বিবাহ-তালাক বিধিমালা রেজিস্ট্রেশন ১৯৭৫ সালে জারি করা হয়।
• বিবাহ- বিচ্ছেদ, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি পারিবারিক বিষয়াদির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ প্রণীত হয়।

মুসলিম নারী অধিকার লংঘন ও প্রতিকার: তালাক
আইনগত ব্যাখ্যা
মুসলিম আইন অনুযায়ী
নিম্নলিখিতভাবে তালাক দেওয়া যায়:-
স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক
স্বামী নিজের ইচ্ছায় যখন খুশি তখন তালাক দিতে পারেন। আমাদের দেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন পূর্ন বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলিম ব্যক্তি যে কোন সময় কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। আইনের কাছে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হয়না এবং স্ত্রী,তাকে কেন তালাক দেওয়া হল তা জানতে চাইতে পারেনা। কিন্তু সে তালাক মৌখিক বা লিখিত যে ভাবেই দিক না কেন তখনই তা কার্যকর হবে না। তবে এক্ষেত্রে এখনও অনেকে মনে করেন “এক তালাক,দুই তালাক, তিন তালাক” বা বায়েন তালাক উচ্চারণ করা মাত্র তালাক হয়ে যায়। এ কারণে আমাদের দেশে এখনও এ ধরনের মুখে মুখে তালাক বহুল প্রচলিত। কিন্তু এ ধারণা ভুল৷ স্বামী যেকোন সময় তালাক দিতে পারলেও তাকে আইনগতভাবে নিয়ম মেনেই তালাক দিতে হয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বোঝানো হলো –
উদাহরণ- কাশেমের স্ত্রী হালিমা একদিন সংসারের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় রান্না করতে দেরী হয়ে যায়। কাশেম কাজের ফাঁকে দুপুরে ভাত খেতে বাড়ীতে আসলে হালিমা জানায় ভাত দিতে একটু দেরী হবে,কাশেম এতে রাগ করে তার বাড়ীর লোক ও পাড়া-পড়শীর সামনে তিনবার হালিমাকে “তালাক’ উচ্চারন করে শোনায়৷ এখন প্রশ্ন এটা কি তালাক হবে?
না হবে না৷ কারণ রাগের মাথায় তালাক হয় না৷ তালাক দেবার নির্ধারিত আইনগত পদ্ধতি রয়েছে।
স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক:
স্ত্রী নিম্নেবর্ণিত পদ্ধতিতে তালাক দিতে পারেন
(ক) আদালতের মাধ্যমে
(খ) তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে
(গ) খুলার মাধ্যমে
৩.এছাড়া স্বামী-স্ত্রী দুই জনই মুবারতের মাধ্যমে তালাক দিতে পারেন।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ অনুযায়ী
ধারা-৭:
(১) কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বা কোন স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে ইচ্ছা করলে যে কোন প্রকারেই হোক তালাক উচ্চারণ করবার পরেই সে তালাক দিয়েছে বলে চেয়ারম্যানকে লিখিত নোটিসের মাধ্যমে জানাবে ও স্ত্রীকেও/স্বামীকেও এর এক কপি পাঠাবে।
(২) কোন ব্যক্তি ১ নং উপধারার বিধান লঙ্ঘন করলে সে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে অথবা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডিত হবে।
(৩) ৫ নং উপধারার বিধান অনুযায়ী অন্য কোনভাবে প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্যে কোন তালাক পূর্বাহ্নে প্রত্যাহার না করা হলে ১ নং উপধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের নিকট প্রেরিত নোটিসের তারিখ হতে ঌ০ দিন অতিরিক্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত তালাক কার্যকরী হবে না।
(৪) ১নং উপধারা অনুযায়ী নোটিস প্রাপ্তির ৩০ দিনের ভিতর চেয়ারম্যান পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুর্নমিলন স্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি সালিশী কাউন্সিল গঠন করবেন ও এই কাউন্সিল পুর্নমিলন ঘটাবার নিমিত্ত সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
(৫) তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে ৩ উপধারায় বর্ণিত মেয়াদ বা গর্ভকাল- এই দুই-এর মধ্যে যা পরে হবে তা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকরী হবে না।
(৬) এই ধারা অনুসারে কার্যকরী তালাক মাধ্যমে যে স্ত্রীর বিবাহ ভঙ্গ হয়েছে ,ঐ বিবাহ ভঙ্গ তৃতীয়বারের মতো কার্যকরী না হয়ে থাকলে তৃতীয় ব্যক্তির সাথে মধ্যবর্তীকালীন কোন বিবাহ ব্যতীতই তার আগের স্বামীর সাথে পূনর্বিবাহে কোন প্রকার বাধা থাকবে না।
ধারা-৮:
তালাক ব্যতীত অন্যভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ:
যেক্ষেত্রে তালাক দেওয়ার অধিকার যথাযথভাবে স্ত্রীর নিকট অর্পণ করা হয় ও সে উক্ত অধিকার প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক হয় বা যেক্ষেত্রে একটি বিবাহের পক্ষদ্বয়ের যে কোন একপক্ষ তালাক ব্যতীত অন্যভাবে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে ইচ্ছুক হয় সেইক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাপেক্ষে প্রয়োজন অনুযায়ী ৭ ধারার বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে।
অন্যান্য
তালাক কখন কার্যকরী হয় না?
গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে সন্তান ভূমিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকরী হবে না৷ এক্ষেত্রে ৯০ দিন এবং সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার মধ্যে যেদিনটি পরে হবে সেদিন থেকে তালাক কার্যকরী হবে৷ অর্থাত্‍ স্ত্রী গর্ভবতী হলে, সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না৷ মনে রাখতে হবে এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্ত্রী পূর্ণ ভরণপোষণ পেতে আইনত হকদার৷
তালাকপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রী কি পুনরায় বিয়ে করতে পারবে ?
হাঁ পারে৷ ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ (৬)ধারা অনুযায়ী তালাকের মাধ্যমে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, তালাক হওয়া দম্পতি পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে সেক্ষেত্রে নতুন করে বিয়ে করতে হবে।
উদাহরণ: কাশেম তার স্ত্রী হালিমাকে তালাক দিল। তিনমাস পর কাশেম বুঝতে পারল যে, তালাক দেয়াটা তার ভূল হয়েছে এবং সে এখনো হালিমাকে ভালবাসে৷ খবর নিয়ে জানা গেল হালিমাও তার কাছে ফিরে আসতে চায়। এখন তারা যদি আবার একসাথে বসবাস করতে চায় তবে তাদেরকে পুনরায় বিয়ে করতে হবে৷ এখানে বলে রাখা দরকার যে, এক্ষেত্রে হিল্লা বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই।১ঌ৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে হিল্লা বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং তালাক হওয়া দম্পতি হিল্লা বিয়ে ছাড়াই পুনরায় বিয়ে করে একসাথে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু পরপর তিনবার তালাক হলে তৃতীয়বার স্ত্রীকে আরেকজনের সাথে বিয়ে দিয়ে তারপর বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রথম স্বামী বিয়ে করতে পারবে।
তালাকের পর সন্তান কার কাছে থাকবে ?
তালাকের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। এক্ষেত্রে ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়ঃসদ্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে৷ তবে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবা বহন করবে৷ যদি বাবা দায়িত্ব পালন না করে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সালিসীর মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন।
তালাক কখন প্রত্যাহার করা যায় ?
৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগেই তালাক প্রত্যাহার করা যায়৷ ঌ০ দিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এটা মাথায় রেখে যাতে এ সময়ের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষ ঠান্ডা মাথায় সব কিছূ ভেবে চিন্তে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পারে। একটা বিষয় পুনরায় মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, তালাক দেওয়ার নব্বই দিন পর তালাক কার্যকরী হয় কিন্তু এই ঌ০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে যে কোন দিন তালাক প্রত্যাহার করা যাবে।
তালাক রেজিস্ট্রেশন করতে হয় কি না ?
মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে তালাক রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।
উদাহরণ:জসিম তার স্ত্রী সাবিনাকে তালাক প্রদানের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে দরখাস্ত করে৷ চেয়ারম্যান সালিস ডেকে আলাপ- আলোচনা করে তালাক কার্যকরী করলে জসিম রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে তালাকটি অবশ্যই রেজিস্ট্রী করবেন।
মুসলিম বিয়ে ও তালাক ( রেজিস্ট্রেশন ) আইন ১৯৭৪ এর বিধান অনুযায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে তালাক রেজিস্ট্রি করতে পারেন ৷পর্দানশীন মহিলার ক্ষেত্রে তার কর্তৃত্ব প্রাপ্ত কোন ব্যাক্তি তালাকের আবেদন পেশ করতে পারেন৷ স্বামী স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করেছিলেন সে মর্মে কোন দলিল বা দলিলের সত্যায়িত প্রতিলিপি ছাড়া নিকাহ রেজিস্ট্রার তালাক-ই-তৌফিজ হিসেবে পরিচিত কোন তালাক রেজিস্ট্রি করবেন না ৷ নিকাহ রেজিস্ট্রার তালাক রেজিস্ট্রি করতে অস্বীকার করলে উক্ত অস্বীকৃতির ত্রিশ দিনের মধ্যে আবেদনকারী জেলা রেজিস্ট্রারের নিকট আপীল দায়ের করতে পারেন এবং সে ক্ষেত্রে জেলা রেজিস্ট্রারের আদেশ চূড়ান্ত বলে গন্য হবে (ধারা-৬)।
কোন বিয়ে বা তালাক রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হবার পর নিকাহ রেজিস্ট্রার সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে নিকাহনামা বা তালাকনামার সত্যায়িত প্রতিলিপি প্রদান করবেন এবং ঐরূপ সত্যায়িত প্রতিলিপির জন্য কোন ফি আদায় করা যাবে না (ধারা-৯)৷
[মুসলিম বিয়ে ও তালাক ( রেজিস্ট্রেশন ) আইন ১৯৭৪ পরে সংযোগ করা হবে]
তালাক রোধে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব:
অনেক সময় দেখা যায়,মানুষ রাগের মাথায়
অথবা আবেগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ পরে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু তখন কি করবে তা বুঝে উঠতে পারে না। এক্ষেত্রে যদি চেয়ারম্যান সালিসীর মাধ্যমে উভয় পক্ষকে ডেকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার দ্বারা তাদের মধ্যে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করে দেন তবে দু’পক্ষেরই ভালো হয়। এজন্য বলা হয় তালাক রোধে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও গুরুত্ব অপরিসীম।

গ্রেফতার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধি……

1520700_543494415741878_941575980_n

সন্দেহজনক গ্রেফতার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা এবং রিমান্ড
সংক্রান্ত ১৬৭ ধারার অপব্যবহারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট্র (ব্লাষ্ট) সহ আরো কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এক রায়ে ছয় মাসের মধ্যে এ দুটি বিষয়ে প্রচলিত আইন সংশোধনের নির্দেশ দেয়। আইন সংশোধনের পূর্বে হাইকোর্টের কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারকে আদেশে বলা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়,

ক) আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না।

খ) কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।

গ) গ্রেফতারের কারণ একটি পৃথক নথিতে পুলিশকে লিখতে হবে।

ঘ) গ্রেফতারকৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলে তার কারণ লিখে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে ডাক্তারি সনদ আনবে পুলিশ।

ঙ) গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতকে এর কারণ জানাতে হবে।

চ) বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃতের নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে।

ছ) গ্রেফতারকৃতকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।

জ) গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের অভ্যন্তরে কাঁচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন।

ঝ) কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া না গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে সর্বোচ্চ তিনদিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে।

ঞ) জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।

ট) পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দ-বিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।

ঠ) পুলিশ হেফাজতে বা কারাগারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটকে
জানাতে হবে।

ড) পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। মৃত ব্যক্তির ময়না তদন্ত করা হবে। ময়না তদন্তে বা তদন্তে যদি মনে হয় ওই ব্যক্তি কারা বা পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মৃত ব্যক্তির আত্মীয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তা তদন্তের নির্দেশ দিবেন।

হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে এবং নির্দেশনার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা হয়। কিন্তু আপিল বিভাগ নির্দেশনাগুলো স্থগিতাদেশের আবেদন নাকচ করে দেয়। সুতরাং হাইকোর্টের ওই নির্দেশনা মান্য করা সকলের জন্যই বাধ্যতামূলক। কিন্তু সরকার, পুলিশ এমনকি খোদ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই নির্দেশনাগুলো মানছে না।

আইন তৈরী করা হয় তা প্রয়োগ করে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নি¤œ আদালত বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কেউ আইন মানতে রাজী নন। এ অবস্থা যদি অব্যাহত গতিতে চলে তাহলে দেশ কোথায় গিয়ে পৌছবে! নি:সন্দেহে আইনের শাসন মুখ থুবড়ে পড়বে। আর এটা হলে দেশে অস্থিরতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। দেশের অস্তিত্ব হবে বিপন্ন।

সম্পত্তির কত অংশ উইল করা যায় :

1520700_543494415741878_941575980_nকোনো মুসলমান তার দাফন-কাফন ব্যয় ও দেনা পরিশোধের পর, উদ্বৃত্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের অধিক উইলমূলে হস্তান্তর করতে পারে না। উইলকারীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীরা সম্মতি না দিলে উইলের মাধ্যমে বৈধ এক-তৃতীয়াংশের অধিক পরিমাণ সম্পত্তি দান কার্যকর হবে না।
পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়নি এমন ব্যক্তির ব্যাপারে উইল : নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত এখনো ভূমিষ্ঠ হয়নি এমন ব্যক্তির বরাবরে উইল বাতিল বলে গণ্য হবে।

(ক) যে ক্ষেত্রে যার বরাবরে উইল করা হয়, সে একটি ঋণ মাত্র এবং উইল করার ছয় মাসের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়, অথবা

(খ) যে ক্ষেত্রে উইলগ্রহণকারীরা কোনো বিশেষ ব্যক্তির অনির্ধারিত ছেলেমেয়ে এবং তার উইলকৃত সম্পদ মৃত্যুর সময় বিদ্যমান থাকে। উইল করার সময় বিদ্যমান নেই, কিন্তু উইলকারী ব্যক্তির বরাবরে উইল বৈধ।

THE ARTHA RIN AIN, 2003

auction_DS

Generally Money Suit is filed before the Civil Courts in order to realize outstanding demand. But these general provisions of law proved to be inadequate in many respects. Especially the Financial Institutions were suffered a lot for want of effective and speedy machinery to realize their unpaid claim. In consequence thereof the economic flow of the country was going to be paralyzed. Being realized these facts; a special legislation was at first promulgated in the name of Artha Rin Adalat Ordinance, 1989 and subsequently the said Ordinance replaced with the enactment of Artha Rin Ain of 1990 for realization of outstanding demand of Financial Institutions. But in course of time that very Act seemed to be again inadequate to face various new problems during the trial and execution proceedings. Thus, with a view to make the said Act more amended and consolidated, the Arhta Rin Adalat Ain, 2003 has been enacted for recovery of dues by Financial Institutions.

THE KIND OF LOAN WHICH CAN BE RECOVERED:

The following kind of Loans can be recovered under this Act as defined in Section 2 of the Act:

• Advance, credit, cash credit, overdraft, bank credit, discounted or purchased bill, investment made by the financial institutions regulated in accordance with Islamic Sharia or any other financial favour or facilities described in whatever name;
• Guarantee, indemnity, letter of credit or any other financial arrangement, which any financial institution grants or issues in favour of the borrower or accepts as liability.
• Loan granted by financial institutions to any of its officer or servants.
• Legally imposed any interest, penalty interest or profit or lease upon the above-mentioned debt or in some cases investment made by the financial institutions regulated in accordance with Islamic Sharia.

SPECIAL REORGANIZED COURT ESTABLISHED UNDER THIS ACT:

Sections 4 & 5 of the Act provide for the provisions of establishment of distinct Artha Rin Adalat. This court shall have exclusive jurisdiction to try the suits filed by the financial institutions for realization of debt. This court has been excluded from exercising any other civil or criminal jurisdiction.

JURISDICTION OF THE ARTHA RIN ADALAT:
All suits relating to the realization of loan of a financial institution including Mortgage Suit for foreclosure and sale and even public demand of more than Tk. 50,000.00 (Taka fifty thousand) are exclusively triable by the Artha Rin Adalat.

A Financial Institution cannot file a Mamla before the Adalat accusing its employees for misappropriation of money labeled it as debt.

A borrower is not entitled to file any Mamla before this Adalat against any Financial Institution though the cause of action may arise from debt.

PRIOR CONDITION TO FILE ARTHA RIN MAMLA: (SECTION 12)
No financial institution is entitled to file an Artha Rin Mamla before the Adalat without adjusting the liability by selling the property (movable or immovable) under lien, pledge, hypothecation or registered mortgage of which the financial institution is lawfully authorized to sell by dint of irrevocable notarized power of attorney in case of movable property and registered power of attorney in case of immovable property.

For selling the above-mentioned property, the financial institutions shall follow the procedure of auction sale provided in Section 33 of the Ain so far as it is possible.

After selling the property in question, if the financial institution fails to make delivery of possession to the purchaser, it can take recourse to the District Magistrate and the District Magistrate or his nominated Magistrate of the First Class upon satisfaction of mortgage against debt, shall take necessary step to transfer the possession of the property to the concerned purchaser on behalf of the Financial Institution.

• AFFIDAVIT AS SUBSTANTIVE EVIDENCE: (SECTION 6)
Every plaint and written statements has to be attached with an affidavit and this affidavit shall be treated as substantive evidence so that the trial court may make instant order or pass judgment only upon perusing the concerned plaint or written statement together with other documentary evidence without deposition of any witness.

NO SET OFF OR COUNTER CLAIM (SECTION 18)
The borrower-defendant is not entitled to claim set off or counter claim by filing written statement in a Mamla filed against him by the Financial Institution.

NO ANALOGOUS HEARING (SECTION 18)
If a borrower files a suit against any Financial Institutions before the general court and the Financial Institution again files another Mamla before the Artha Rin Adalat, then the two suits shall not be heard analogously in any of the said court in spite of the fact that the suits have been arisen out of the same cause of action.

NO DISMISSAL OF MAMLA (SECTION 19)
No pending Mamla before the Artha Rin Adalat shall be dismissed on account of non-appearance of the plaintiff or any kind of failure on the part of the plaintiff. In this case the Adalat shall adjudicate the Mamla upon verification of the documentary evidence.

EX PARTE DECREE: (SECTION 19)
The Adalat shall hear the suit ex parte and pass a decree against the defendant if the defendant does not appear before the court on the day fixed for hearing or when the Mamla is taken for hearing but the defendant is not available at that very time.

SET ASIDE EX PARTE DECREE: (SECTION 19)
The defendant may file an application for setting aside the ex parte decree within 30 days from the day passing of the ex parte decree or from the day when the defendant come to know about the ex parte decree.
In order to setting aside the ex parte decree, the defendant is required deposit 10% of the decreetal amount within 15 days from day of filing the application-
• by cash payment to the concerned Financial Institution as recognition of claim made by the plaintiff, or
• by Bank Draft, Pay Order or any kind of Negotiable Instrument to the Court as security.

Upon payment of the said 10% decreetal amount, the ex parte decree shall be set aside and the Mamla will be immediately restored in the original number and file; failing which the Adalat shall straightly dismiss the application for setting aside the ex parte decree.

ALTERNATIVE DISPUTE RESOLUTION
The provisions of alternative dispute resolution (ADR) is a unique feature of the Artha Rin Adalat Ain, 2003. After filing the written statement, the proceeding of ADR shall start by adjourning the next procedure of the suit. Only two kinds of ADR are recognized by the Act:
1. Settlement Conference; and
2. Mediation.

Settlement Conference:
Settlement Conference means a conference presided over by the judge of the Adalat in which the parties to the suits, their appointed lawyers and their representatives may be present. The judge shall play co-operative role with a view to settle the dispute on the basis of cooperation, sympathy and mutual understanding in a informal, non-contesting, non-obligatory and confidential environment.

Mediation:
Instead of Settlement Conference, the Adalat may forward the suit to the appointed lawyers or the parties tot the suits for resolving the dispute through Mediation. The lawyers shall mutually appoint a mediator upon consultation of the parties to the suit among the following kinds of person:

1. Any lawyer who is not engaged by the parties
2. Any retired judge
3. Any retired officer of a Financial Institution
4. Any other competent person other than a person employed in the profitable service in the Republic.

Delegation of power to the local officers:
In order to make the provisions of ADR effective, the Financial Institution may pass resolution by its Board of Directors empowering the central, regional or local officer/mangers to take necessary action in this regard and issue a circular to that effect. The Circular shall precisely contain
• The limitation of delegated power or authority;
• The principle and procedures to enforce that power.
The Financial Institutions shall submit a copy of that circular to the respective Artha Rin Adalat.

EXECUTION
Enforcement of the Code of Civil Procedure:
The provisions of the Code of Civil Procedure shall be applicable in the execution suit so far as they are not contradicting with the provisions of the Ain.

LIABILITY OF MORTGAGOR AND GUARANTOR (SECTION 6):
Generally the principal debtor, third party mortgagor and third party guarantor are jointly and severally liable for making repayment of the outstanding liability to the Financial Institution. Nevertheless when the dues are realized through execution, the principal debtor, third party mortgagor and third party guarantor are liable to pay the decreetal amount consecutively. That is, at first the principal debtor, then third party mortgagor and at last third party guarantor shall be liable to pay the decreetal amount.

Principal debtor third party mortgagor third party guarantor.

APPEAL:
Upon deposit of Tk. 50% of the decreetal money to the decree holder or to the Court, the aggrieved party may prefer an appeal against the order or decree of the Artha Rin Adalat before-

The Court of District Judge: Where the decreetal amount is upto 50 lac.
The High Court Division: Where the decreetal amount is more than 50 lac.

But the Financial Institution need not to deposit any money or security to prefer any appeal against the judgement or order of Artha Rin Adalat.

The appellate court shall dispose of the appeal procedure within 90 days from the date of acceptance of appeal and in some cases another 30 days may be extended.

REVISION:
Upon deposit of Tk. 75% (including 50% during appeal) of the decreetal money to the decree holder or to the Court, the aggrieved party may file a revisional application against the judgment or decree of the appellate court.

The revisional court shall dispose of the revisional procedure within 60 days from the date of acceptance of revision and in some cases another 30 days may be extended.

APPEAL BEFORE THE APPELLATE DIVISION OF THE SUPREME COURT:
The aggrieved party may prefer an appeal before the Appellate Division of the Supreme Court against the judgement, decree or order passed by the High Court Division in an appellate or revisional procedure. In this case the Appellate Division may order to deposit the rest of the decreetal money or any amount of them as the Hon’ble Court thinks fit and proper.
_____________________________________

পুলিশ সংস্কার আইন কবে হবে কেউ জানে না গবেষণাতেই কাটল ছয় বছর

প্রস্তাবিত পুলিশ সংস্কার আইন নিয়ে গবেষণাতেই কাটল ছয় বছর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা কমিটিতে আরও কত সময় ধরে গবেষণার পর আইনটির অনুমোদন মিলবে-সংশ্লিষ্টদের কারও জানা নেই। তবে তারা বলছেন, পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে যে সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়, তা আটকে আছে সেই অনাকাক্সিক্ষত রাজনৈতিক প্রভাবেই।বাংলাদেশ পুলিশ অধ্যাদেশ-২০০৭ প্রস্তুত কমিটির সভাপতি ও সাবেক আইজি এ এস এম শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার অনুমোদন করাটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তবে প্রস্তাবিত খসড়াটি যে অনুমোদন করতে হবে তা নয়। এর পরিবর্তন করেও করা যায়। মূলকথা হলো, ১৮৬১ সালের পুলিশ রেজুলেশন অব বেঙ্গলের (পিআরবি) পরিবর্তন প্রয়োজন। জনগণকে শাসন করার জন্যই ওই আইনটি। জনগণের মঙ্গলের জন্য, সেবাধর্মী একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশকে তৈরি করতে আইনের পরিবর্তন জরুরি। গণতান্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনের পরিবর্তনের বিকল্প নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবিত আইনটিতে তাই-ই করা হয়েছে। পুলিশকে জনগণের সেবক করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে এ আইন পাস হলে মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না পুলিশকে। এ কারণে এ অধ্যাদেশ অনুমোদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন খুব একটা আগ্রহী নয়। অন্যদিকে এ অধ্যাদেশের প্রতি পুলিশ বাহিনীর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। যদিও বাহিনীর কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না। কেননা ইতিপূর্বে এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস পেতে হয়েছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে। সেই থেকে পুলিশ কর্মকর্তারাও সংস্কার বাস্তবায়নের দাবির ব্যাপারে সাবধানী। সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীর সংস্কারে প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ পুলিশ অধ্যাদেশ ২০০৭’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ সুপার থেকে আইজিপি পর্যন্ত কাউকেই তাদের পদায়নের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে বদলি বা অপসারণ করা যাবে না। পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে মন্ত্রী-এমপি বা যে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির মৌখিক, লিখিত বা টেলিফোনে সুপারিশ ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনৈতিক খবরদারি ও হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই এই প্রস্তাবিত আইনে। আইনটি পাস হলে পুলিশকে রাজনৈতিক বা দলীয়ভাবে ব্যবহার করা যাবে না। অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, পুলিশকে অতিমাত্রায় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আইনটিতে। রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের প্রতি অনাস্থাই এ আইনটির মূল ভিত্তি। অন্যদিকে পুলিশ বাহিনীর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার আইন অনুমোদন দেওয়া উচিত। তাদের মতে, যেহেতু পুলিশের ওপর কোনো খবরদারি থাকবে না, তাই অনুমোদনও মিলছে না এ আইনের। জানা গেছে, ১৮৬১ সালের পুলিশ রেজুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) পরিবর্তন করে একটি যুগোপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে প্রণয়ন করা হয় পুলিশ অধ্যাদেশ-২০০৭। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যাদেশের খসড়া পাঠানো হয় তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। তখন অধ্যাদেশটি অনুমোদন দেওয়ার আগে জনমত যাচাই করা হয়। মতামতসহ অধ্যাদেশটি আবার তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়। তিনি মতামতসহ অধ্যাদেশটি পর্যালোচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। এরপর ২০০৮ সালের মার্চে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. শেখ আবদুর রশিদের নেতৃত্বে গঠন করা হয় পর্যালোচনা কমিটি। এ কমিটি অধ্যাদেশের ২৩টি ধারাসহ কয়েকটি উপ-ধারার ব্যাপারে আপত্তি জানায়। এরপর থেকেই প্রস্তাবটি ফাইলবন্দী।এ ব্যাপারে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে আলোচনা করে এ অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এটির অনেক দিক অনেকের কাছে ভিন্নরূপ মনে হতে পারে। কিন্তু প্রণীত অধ্যাদেশটিতে অনেক দিক আছে যেগুলো পুলিশকে যুগোপযোগী করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এতে সরকারও সুফল পেতে পারে। যেসব দিক সরকারের সঙ্গে একমত হবে না তা পরিবর্তন বা বাদ দিয়ে পুলিশ অধ্যাদেশটি পাস করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তারা। পিআরপি সূত্র জানিয়েছে, খসড়া প্রস্তাবে ১১ সদস্যের জাতীয় পুলিশ কমিশন, ৫ সদস্যের স্বাধীন পুলিশ অভিযোগ কর্তৃপক্ষ এবং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে দ্রুত সাজা দেওয়ার জন্য পুলিশ ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। পিআরপির দাবি, পুলিশ অধ্যাদেশ-২০০৭ এ যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা অনুমোদিত হলে পুলিশ বাহিনীর আমূল পরিবর্তন হবে। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, গতিশীল ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে পুলিশ। এদিকে নানা চেষ্টা তদবিরের পরও দীর্ঘদিনে পুলিশ সংস্কারের অনুমোদন না মিললেও থেমে নেই পুলিশ সংস্কার কর্মসূচি। এর আওতাধীন বেশকিছু কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। তা সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়নে চলছে নানা উদ্যোগ। রিফর্ম  প্রোগ্রামের আওতায় পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, যুগোপযোগী এ সংস্কারের সুফলও জনগণ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের সংস্কার কর্মসূচি সাতটি কম্পোনেন্টে ভাগ করে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এগুলো হচ্ছে অপরাধ দমন, মানব পাচার রোধ, যোগাযোগ, কর্মসূচি ব্যবস্থাপনা, কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণ এবং তদন্ত, অপরাধ দমন অভিযান, মামলা পরিচালনা।

বিহারি যুবকের মৃত্যু: ৩ এসআইয়ের বিরুদ্ধে মায়ের মামলা

খবর বাংলাদেশ > বিহারি যুবকের মৃত্যু: ৩ এসআইয়ের বিরুদ্ধে মায়ের মামলা

untitled-20_55793

 

রাজধানীর পল্লবী থানা হাজতে ছেলেকে ‘হত্যার’ অভিযোগ তুলে তিন এসআই ও পুলিশের এক সোর্সকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের মা।

বুধবার মহানগর হাকিম আনোয়ার সাদাতের আদালতে মামলাটি করেন খোরশেদা বেগম।

পরে এই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা আগের একটি মামলার সঙ্গে তা যুক্ত করে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতের পর মিরপুর ১১ নম্বরের ইরানি ক্যাম্প থেকে নিহত জনিসহ পাঁচ জনকে আটক করে পল্লবী থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

 

পুলিশের দাবি, ভোরে অসুস্থ বোধ করার পর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

বাদীর আইনজীবী বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) মো. আবু তৈয়ব জানান, আদালতে করা এ মামলায় এসআই জাহিদুর রহমান, আব্দুল বাতেন, শোভন কুমার সাহা ও পুলিশের সোর্স সুমনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি নাম উল্লেখ না করে আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত শোভন কুমার সাহা অজ্ঞাতপরিচয়ের ৪০/৫০ জনকে আসামি দেখিয়ে খুনের অভিযোগে পল্লবী থানায় আগের মামলাটি করেন।

আদালতে করা মামলায় নিহত জনির ময়নাতদন্তের চিকিৎসকসহ ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন নির্বাহী হাকিমও রয়েছেন। তার নাম মাহবুবুর রহমান।

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নৃশংসতা

1980814_601921409861741_1463225610_nনা, ইনি নৃশংস আবুগারিব অথবা বর্বর আওয়ামী কারাগারের কোনো কয়েদী নয়, সুদানের দার্পুরের অধিবাসীও নয় আবার প্রতিবন্ধী হয়েও এই মানুষটি জন্ম নেয়নি। ছবিতে যেই মানুষটিকে দেখছেন তিনি চবি জীববিজ্ঞান শিক্ষার্থী রাহাত। গত ১২ জানুয়ারী অবৈধ দখলের উদ্দেশ্যে চবির আমানত হলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ, পুলিশের শেল্টারে জবাই করে হত্যা করে আমানত হল শিবির সহসভাপতি মামুন হোসেনকে। অন্য পাঁচজনকে কুপিয়ে মৃত ভেবে চলে যায়, তাদের মধ্যে একজন এই রাহাত ! রাহাতের হাত-পা চারটিই এখন অকেজো, মাথার একপাশ প্রায় ছিঁড়ে যাওয়ায় স্মৃতি বিভ্রম হয়ে কাউকেই চিনেন না…। জন্মের পর কাউকে না চিনতে পারলেও মা’কে ঠিকই চিনত রাহাত। তারপর তাঁর বেড়ে উঠা অনেক চেনা জানার মধ্যে, ভাগ্যের কি নির্মমতা এখন সেই গর্ভধারিনী মা’কেও রাহাত চিনেনা। আর চিনবেইবা কেন? বেছে আছে তাও কম কিসের ??? মৃতপ্রায় রাহাত এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে পঙ্গু জীবন কাটাচ্ছে। বাবা-মার আদরের খোকা রাহাত জীববিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি হয়েছিল একরাশ স্বপ্ন নিয়ে, কতক মানুষের কতক চাওয়া কিন্তূ সব চাওয়া না পাওয়াতেই থেকে গেল। ছাত্রলীগ নামক সশস্র সন্ত্রাসী সংগঠন ও তাদের রাজনীতি রাহাতের সেই স্বপ্ন চূর্ণ করে এখন তাকেই বাবা-মা’র বোঝা বানিয়ে দিল !!! রাহাত যদি তার অকার্যকর শরীর সম্পর্কে জানত তাহলে সে এখন মৃত্যুর আকাংখাই করত!!! ……………….. ধিক্কার জানাই- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে, যারা তদন্ত কমিটির নামে নোংরা রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির চর্চা করছে পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে…।

তদন্ত খেইহারা

* কাল হাইকোর্টে যাবে র‌্যাব
* ক্ষুব্ধ বাদী, হতাশ স্বজন
অঅ-অ+
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় খেই হারিয়ে ফেলা তদন্ত নিয়ে অভিযোগ অন্তহীন। বাদীসহ নিহত দম্পতির স্বজনদের সঙ্গে কার্যত যোগাযোগহীন তদন্ত সংস্থা। প্রায় দুই বছর আটকে রাখা সন্দেহভাজনদের ‘অপরাধ’ সম্পর্কেও নেই স্পষ্ট ভাষ্য। খুনি শনাক্তে কোনো অগ্রগতির তথ্য মেলেনি কখনো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তাসহ তদন্ত- সংশ্লিষ্টদের নানা আশাবাদে কার্যত বিভ্রান্তি বেড়েছে দফায় দফায়। ক্ষুব্ধ, হতাশ গণমাধ্যমকর্মীরা আন্দোলন করেছেন নিহত দম্পতির স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে। তার পরও অনুসন্ধান আর কথিত প্রচেষ্টায় সীমাবদ্ধ সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত। এ পরিস্থিতিতেই ‘তদন্ত অগ্রগতি’ জানতে হাইকোর্ট তলব করেছেন তদন্ত কর্মকর্তাকে। বর্তমান তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের পক্ষ থেকে কাল আদালতে এ বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে। থানার পুলিশের হাত ঘুরে দায়িত্ব পাওয়া গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত ব্যর্থতার কথা আদালতে স্বীকার করলে তদন্তভার দেওয়া হয়েছিল র‌্যাবকে। কিন্তু এখনো আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো অগ্রগতির সংবাদ তদন্তকারীরা দিতে পারেননি।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার হাবিব কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে অগ্রগতির সংবাদ জানাবেন। এ হত্যারহস্য উদ্ঘাটন ও খুনিদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। তদন্তের শুরুতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রুনির ঘনিষ্ঠজন ও সহকর্মীদের দিকেই সন্দেহের তীর ছুড়েছিলেন। এরপর তদন্ত আকস্মিক ঘুরে যায় ‘গ্রিল কাটা’ চোরতত্ত্বের দিকে। কয়েক দফায় ‘নমুনা চোর’ নিয়ে বাসাটির রান্নাঘরের জানালায় মহড়া চলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। সে তত্ত্ব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় এরপর তদন্তকারীরা ছোটেন ‘পেশাদার চোরের’ সন্ধানে। আরেকটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা চোরদের ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ খুঁজতে এবার ডিএনএ টেস্টের পথে হাঁটেন তদন্ত- সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ দুই বছরের মাথায় তাঁরা জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন কারো ডিএনএ ফলাফল মিলছে না ‘সম্ভাব্য খুনিদের’ নমুনার সঙ্গে।
এ হত্যা মামলার বাদী ও নিহত রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের অন্ধকারে রেখে কী তদন্ত হচ্ছে বুঝতে পারছি না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনি গ্রেপ্তারের কথা বলে দুই বছর পার করে দেওয়া হলো। তদন্তকারীরা কোনো অগ্রগতির সংবাদ যেমন দিতে পারেন না, তেমনি যোগাযোগও রাখেন না। সাগর-রুনির বাসাটির তালা খোলার জন্য তদন্তকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, স্যারদের সঙ্গে আলাপ করুন, আবার ঊর্ধ্বতনদের বললে তাঁরা জানান, এ ব্যাপারে তদন্তকারীর সঙ্গে কথা বলুন। এ হত্যার তদন্ত নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমরা শুধু দেখতে চাই খুনি কে বা কারা। আন্তরিকভাবে তদন্ত করলে রহস্য উন্মোচন এত দিনে সম্ভব ছিল।’
তদন্ত খেইহারা
আদালতে যাচ্ছে র‌্যাব : গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে তলব করে আদেশ জারি করা হয়েছে। আগামীকাল ৫ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে তদন্ত অগ্রগতি বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য র‌্যাবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সাগর-রুনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা আসামি বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম ও কামরুল হাসান অরুণের জামিন আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। এ তিন আসামিকে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর সাগর-রুনি হত্যা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। ২০১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাদের বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তে তালগোল : রুনির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্ট ধরে তদন্ত শুরু করেছিল ডিবি পুলিশ। সে সুবাদে অনেক সন্দেহভাজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আটক করা হয় এক বন্ধুকে। একপর্যায়ে ডিবির তদন্তদল ‘গ্রিল’ তত্ত্বে প্রবেশ করে। ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের ছোট একটি গ্রিল বাঁকানো ছিল। তা দিয়ে খুনিদের পলায়ন বিষয়ে মহড়া চলে। অবশেষে র‌্যাব বাঁকানো গ্রিলটি আলামত হিসেবে জব্দ করেছে। এ ছাড়া দীর্ঘ তদন্তেও জানা যায়নি জোড়া খুনের সেই রাতে সাগর-রুনির ফ্ল্যাটে কারা ঢুকেছিল। তদন্তের শুরুতে রুনির পরিবার, বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজনকে সন্দেহের আওতায় রেখে অনেক কথা বলা হয়। সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। সর্বশেষ ডিএনএ পরীক্ষা শেষে বলা হচ্ছে, কারো সঙ্গেই মিলছে না ডিএনএ ফলাফল। এখনো কিছু পরীক্ষা বাকি আছে, তা থেকে অন্য কারো সন্ধান মিলতে পারে বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ পর্যন্ত হত্যা ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাতজনকে। তাঁদের মধ্যে আছেন রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর রহমান। গ্রেপ্তার করা হয় সাগর-রুনির বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পালকে। আরেক নিরাপত্তাকর্মী হুমায়ুন কবীর ওরফে এনামুলকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। গত বছর র‌্যাব এনামুলকেও গ্রেপ্তার করে। যদিও দুই নিরাপত্তাকর্মীকেই জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছিল ডিবি। এর আগেই এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ২০১২ সালের আগস্টে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ আসামি রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণকে। এ আটজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাদের ডিএনএনমুনাও পরীক্ষা করা হয়। তবে এই সবকিছুরই ফল হয় শূন্য। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি ডিএনএ রিপোর্টে রুনির কাপড় থেকে তৃতীয় এক ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। তবে অন্তত ১১৬ জনের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মেলেনি সেই ডিএনএ প্রোফাইল। তদন্তভার পেয়ে বিভিন্ন সময় এসব ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে র‌্যাব।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তের বর্তমান অবস্থায় কাকতালীয়ভাবে কিছু প্রমাণ মিলে গেলে তদন্তে গতি আসবে। কার্যত যেসব বিষয় ধরে নানাদিকে তদন্ত ঘুরেছে কোনোদিকেই ফলাফল মেলেনি। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া সম্ভাব্য সব রকম কারণ মাথায় রেখে তদন্ত করায় প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হয়েছে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
তালাবদ্ধ ফ্ল্যাট : রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২-শাহজালাল রশিদ লজ। এ বাড়িরই চতুর্থ তলায় এ/৪ নম্বর ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন সাগর-রুনি। গত দুই বছর তদন্তের স্বার্থে ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ। তদন্ত কর্মকর্তারা আলামত সংগ্রহ ও সন্দেহভাজনদের নিয়ে নানা মহড়ায় মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটের তালা খুলেছেন। বর্তমানে আর তা সংরক্ষণের প্রয়োজন মনে করছেন না বলে তদন্ত কর্মকর্তা নিহতের স্বজনদের জানিয়েছেন। তবে তালা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে যোগাযোগ করলে সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী নওশের রোমান। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু আলামত নষ্ট হলেও ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই ফ্ল্যাটটি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কব্জায়। সে ক্ষেত্রে সব আলামত নষ্ট হওয়া কিংবা হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। আলামত নিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের নানা রকম বক্তব্য এ হত্যা ঘটনার রহস্য আরো জটিল করে তুলেছে।
তদন্ত ব্যর্থতা : হত্যা ঘটনার দুই মাসের মাথায় মামলা তদন্তে গড়িমসি ও নানা রকম রহস্য তৈরি হওয়ায় আদালত তলব করেছিল পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাকে। হত্যাকাণ্ডের ৬২ দিনের মাথায় হাইকোর্টে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ডিবি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম আদালতে গিয়ে এ ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে আসেন। ফলে আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাবকে। তদন্তভার গ্রহণ করে র‌্যাব ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল কবর থেকে নিহত দম্পতির লাশ তুলে সংগ্রহ করা হয় ভিসেরা ও ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা। এরপর দুই দফায় ডিএনএ নমুনা পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। রক্তমাখা জামাকাপড়. বঁটি, ছুরি, মোজা ব্যবহার করা হয় ডিএনএর আলামত হিসেবে। সন্দেহভাজনদের ডিএনএ পরীক্ষায় র‌্যাবের কসরতে আশাবাদী হন অনেকে। তবে দীর্ঘ তদন্তেও কোনো ‘গতি’ আসেনি অপরাধী শনাক্তে। বরং তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এত দিন যাদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত চলছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা। অথচ তাঁদের জামিন অথবা মুক্তিতেও রয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের আপত্তি। আটককৃতদের জামিন শুনানিতে এ ধরনের নানা তথ্য উপস্থাপন হলে আদালত তলব করেছে তদন্ত কর্মকর্তাকে। র‌্যাবও কি গোয়েন্দা পুলিশের মতো একইভাবে ব্যর্থতা স্বীকারের বয়ান দেবে? তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
ক্ষুব্ধ গণমাধ্যমকর্মী : দুজন গণমাধ্যমকর্মীর হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে ধারাবাহিক ব্যর্থতায় স্বজনদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তাঁরা সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও সন্দিহান। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকার দুই দিনের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিলেও দুই বছর পেরিয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে গিয়ে ব্যর্থতা স্বীকার করে এসেছে, এরপর র‌্যাব তদন্ত শুরু করে নানা আশাব্যঞ্জক কথা বললেও কার্যত ফলাফল এখনো শূন্য। আমরা আশা করব, সরকার ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দ্রুত সবাইকে এ লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন আলামতহীন হত্যা ঘটনায় আমাদের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা খুনি শনাক্ত করবেন বলে আমরা মনে করি। এ হত্যা ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সরকার আন্তরিক হলে অবশ্যই এ খুনের রহস্যভেদ হবে বলে আমরা আশা করি।

 

বিপজ্জনক দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয়

কালের কণ্ঠ অনলাইন
শেয়ার – মন্তব্য (0) – প্রিন্ট
অঅ-অ+
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয়। আফগানিস্তানের চেয়েও ভারতে বোমা হামলায় নিহত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। ভারত সরকারের তথ্যেই বিষয়টি উঠে এসেছে। ভারতের ন্যাশনাল বোম্ব ডাটা সেন্টারের (এনবিডিসি) তথ্য মতে, সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হিসেবে ইরাক ও পাকিস্তানের পরই ভারতের স্থান। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও সিরিয়াও ভারতের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ।
এনবিডিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ভারতে ২১২টি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। আর আফগানিস্তানে বিস্ফোরিত হয়েছে ১০৮টি। একই সময়ে বাংলাদেশে বিস্ফোরিত হয়েছে ৭৫টি, সিরিয়ায় ৩৬টি। তবে ভারতে ২০১২ সালের চেয়ে ২০১৩ সালে বোমা কম ফাটলেও হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১২ সালে ২৪১টি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিল ১১৩ জন, আহত হয়েছিল ৪১৯ জন। আর ২০১৩ সালে ২১২টি বোমায় ১৩০ জন নিহত ও ৪৬৬ জন আহত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে বোমা বিস্ফোরণ ৮০ ভাগ বেড়েছে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

ধূমপান সম্বন্ধে জেনে নিন সাতটি অজানা তথ্য

অঅ-অ+
আমরা অনেকেই জানি, ধূমপানের ফলে ক্যানসার ও হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ হয়, যৌনক্ষমতা ও সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু এগুলোই সবকিছু নয়। ধূমপানের আরো কিছু বিষয় আছে, যা সাধারণ মানুষের জানা নেই। ধূমপানের এসব অজানা বিষয় নিয়েই এক্সপার্টদের মতামত প্রকাশ করেছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

১. চুল পাতলা হবে ও উজ্জ্বলতা হারাবে
গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের ফলে আপনার চুলের অনেক ধরনের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায় চুলের পুরুত্বে। ধূমপানের প্রভাবে শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান জিংক, ভিটামিন বি, ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি কমে যাওয়ায় চুলে এর প্রভাব পড়ে।

২. রক্তচলাচলে বাধা
ধূমপানের ফলে আপনার পায়ে রক্তচলাচল কমে যাবে। অনেক ধূমপায়ীর এ কারণে মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়। অনেক ধূমপায়ী শারীরিক পরিশ্রম করার সময় শরীরের ব্যথায় আক্রান্ত হন।

৩. নাকের গন্ধ সংবেদনশীলতা কমে যায়
ধূমপানের অনেক ক্ষতিকর দিকের মধ্যে এটি অন্যতম। মানুষের নাকের গন্ধ সংবেদনশীল স্নায়ুগুলোর কার্যকারিতা কমে যায় ধূমপানের ফলে।
ধূমপান সম্বন্ধে জেনে নিন সাতটি অজানা তথ্য

৪. হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
ধূমপানের ফলে ‘অস্টিওব্ল্যাস্টস’ এর কাজের গতি কমে যায়। এ পদার্থটি দেহের হাড়ের কোষগুলো তৈরি করে। ফলে আপনার শরীরের হাড় দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণেই ধূমপায়ীদের আঘাতের ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে। 

৫. মজার খাবারের স্বাদ কম লাগবে
ধূমপানকারীরা কোনো মজার খাবারের যতোটা স্বাদ পাবেন, অন্যরা সেই খাবার খেয়েই তার চেয়ে বেশি স্বাদ পাবেন। কারণ নিকোটিন স্বাদের সেন্সরের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

৬. অকালেই বয়স্ক মনে হবে
ধূমপানের ফলে মানুষের ত্বকের নমনিয়তা কমে যায়। ফলে চামড়ায় ছোট-বড় ভাজ পড়ে এবং অকালেই বয়স্ক মনে হয়। এর ফলে ত্বকে দাগ পড়ে ও স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৭. ছোট লেখা পড়তে সমস্যা
ধূমপানে চোখের ক্ষতি হয় এবং এর ফলে আপনার দৃষ্টিশক্তি ক্রমেই কমতে থাকবে। এর প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে ছোট লেখা পড়তে সমস্যা। মূলত চোখের ‘ম্যাকুলার পিগমেন্ট’-এর ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলেই এ ঘটনা ঘটে। পরে ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে ‘ম্যাকুলার পিগমেন্ট’-এর ঘনত্ব কমে যাওয়া।

 

থানার ছাদ থেকে পড়ে সাংবাদিকের মৃত্যু নানা প্রশ্ন

 

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার ছাদ থেকে পড়ে শাহ আলম সাগর নামের এক সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলছে, থানার ছাদ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে সাগরের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ওই ছাদ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগই নেই। আর কেনই বা সাগর পালাতে যাচ্ছিল সে প্রশ্নেরও কোন উত্তর মিলছে না। সাগর যাকে সহযোগিতা করতে থানায় গিয়েছিলেন পুলিশ উল্টো সেই নজরুল ইসলাম মিস্ত্রিকেই মামলার প্রধান আসামি করেছেন। আসামি করা হয়েছে নজরুলের সঙ্গে বিরোধ হওয়া ট্রাস্ট কলেজের অধ্যক্ষ বশির আহমেদ ভূঁইয়াকে। যেখানে মামলার বাদী হওয়ার কথা নিহতের স্ত্রীর, সেখানে তড়িঘড়ি করে পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা করেছে। পুলিশের দাবি, সাগরের ছাদ থেকে পালানোর সময় বশির আহমেদ ভূঁইয়া থানায় অবস্থান করছিলেন। কিন্তু বশির আহমেদ জানিয়েছেন, প্রথমবার থানায় গিয়ে কলেজে ফিরে আসার পর পুলিশ তাকে রাতে আবার থানায় ডেকে নিয়ে যায়। দুই-তিন ঘণ্টা থানায় বসিয়ে রাখার পর তাকে রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। সকালে আবার থানার ওসি রফিকুল ইসলাম তাকে আশ্বাস দেন, আপনার কিছুই হবে না। আপনি সহজেই জামিন পেয়ে যাবেন। মামলা সেভাবেই সাজানো হয়েছে। অপরদিকে নিহত সাগরের স্ত্রী সোমা আক্তার অভিযোগ করে বলছেন, আমার স্বামী পাগল না যে ৭ তলার ছাদ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। তাকে থানায় পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। পরে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে নাটক সাজিয়েছে।
গত রোববার সন্ধ্যায় উত্তরা পশ্চিম থানার ছাদ থেকে পড়ে মারা যায় স্বল্প প্রচারিত দৈনিক অপরাধ দমন ও পথযাত্রা পত্রিকার সাংবদিক শাহ আলম মোল্লা ওরফে সাগর। গতকাল সরজমিন থানায় গিয়ে দেখা গেছে, উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ৪৮ নম্বর ৬ তলা কর্নার ভবনটি থানা ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৬ তলার ছাদে অর্ধেক পুলিশ ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ওই ভবনের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে রাস্তা এবং উত্তর ও পূর্ব কোণে ফাঁকা প্লট। ওই ভবনের ছাদ থেকে পালিয়ে নামার কোন সুযোগই নেই। স্থানীয় সূত্র জানায়, থানায় সাগরকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একই সঙ্গে আগামীতে আর কোন প্রতিবেদন প্রকাশ না করার জন্য বলা হয়। ওই সূত্র জানায়, থানা কমপেক্সের ছাদে ওঠার প্রবেশ পথ সবসময় তালাবদ্ধ থাকে। সেখানে পুলিশ ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এ কারণে সাগরের থানার ছাদে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাকে হয় নির্যাতন করে হত্যার পর ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে তা না হলে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়েছে।
পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, উত্তরার ট্রাস্ট কলেজের অধ্যক্ষ বশির আহমেদের বিরুদ্ধে নজরুল ইসলাম নামের এক কাঠমিস্ত্রির গচ্ছিত অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাৎ করার খবর প্রকাশ করেছিলেন সাগর। গত ২২শে ফেব্রুয়ারি এ খবরটি প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে বশির আহমেদের সঙ্গে নজরুল মিস্ত্রির বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলাম মিস্ত্রি উত্তরা পশ্চিম থানায় গিয়ে বশির আহমেদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ১৪৪৬) করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার জিডির তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই সোলেমান দু’পক্ষকেই থানায় ডাকেন। এ সময় থানার ওসি রফিকুল ইসলাম তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এর মধ্যে হাজির হয় নজরুল মিস্ত্রির প্রথম স্ত্রী মর্জিনা। তিনি দাবি করেন, গচ্ছিত ওই অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার তার। তার স্বামী বাসা থেকে এসব চুরি করে এনেছে। ওসি তাকে বিষয়টি তুরাগ থানায় গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন। ওসি রফিকুল ইসলাম তাদের সবাইকে বিদায় দেয়ার পর মর্জিনা তাদের নিয়ে টানাটানি করে। এ সময় সবার অগোচরে সাগর থানার ছাদে উঠলে বশির আহমেদ ডেকে আনতে পাঠায় নজরুল ইসলামকে। নজরুল ছাদে গিয়ে সাগরকে নিচে নামিয়ে আনতে চাইলে সে উত্তর-পূর্ব দিকের কর্ণারের সানশেড দিয়ে নামার চেষ্টা করলে নিচে পড়ে যায়। পরে নজরুল ইসলাম নিচে নেমে পালানোর চেষ্টা করলে কথিত আরও তিন সাংবাদিক সুজন, সুলতান ও রিয়াজ তাকে ধরে।
এদিকে বশির আহমেদের বরাত দিয়ে তার বড় ভাই সালেহ আহমেদ ভুঁইয়া দাবি করেন, কয়েক দিন আগে সাগরসহ কয়েক সাংবাদিককে নিয়ে নজরুল মিস্ত্রি তার অফিসে যায়। এ সময় তিনি গচ্ছিত অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার ফিরিয়ে দেন। তারপরও সাংবাদিকরা তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। রোববার জিডির তদন্ত কর্মকর্তা তাকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। বিকাল পাঁচটার দিকে তিনি থানায় যান। এক পর্যায়ে ওসি রফিকুলের পরামর্শে ওই সাংবাদিক সাগরের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন। জিডি করার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবার অফিসে ফিরে যান। সন্ধ্যা ৭টার পরে ওসি তাকে আবার থানায় ডেকে নিয়ে সাগর নিহত হওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। তিনি বলেন, গতকাল সকাল ১১টার দিকে কয়েকজন সঙ্গীসহ থানায় গিয়ে বশির আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে চান। এ সময় ওসি রফিকুল ইসলাম তাকে বলেন, ‘প্রিন্সিপাল কি চোর নাকি? তাকে হাজত খানায় দেখতে যাবেন?’ এ কথা বলে তিনি প্রিন্সিপাল বশিরকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে চেয়ারে বসান। এসময় ভাবলেশহীন প্রিন্সিপালকে ওসি বলেন, ‘আপনি এত উদ্বিগ্ন কেন? ঘটনা ঘটছে আমার থানায়। কিছু হলে আমার হবে। আমি এটা বুঝবো। আপনি আজকেই জামিন পেয়ে যাবেন।’
সালেহ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ওসির আশ্বাস পেয়ে তারা ফিরে আসেন। কিন্তু দুপুরে আদালতে গিয়ে দেখেন তাকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে ১০ দিনের। থানা থেকে মামলার কপি তাদের দেখতে দেয়া হয়নি। তারা আদালত থেকে মামলার নকল কপি তুলে দেখতে পান তার ভাইকে জড়িয়ে মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, বশিরের ভয়ে সাগর থানার ছাদ দিয়ে পালাচ্ছিল। তিনি প্রশ্ন করেন, থানায় ডাকা হয়েছিল ঘটনা সমাধানের জন্য। কিন্তু সেখানে ভয় পেয়ে কেউ ছাদে উঠে পালাবে এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা নয়। তিনি বলেন, ওসিসহ থানার সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেদের গা বাঁচাতে অন্যদের জড়িয়ে মামলা দিয়েছে।
উত্তরায় মহাসড়ক অবরোধ: এদিকে গতকাল উত্তরা এলাকার বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদকর্মীরা প্রায় ১ ঘণ্টা উত্তরার আজমপুর আমীর কমপ্লেক্সের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এর আগে সংবাদকর্মীরা একটি মানববন্ধনও করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।

 

 

bangladesh protidin